ছোট্ট শিশুর বাঁচার লড়াই
সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপে মানবতার আর্তনাদ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ধুলো-ময়লা মাখা দুই সিরীয় কন্যা শিশু ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছে, তাদের একজন আরেক ছোট বোনের সবুজ জামা ধরে পড়ে যাওয়ার ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তাদের পেছনে এক ব্যক্তি নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন, চোখের সামনে ছোট্ট মেয়ে ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। গত বুধবার ছবিটি তুলেছেন বাশার আল-শেখ নামের এক আলোকচিত্রী। তিনি স্থানীয় নিউজ পোর্টাল এ কাজ করেন। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবের আরিহা শহরে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছবিটি ফ্রেমবন্দি করেন তিনি। ইদলিবের এই এলাকাটি জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এপ্রিলের শেষ দিক থেকে এলাকাটিতে সিরিয়ার সরকার ও তাদের মিত্র রাশিয়া নিয়মিত বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ছবিতে যে তিন মেয়ে শিশুকে দেখা যাচ্ছে তাদের একজন মারা গেছে এবং বাকি দুজন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। সরকারি বাহিনীর তাদের বাড়িতে বিমান হামলা চালালে তারা এই পরিণতিতে পড়ে। শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া কাছের হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইসমাইল এসব তথ্য জানিয়েছেন। যদিও ওই চিকিৎসক নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। ছবিতে বড় বোনের সবুজ জামা ধরে থাকা মেয়েটির নাম রিহাম আল-আব্দুল্লাহ। বয়স মাত্র ৫ বছর। বুধবার বোমা হামলার পরই তার মৃত্যু হয়েছে।
রিহামের সাত মাসের বড় বোন তৌকা, যাকে ছবিতে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে দেখা গেছে সে এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে। তার আঘাত লেগেছে মাথায়। ডা. ইসমাইল বলেন, তৌকাকে ২৪ ঘণ্টাই নিঃশ্বাস নিতে সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। তবে তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ছবিতে থাকা তৃতীয় মেয়েটির নাম ডালিয়া। বুকের অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থাও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আরেকজন চিকিৎসক। ছবির তিন বোনই আট সদস্যের এক পরিবারের। মা-বাবা ও ছয় বোন মিলেই তাদের এই পরিবার। ডা. ইসমাইল জানান, বুধবারের হামলায় ছবিতে না রিহামের আরেক বোন ও তার মা নিহত হয়েছে। আরেক বোন রোয়ানের মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার।
আরিহাতে কর্মরত এক উদ্ধারকর্মী তৌফিক কাট্টান ওই দিন হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধার করছিলেন। এক ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর তিনি ওই ভবনে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমি ফিরে আসি তখন মেয়েটি মারা গেছে আমি অবাক হয়েছিলাম। জিহাদি নিয়ন্ত্রিত ইদলিব এক মাসের আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় সুরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু এপ্রিল থেকেই সরকার ও তাদের মিত্ররা নিয়মিত বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো সিরিয়ার আট বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে শিশুদের নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গত চার সপ্তাহে যতো শিশু নিহত হয়েছে তা গত এক বছরের চেয়ে বেশি। ২০১১ সালে সরকারবিরোধী দমনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সিরীয় গৃহযুদ্ধে ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও কয়েক লাখ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন।