ইইউর জিএসপি সুবিধা পেল বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধিত রফতানিকারক বা রেজিস্টার্ড এক্সপোর্টার (রেক্স) হলো বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান। অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা পেতে এতদিন এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে হাতে হাতে জিএসপি সনদ নিতে হতো। রেক্সে নিবন্ধনের মাধ্যমে এখন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নিজেদের জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবে।
ইপিবি সম্মেলন কক্ষে গতকাল রেক্স ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সংযুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া ১০ প্রতিষ্ঠানকে রেক্স ব্যবস্থায় নিবন্ধন নম্বরও দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ও ইপিবির কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী।
রেক্স নম্বর পাওয়া ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লি., রিফাত গার্মেন্টস লি., স্কয়ার ফ্যাশনস্ লি., নোমান টেরিটাওয়েল মিলস লি., সি মার্ক (বিডি) লিমিটেড, আকিজ জুট মিলস্ লি., প্রাণ এগ্রো লি., কারূপণ্য রংপুর লি., মেসার্স ইউনিগ্লোরি সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ও ইউনিভার্সেল জিন্স লি.।
রেক্স ব্যবস্থা সম্পর্কে গতকাল অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০১০ সালে সংশোধিত ইইউ জিএসপি রেগুলেশনে কান্ট্রি অব অরিজিন সনদ জারীকরণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত পদ্ধতিতে সেলফ সার্টিফিকেশন ব্যবস্থায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজেই তার রফতানীকৃত পণ্যের জন্য কান্ট্রি অব অরিজিন সনদ জারি করতে সক্ষম হবে। এ সনদ স্টেটমেন্ট অব অরিজিন হিসেবে পরিচিত। তবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে তাদের রফতানীকৃত পণ্যের জন্য স্টেটমেন্ট অব অরিজিন জারির সক্ষমতা অর্জনের জন্য ইইউ সেন্ট্রাল ডাটাবেজের ইলেকট্রনিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হতে হবে। ইপিবি যোগ্য কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্রভাবে ইইউ সেন্ট্রাল ডাটাবেজে অর্থাৎ রেক্সে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পাদন করবে। বর্তমানে ইইউ জিএসপি স্কিমের মতো নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্কে রফতানির ক্ষেত্রেও সেলফ সার্টিফিকেশন পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রেক্স ব্যবস্থা প্রণয়নের ফলে ব্যবসার খরচ ও সময় কমবে। তবে ঝুঁকির বিষয়ও আছে, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে হবে এবং কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইপিবির নজরদারি জোরালো করতে হবে। আর রেক্স ব্যবস্থা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান বাতিল হলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে। ফলে ব্যবসায়ী ও সরকার দুই পক্ষকেই যে কোনো জালিয়াতি বা অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আপাতত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে রেক্স ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রায় ছয় হাজার রফতানিকারক রেক্স ব্যবস্থার আওতায় এসে বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে পারবেন।
সূচনা বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, আজ প্রতীকীস্বরূপ রফতানিতে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানকে রেক্স নিবন্ধন নম্বর দেয়া হলো। ডিসেম্বরের মধ্যে সব রফতানিকারককে এ ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আগামী তিন বছর পর্যন্ত রফতানিকারকদের তাদের রফতানিসংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। সেলফ ডিক্লারেশনে মূল্য সংযোজনের যথাযথ তথ্য নিশ্চিত করবে। ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করলে রেক্স নিবন্ধন বাতিল হবে।
বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, এ ব্যবস্থায় ঝুঁকির বিষয়গুলো এখনই শনাক্ত করে ইপিবির মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এ ব্যবস্থায় ব্যবসার খরচ কমে এলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে আমাদের অবস্থান আরো ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে মনিটরিংয়ে যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হয় আর ব্যবসায়ীদের তরফ থেকেও কোনো সীমাবদ্ধতা থাকলে সেগুলো দূর করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যবসাবান্ধব করার প্রক্রিয়ায় আমরা এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। প্রায় ছয় হাজার প্রতিষ্ঠানকে ডিসেম্বরের মধ্যে এ ব্যবস্থার আওতায় আসতে হবে। সেজন্য প্রতি সপ্তাহে ইপিবিকে ২৫০ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিতে হবে। এ বিষয়ে আমি কোনো আশা করার মধ্যে নেই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটা পারতেই হবে। আমাদের অতীতে কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে, তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি, এ সুযোগের সদ্ব্যবহার যেন নিশ্চিত করা হয়। সতর্ক থাকবেন, পথ যেন মসৃণ হয়।