বিক্রি হচ্ছে ৪৯৭ বছরের পুরনো রয়্যাল মেইল
৪৯৭ বছরের পুরনো ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ডাকব্যবস্থা পরিচালক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল মেইল বেসরকারী খাতে বিক্রি করে দেয়ার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেলো। সম্ভাব্য ২.৬ থেকে ৩.৩ বিলিয়ন পাউণ্ড বিক্রয়মুল্যকে সংস্থাটির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম বলে মনে করা হচ্ছে। বেসরকারীকরণের প্রতিবাদে ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি এখনও।
দাম কম পাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবিসির বিজনেস এডিটর রবার্ট পেস্টন লিখেছেন, বেসরকারী কোম্পানীতে রূপান্তরিত হয়ে গেলে তাতে ‘নতুন করে বিনিয়োগ প্রয়োজন’-এর ঝুঁকি রয়েছে। এর সাথে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগের অকষ্মাৎ প্রসারের ফলে কাগুজে চিঠির আদান-প্রদান ব্যাপক হারে হ্রাসের ঝুঁকি। উল্লেখ্য, রয়্যাল মেইল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং এর বার্ষিক উপার্জন ৯ বিলিয়ন পাউণ্ডেরও বেশি।
সপ্তা-দুয়েক আগে বেসরকারীকরণের সরকারী ঘোষণা আসার পর কমিউনিকেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (সিডব্লিউইউ) লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দেয়। সিডব্লিউইউ’র ডেপুটি জেনারেল সেক্রেট্যারি বিলি হায়েস একে ‘কিছু মন্ত্রীর ধনী বন্ধুর অর্থলাভের উদ্দেশ্যে’ পরিকল্পিত বর্ণনা করে বলেন, “রয়্যাল মেইলের দেড়লাখ কর্মী দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখবে না”।
তবে বেসরকারীকরণের প্রতিবাদে ইউনিয়ন ধর্মঘটের হুমকি দিলেও নিয়ম অনুযায়ী সে-জন্য সদস্যদের ভৌটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, যা ১৬ অক্টোবরের আগে সমাপ্ত হবে না। ধর্মঘটের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো ফয়সালা না হওয়ায় বেসরকারীকরণ ঠেকাতে তার কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখার তেমন আর সুযোগ নেই। সরকার আশা করছে ধর্মঘট যখন হবে, ততক্ষণে রয়্যাল মেইল বেসরকারী খাতে চলে যাবে।
কনসার্ভেটিভ-লিবারেল ডেমৌক্র্যাট জোট সরকার দ্রুত এ-বিক্রয়-প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে দৃশ্যত: নমনীয় হলেও লেবার এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। খোদ পার্টির অভ্যন্তরে নেতৃবৃন্দের প্রতি চাপ রয়েছে, ক্ষমতায় গেলে রয়্যাল মেইল পুঃসরবকারীকরণ করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করার। তবে লেবারের নেতৃত্ব স্পষ্টত: এতে বিশেষ আগ্রহী নয়। তাঁদের মতে, ‘সে-জন্য কতো খরচ হবে তা না জেনে প্রতিশ্রুতি দেয়া দায়িত্বহীনের কাজ হবে’।
১৯৯০ সালের পর ব্রিটেইনে এটিই প্রথম বড়ো ধরণের রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণ। গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে কনসার্ভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে মার্গারেইট থ্যাচার ব্রিটিশ টেলিকম, ব্রিটিশ গ্যাস, ব্রিটিস এয়ারওয়েজ ইত্যাদি বেসরকারীকরণ করেন। তবে সে-সময় তিনি রয়্যাল মেইল বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, “রানির মাথা বেসরকারীকরণ করতে আমি প্রস্তুত নই”।
বর্তমান কনসার্ভেটিভ-নেতৃত্বের জোট সরকার ২০১১ সালে নতুন করে উদ্যোগ নেয় রয়্যাল মেইল বিক্রির। সে-বছরই পৌস্টাল সার্ভিসেস এ্যাক্ট পাস করা হয় পার্লামেণ্ট, যাতে এ-প্রক্রিয়ার আইনী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গৌল্ডম্যান স্যাক্স ও সুইৎসারল্যাণ্ডের ইউবিএস ইনভেষ্টমেণ্ট ব্যাঙ্ক যৌথভাবে ব্রিটেইনের প্রাচীন এ-প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়-প্রক্রিয়ার দেখভাল করছে।
ব্রিটেনের রাজা অষ্টম হেনরি ১৫১৬ সালে রয়্যাল মেইলের আদি ডাক প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন। সে-সময় এর কার্যক্রম রাজকীয় সংবাদ আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ১৬৩৫ সালে এর সেবা সাধারণ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, তবে তখন ডাকমাশুল গুণতে হতো প্রাপককে।