লোভের আগুনে জ্বলছে আমাজন
জসিম উদ্দিন: দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বনভূমি আমাজন। এ বনভূমি প্রায় ২৬ লাখ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে। পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ৪০ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে এ মহারণ্য। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জীববৈচিত্র্যের সম্ভার এটি। উদ্ভিদ ও প্রাণের এক মহাসমারোহ ভূপৃষ্ঠে। ৩০ লাখ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস এখানে। বিশ্বের নিঃসরিত কার্বনের এক-চতুর্থাংশ একাই আমাজন অরণ্য শুষে নেয়। সব মিলিয়ে ভূপৃষ্ঠে বছরে ২৪০ কোটি টন কার্বন এ বনভূমি শুষে নিচ্ছে। একই সময় আমাজন ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রাণী জগতের অসংখ্য প্রজাতির জন্য। এ বনভূমিতে মওসুমি আগুন লাগার ঘটনা স্বাভাবিক ব্যাপার। এবার পরিকল্পনা করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক সুনিবিড় এ রেইনফরেস্টে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি বিশেষ দিনে অনেকটা উৎসবের আয়োজন করে আমাজনে আগুন লাগানো হয়। এ দিকে, বিশ্বব্যাপী এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আমাজনের ৬০ শতাংশ পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলে। জানুয়ারি মাসে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী জাইর বলসোনারো। অভিযোগ, তার উৎসাহে সম্পদলোভীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে আমাজনে। বলসোনারোর উদ্দেশ্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সর্ববৃহৎ আধার আমাজনকে ব্রাজিলের মানুষের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে’। তবে বিশ্ববাসী মনে করে, এ বন এই গ্রহের সবার সম্পদ। এ ব্যাপারে প্রথমে আমাজনে থাকা ১০ লাখ আদিবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এরপর সেটা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত শুক্রবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো ও সাও পাওলো শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে এ ইস্যুতে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার বেলজিয়ামে দেখা গেল অভিনব প্রতিবাদ। সেখানে ব্রাজিল দূতাবাসের সামনে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী, বর্ণিল সাম্বা পোশাক পরে পরিবেশ কর্মীরা আমাজন ধ্বংসের প্রতিবাদ জানায়। এ ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃত্বের মধ্যে প্রথম মন্তব্য করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি আমাজনকে ‘বিশ্বের ফুসফুস’ বলে উল্লেখ করেছেন। আগুন লাগিয়ে দেয়ার প্রতিবাদ করায় ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে চটেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। বলসোনারো ম্যাক্রোঁর আচরণকে ‘ঔপনিবেশিক’ বলে উল্লেখ করে এর কড়া সমালোচনা করেন। এ দিকে ম্যাক্রোঁর প্রচেষ্টায় জি৭ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো আমাজনের দাবানল নেভাতে দুই কোটি ডলার দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই টাকা ইউরোপের বন রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন। এ টাকা যেন তারা সেখানেই খরচ করেন।
প্রতি বছর একটি নির্ধারিত সময়ে আমাজনে দাবানলের ঘটনা ঘটে থাকে। সেটা প্রাকৃতিক নিয়মে হয়ে যায়। কিন্তু এবারকার আগুনের সূত্রপাত করে মানুষের একটি দল। ‘আগুনের দিনটি’ ছিল গত ১০ আগস্ট। এ দিন ব্রাজিলের কৃষকদের একটি অংশ একযোগে আমাজন অরণ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের সাথে ছিল একদল ভূমিদস্যু ও লোভী ব্যবসায়ী। এ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে প্রায় ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ছাই হয়ে গেছে। শুকনো মওসুমে প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরে আমাজনে দাবানলের ঘটনা ঘটে। বিগত তিন বছরে গড়ে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার বনভূমি ভস্মীভূত হয়েছে। বর্তমান দাবানলে এ পর্যন্ত আগের বছরের চেয়ে তিনগুণ এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে। আগুন থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে। প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাওপাওলো নগরীর জীবনযাত্রা ও ব্যাহত হয়েছে। অন্য একটি শহর পোর্তো ভেলহো আমাজন বন পোড়ার আগুনে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। একপর্যায়ে স্থানীয় বিমানবন্দরটির কার্যক্রম দুই ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখতে হয়। শহরটির একটি শিশু হাসপাতালের প্রধান সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা সবাই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। সেখানে শাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে বেশি আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা।
অন্যান্য শহর এবং জনবসতিও দাবানলের ধোঁয়া ও ছাইয়ের দ্বারা আক্রান্ত। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সদস্যরা জানাচ্ছেন, সৃষ্ট আগুনের ধোঁয়া মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে। এ মন্তব্য করায় ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর চটেছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো।
এগুলো আমাজন আগুনের ফলে সৃষ্ট তাৎক্ষণিক ক্ষতিকর দিক। এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি নিশ্চয়ই ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবী নামের পুরো গ্রহের ওপর। আগুন দেয়ার উসকানি ব্রাজিল সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে। এখন তারাই প্রতিবাদের মুখে দাবানল নেভাতে সেনাবাহিনী ও দমকল বাহিনীকে নামিয়েছে। দু’টি সি-১৩০ হারকিউলিস যুদ্ধবিমান আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতোমধ্যে দাবি করেছেন, আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণে। দেশটি প্রথমে জি৭ সদস্য দেশগুলোর সাহায্যের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। বাস্তবতা হচ্ছে, এ পর্যন্ত আমাজনে ৭৩ হাজারটি আগুন লাগার ঘটনা আরো আগে রেকর্ড করা হয়েছে। আর যুদ্ধবিমান থেকে পানি ছিটানোর মধ্যেই বনের নতুন নতুন জায়গায় আগুন লাগছে। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো, মানুষের লাগামহীন ভোগবিলাস। নিজেদের আরাম-আয়েশ বাড়াতে গিয়ে এ ভয়াবহ ক্ষতি মানুষ নিজেই করছে। দেশে দেশে বিভিন্ন সরকারের একটাই প্রবণতা, ‘জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে।’ সবার সর্বনাশ করে হলেও নাকি এ কাজ করতে হবে। ফলে বিশাল বিশাল প্রকল্প তারা নিচ্ছেন। এ জন্য বনজঙ্গল সব উজাড় তারা করছেন। ব্রাজিলের নতুন সরকারও একই পথে হাঁটছে। ব্রাজিলে মার্কিনপন্থী বলসোনারোর সরকার ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’কে গুরুত্ব দিয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বন উজাড়ের ব্যাপারে দায়মুক্তি পর্যন্ত দিয়েছেন। আমাজন ও এর আশপাশে কৃষি ও খনিজসম্পদ উত্তোলনের প্রকল্প নিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কয়েকটি আইনের পরিবর্তন কার্যকর করেন তিনি। এগুলো ব্রাজিলের প্রত্যন্ত অঞ্চলকেন্দ্রিক ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ ত্বরান্বিত করতে কাজে লাগবে। তবে বনভূমি ধ্বংস করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে মানবজাতির ক্ষতি করা হয়। এর মাধ্যমে জাতির কোনো উন্নয়ন নয়, বরং পশ্চাৎগমন হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটি এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী সরকারকে কারা বোঝাবেন?
ব্রাজিলের নতুন সরকার স্বল্পসময়ের মধ্যেই পরিবেশবিষয়ক সংস্থাগুলো দুর্বল করে দিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এমন প্রবণতা ব্যাপকহারে দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ-সংক্রান্ত আইন অমান্য করার হার গেছে বেড়ে। অথচ, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হার গেছে কমে।
ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থার মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ব্রাজিলে পরিবেশ লঙ্ঘন-সংক্রান্ত অপরাধে জরিমানা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ সময় আমাজন অরণ্যে আগুনের ঘটনা বেড়েছে ৮৫ শতাংশ।
আমাজনের আগুন ভয়াবহতা পাওয়ার কারণে ব্যাপারটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মন্তব্য করেন, ‘আমাদের বসতবাড়ি পুড়ছে; আক্ষরিকভাবেই। আমাজন রেইনফরেস্ট আমাদের ফুসফুস, যা এ গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে- এখন আগুনে জ্বলছে।’ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনেকে আমাজন পুড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সরব হয়েছে। এদের মধ্যে হলিউডের নায়ক ডি ক্যাপ্রিও, পর্তুগিজ ফুটবল তারকা রোনালদো, গায়িকা ম্যাডোনা প্রমুখ রয়েছেন।
অনেকেই আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস ও ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করছে- ম্যাক্রোঁর এমন মন্তব্যটি পুনরাবৃত্তি করছেন। তবে সিএনএন এবং নিউইয়র্ক টাইমস এ ব্যাপারটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে। সেলিব্রেটিদের এ ধরনের প্রচারণা চালানো একটি ‘বিভ্রান্তিকর’ ব্যাপার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে আমাজন রক্ষায় অনেকে সক্রিয় হয়েছেন। অবশ্য বিভ্রান্তিকর তথ্যকে সমর্থন করা যায় না। ওইসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সামাজিক মাধ্যমে সেলিব্রেটিরা যেসব ছবি আমাজনে সাম্প্রতিক আগুনের ছবি বলে পোস্ট করেছেন, সেটা সঠিক নয়। বহু পুরনো ছবিও তারা আমাজনের ‘সদ্য আগুন জ্বলার ছবি’ বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তারকারা এই ভুল করার সম্ভাবনা থাকলেও আমাজন রক্ষার দাবিটি সম্পূর্ণ বৈধ। পুরো বিশ্ববাসী নিজেদের স্বার্থেই এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া দরকার। বিশেষ করে মনুষ্য সৃষ্ট দাবানলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের প্রয়োজন।
‘টেকসই উন্নয়ন’ প্রসঙ্গটি বিশ্বব্যাপী জোরালো হয়েছে। এ উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য পরিবেশ। বাতাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকলে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। আশঙ্কা জাগে, প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে পারে। বিশ্ব সংস্থা জাতিসঙ্ঘ টেকসই উন্নয়নের এ ধারণাকে উপস্থাপন করছে। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদীদের আর তর সইছে না। তারা এখনই জাতির জন্য ‘কিছু একটা’ করে দেখাতে অস্থির। পুরো বিশ্বে এমন নেতার রাজনীতির ব্যবসা রমরমা এখন। ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্টের কথিত উন্নয়নের উগ্র ইচ্ছা আমাজনে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। সে জন্য বলসোনারো ‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’রূপে খ্যাতি পেয়েছেন। অর্থাৎ তাকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ট্রাম্প নামে ডাকা হচ্ছে। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাজনের আগুন নেভাতে ফান্ড দিতে রাজি হয়ে পরিবেশ রক্ষায় প্রথমবারের মতো একটি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের সময় বলসোনারো আমাজনকে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যউন্নয়নে খুলে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। আগে থেকেই একটি গ্রুপ এ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
রেইনফরেস্ট আমাজন
আমাজন পৃথিবী নামক গ্রহের সর্ববৃহৎ রেইনফরেস্ট। বিশাল এ বনভূমির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরে গড় বৃষ্টিপাত আড়াই শ’ থেকে সাড়ে চার শ’ সেন্টিমিটার। বাতাস থাকে সব সময় আর্দ্র। সেখানে উদ্ভিদ ও পোকামাকড়ের লাখ লাখ প্রজাতির বাস। প্রাণের এ বিপুল সম্ভারের ব্যাপারে মানুষের খুব কমই জানা আছে। উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির নিজস্বতা এই রেইনফরেস্টকে দিয়েছে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রাকৃতিক ওষুধের এক বিশাল আধার এ বনাঞ্চলকে ‘বিশ্বের বৃহৎ ফার্মেসি’ও বলা হয়। ঘন গাছগাছালির কারণে একে আবার বলা হয় ‘জঙ্গল’।
মানুষ রেইনফরেস্ট ধ্বংস করছে। কাঠ ও জ্বালানি উভয় কাজে বিপুল পরিমাণ বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষিজীবীরা নিজেদের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে নেয়ার জন্য যেমন উজাড় করছেন, বড় ফার্মগুলোও একই কাজে নেমেছে। আর বাস্তুচ্যুত মানুষÑ যাদের বসবাস ও কৃষি কাজের কোনো উপায় নেই, তারাও জঙ্গল উজাড় করে নিজেদের বসতির জায়গা করে নিচ্ছেন। পশু উৎপাদন বৃদ্ধির কারণেও এটা ঘটছে। বিপুল পরিমাণ ঘাসের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। কাগজ তৈরির মণ্ড উৎপাদন করতে গিয়েও বন উজাড় করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণ এবং খনিজ পদার্থ আহরণের জন্য বনভূমি নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রেইনফরেস্ট। এবারের লাগাতার আগুনের আগে আমাজনে এই শতাব্দীর শুরুতে একটানা বেশ কয়েক বছর খরায় ভুগেছে। এর কারণে বিপুলসংখ্যক গাছ মারা যায়। ফলে পাতা শুকিয়ে আগুন লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়।
বিশাল আমাজনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হাজার হাজার নদী। এ নদীও বনভূমি এলাকাকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে খরায় আমাজনের অসংখ্য নদী শুকিয়ে যায়। তখন লাখ লাখ একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। বড় আকারে অগ্নিকাণ্ড আরো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ কারণে আকাশে মেঘ জমতে পারে না। বনভূমি অক্সিজেন সরবরাহের বদলে আকাশে ছেড়ে দেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। জলবায়ুর উষ্ণতাকে তা আরো বাড়িয়ে দেয়।