দফায় দফায় পরাজয় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর
ব্রিটেনে রাজনৈতিক সঙ্কট নজিরবিহীন
বৃটিশ পার্লামেন্টে দফায় দফায় পরাজিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ফলে ব্রেক্সিট নিয়ে বৃটেনের রাজনৈতিক সঙ্কট চরম এক অবস্থায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন। বুধবার রাতে দু’দফা তিনি হাউজ অব কমন্সে পরাজিত হয়েছেন। তার আনা আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কমন্স। অন্যদিকে বিরোধীদের আনা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বন্ধের প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ পেয়েছে বরিস জনসনের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, সরকারের আনা একর পর এক প্রস্তাব যদি পার্লামেন্ট পাস না করে তাহলে সরকার পরিচালনা করা পুরোপুরি অসম্ভব।
বুধবার রাতে বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের বিদ্রোহী এমপিরা ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বন্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করেন পার্লামেন্টে। এ বিল পাস করেছে পার্লামেন্ট। ব্রেক্সিট প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা কি হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই বিলে। এই বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে পার্লামেন্টে ফল নিয়ে আসতে না পারেন, তাহলে তাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাদেরকে অনুরোধ জানাতে হবে, ব্রেক্সিটের সময়সীমা ২০১৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই অনুরোধ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যে চিঠি পাঠাবেন তার ভাষা কি হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই বিলে।
এর মধ্য দিয়ে বুধবার রাতে প্রথম দফা পরাজয় বরণ করেন জনসন। বিলটি পাস হওয়ার পর বরিস জনসন আগাম নির্বাচনে অনুষ্ঠানের জন্য পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব আনেন। এই প্রস্তাবটি পাস হতে প্রয়োজন হয় দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন। কিন্তু তার প্রস্তাব এই পরিমাণ সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তার ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। এ অবস্থায় পাস হওয়া ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট আটকে দিয়ে পার্লামেন্ট যে বিল পাস করেছে তাকে এক অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ বলে বর্ণনা করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ওই বিল পাসের পর তিনি আগামী ১৫ই অক্টোবর নির্বাচনের প্রস্তাব আনেন। কিন্তু বৃটেনে এখন যে ‘ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট’ রয়েছে তাতে বলা আছে যে, একটি পার্লামেন্ট যে মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবে সেই মেয়াদ পর্যন্ত থাকবে। যদি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয় তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সমর্থন লাগবে। কিন্তু আগাম নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বুধবার রাতে তিনি দ্বিতীয় দফায় পরাজিত হলেন বুধবার রাতে।
বিবিসি লিখেছে, আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব রেখে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা নজিরবিহীন যে, সরকার নির্বাচন দিতে চাইছে আর বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করছে। তবে বিরোধী দল লেবার পার্টি বলছে, তারা আগাম নির্বাচনের বিরোধী নয়। গত দুই বছর যাবত লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে লেবার পার্টির অগ্রাধিকার হচ্ছে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ বন্ধ করা।
‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ আটকে দিয়ে হাউস অব কমন্সে যে বিল পাস হয়েছে সেটি এখন হাউজ অব লর্ডসে যাবে। এরপর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্মতির জন্য তা পাঠানো হবে। এই সবগুলো ধাপ পার হবার যখন পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ আর হচ্ছে না, তখন নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দল লেবার পার্টির কোন আপত্তি নেই।