প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে নিউইয়র্কে বিশাল বিক্ষোভ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে নিউইয়র্কে অভিনব বিক্ষোভ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। স্থানীয় সময় গত শনিবার বিকালে কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী অ্যামেরিকান এসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা প্রদর্শন করা হয়। ম্যানহাটনের হোটেল হিল্টনের সামনে কয়েক হাজার মানুষের এ বিক্ষোভে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সঙ্গে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক শিশু। মুখে কালো কাপড় বেঁধে ছেলেরা এবং মাথায় হিজাব পরা মেয়ে শিশুদের উচ্চকিত আওয়াজ আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে। ঐ সময়ে এই হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়। একই দাবিতে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ করে হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ।
রাত সাড়ে ৭টায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হলেও হোটেলের সামনে প্রতিবাদী বিক্ষোভ শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ হচ্ছে অভিযোগ এনে সমাবেশ থেকে বক্তারা দেশ-বিদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
কমপক্ষে ২ ডজন ব্যানার আর অগণিত প্লাকার্ডে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা-গুম এবং সরকারি বাহিনীর হাতে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ দেশের ইসলামী চিন্তাবিদদের ছবি সংবলিত প্লাকার্ডের সঙ্গে ছিল ৮/১০ বছরের শিশুদের মুখে মুক্তির আকাক্সক্ষা মিশ্রিত স্লোগানের আওয়াজ। ডাউন ডাউন হাসিনা, ফ্রি ফ্রি সাঈদী, ফ্রি ফ্রি নিজামী, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করো, জুডিশিয়াল কিলিং বন্ধ করো- করতে হবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক দিতে হবেÑ দিয়ে দাও, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই আমার দেশ পড়তে চাই, স্টপ এ্যাটাকিং জার্নালিস্ট ইন বাংলাদেশ, ডেমোক্রেসি আনডার ফায়ার ইন বাংলাদেশ, খুনি হাসিনা বিদায় হোন বিদায় হোন, গো হাসিনা সেভ বাংলাদেশ, ফ্যাসিস্ট হাসিনা গো অ্যাওয়েসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কাজী মোঃ ইসমাইলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, রাইটার্স ফোরাম অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি আবদুল্লাহ আল আরিফ, বিল্ডার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রশীদ জামসেদ, ব্যবসায়ী আবু উবাইদা, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, ডাঃ আতাউল গণি, শাহানা মাসুম, মাহবুবুর রহমান, বিএনপি নেতা সোলায়মান ভূঁইয়া প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম। আরও সংহতি জানান বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ, শরাফত হোসেন বাবু, সোলায়মান ভূঁইয়া, হযরত আলী, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, বেলাল মাহমুদ, সোলায়মান সেরনিয়াবাত, সৈয়দা মাহমুদা শিরিনসহ আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ, আমেরিকান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ, গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষা কমিটি-যুক্তরাষ্ট্র, রাইটার্স ফোরাম, মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক কাজী মোঃ ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশে বিচারের নামে জুডিশিয়াল কিলিং-এর প্রক্রিয়া চলছে। দেশে এক ব্যক্তির শাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড গড়েছে। আদালতে দলীয় ক্যাডারদের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী মত দলন করে চলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ডাঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, মুক্তিকামী বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিয়ে তাকে অবিলম্বে সরে যেতে হবে, অন্যথায় দেশ-বিদেশে জনধাওয়ার মুখে তাকে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াতে হবে।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, দেশকে একটি ভয়াবহ সংকটে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। সংবিধান, শাসন ব্যবস্থা সবকিছু এখন তার একচ্ছত্র সম্পত্তি। এটা কোনো স্বৈরাচারী একনায়কের ক্ষেত্রেও কখনো ছিল না।
আবদুল্লাহ আল আরিফ বলেন, আধিপত্যবাদের দালাল শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিরোধী মত দমন করে চলছেন। কেউ এ স্বৈরাচারিণীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বিনা বিচারে কারাবন্দী রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা সাঈদীকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। আলেম সমাজকে মৃত্যুদ- দেয়ার বিরুদ্ধে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী জাগ্রত জনতার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্রের জন্য একাত্তরে রক্ত দিয়েছি। কিন্তু সেই গণতন্ত্র আজও মুক্তি পায়নি। ‘এক নেতার এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশ’ সেই বাকশালী স্লোগান বাস্তবায়নে আজ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা পুরো বাংলাদেশকে একটি নির্যাতনের কারাগারে পরিণত করেছেন। গুলী করে হত্যা, গুপ্ত হত্যা, কারাগারে হত্যা, সীমান্ত হত্যা এবং বিচারবিভাগের হত্যার মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। এখনই সময় তার লাগাম টেনে ধরার।
শাহানা মাসুম বলেন, শেখ হাসিনা চলনে-বলনে কথায়-কাজে একজন ফ্যাসিস্ট। তিনি নারী সমাজের কলঙ্ক, বাংলাদেশীদের জন্য কলঙ্ক। মুখে আইনের শাসনের কথা বললেও আইন-আদালতকে ব্যবহার করছেন বিরোধী দল দমনে। অবিলম্বে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামী, গোলাম আযম, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে, হোটেল হিল্টনের সামনে সন্ধ্যা ৭টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি পৃথক একটি সমাবেশ করে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু, ডাঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার, সোলায়মান ভূঁইয়া, বাবর উদ্দিন, হযরত আলী, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, শরাফত হোসেন বাবু, বেলাল মাহমুদ, তোফায়েল লিটন চৌধুরী, ইলিয়াস খান, আজাদ বাকির, আবুল হাশেম শাহাদাত, এম বাসেদ রহমান, আবু সাঈদ আহমেদ, এবাদ চৌধুরী, মোঃ শাহ আলম, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, সোলায়মান সেরনিয়াবাত, আবদুল বাতেন, আতাউর রহমান আতা, মাইনুল ইসলাম মহিদ, ফারুক চৌধুরী, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, মোঃ সোহরাব হোসেন, সাদি মিন্টু প্রমুখ।
হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেবলেপমেন্ট ফর বাংলাদেশ (এইচআরডিবি) : জুড়িশিয়াল কিলিংয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভলেপমেন্ট ফর বাংলাদেশ (এইচআরডিবি)। এরআগে দূতাবাসের সামনে সংগঠনটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বক্তব্য দেন মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, আলিমুজ্জামান মিয়া, কাজী মুহাম্মদ ইয়িলয়াস, সাইখ মোহাম্মদ খোরসান, মাহমুদুল কাদের, ব্যরিস্টার নকিবুর রহমান, মোঃ জিয়াউল ইসলাম ও ডাঃ শাহিদা চৌধুরী প্রমুখ।
অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জুড়িশিয়াল কিলিং বন্ধের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, স্কাইপি কেলেঙ্কারির পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের গঠিত ট্রাইবুনাল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বিশ্ববাসীর নিকট দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে পড়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসনের মঞ্চস্থ তৈরি করেছে সরকার। এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানান বক্তারা।