ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শামসুল আলম চৌধুরীর ইন্তেকাল
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদ শামসুল আলম চৌধুরী শনিবার দিবাগত রাত ২টায় লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন।
শামসুল আলম চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মরহুমের নামাজে জানাজার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর জানাজা ও দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানানো হবে। মরহুম শামসুল আলম চৌধুরীর স্ত্রী তাঁর স্বামীর রুহের মাগফেরাতের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সন্তান শামসুল আলম চৌধুরী ১৯৭১ সালে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় তিনি ব্রিটেনের কভেন্ট্রিতে গঠিত ঐ কমিটির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়াও স্টুডেন্ট একশন কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে অসামান্য অবদানের জন্য গত বছর লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা জানানো হয়।
ব্রিটেনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ শামসুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী ও মানবদরদী মানুষ। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সততা এবং জাতিগঠনের কর্মসুচীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়েই তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রিয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন।
প্রবাসে প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মানবাধিকার ও নাগরিক সংগঠন ‘কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রাসি ইন ইউকে’ এবং ভয়েস ফর জাস্টিসের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। জীবনের শেষদিকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার লক্ষ্যে ‘পেট্রিয়ট অফ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি ব্রিটেন এবং বাংলাদেশে এই সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেন এবং ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সুশীল ও দেশ প্রেমিকদের নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করেন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ফেলানীসহ বাংলাদেশীদের হত্যা ইস্যুতে প্রতিবাদ ও জনমত গঠনে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেমিনারের আয়োজন করেন। ফেলানীর গ্রামের বাড়ি পরিদর্শন ও তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেন। ব্রিটেনে টিপাইমুখ বাঁধ আন্দোলনে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ‘এক উম্মাহ এক জাতি’ গঠনের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সরকার প্রধানদের কাছে প্রস্তাবনাসহ চিঠি লিখেন। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর হৃত ঐশ্বর্য পুনরুদ্ধারে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের ঐক্যের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নেন। তার কিছুটা বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ স্বপ্নই রয়ে যায়। শামসুল আলম চৌধুরীর মতো একজন নিষ্ঠাবান, ধর্মপরায়ণ, ইতিহাস সচেতন, অমায়িক, বিনয়ী ও প্রিয়ভাষী মানুষের মৃত্যুতে ব্রিটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।