মহররমে যেসব আমল করবেন, যেসব কাজ করবেন না
জাব্বার করিম: মহররম মাসের আমলের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসূল সা: মদিনায় এসে দেখেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করে। তিনি তাদের বলেন, ‘এ দিনটির বিষয়ে কী যে তোমরা এ দিনে রোজা পালন করো?’ তারা বলল, এটি একটি মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা মূসা আ: ও তার জাতিকে পরিত্রাণ দান করেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এ জন্য হজরত মূসা আ: কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ দিন রোজা পালন করেন। তাই আমরা এ দিন রোজা পালন করি।
তখন হজরত রাসূল সা: বলেন, ‘হজরত মূসা আ:-এর বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি। এরপর তিনি এ দিন রোজা পালন করেন এবং রোজা পালন করতে নির্দেশ দেন’ (মুসলিম-২৭১৪)।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা মুস্তাহাব আমলের পর্যায়ে গণ্য করা হয়। আশুরার রোজা পালন করলে অফুরন্ত সওয়াব পাওয়া যাবে। তা পালন না করলে গোনাহ হবে না। হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমি আশা করি, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ পূর্ববর্তী বছরের কাফফারা করবেন’ (মুসলিম-৮১৮)।
এ মাসে মহানবী সা:-এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন রা: ও তার সঙ্গী-সাথীদের বর্বরোচিতভাবে শহীদ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহররম তথা কারবালা বা আশুরার ইতিহাস নতুনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ মাসে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। মহররম মাসে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মহররম মাসেই হজরত আদম আ: ও হজরত হাওয়া আ: নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে হজরত আদম আ: ও হজরত হাওয়া আ:-এর তওবা কবুল করেছিলেন। হজরত ইউনুছ আ: চল্লিশ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তি পেয়েছিলেন। হজরত ইয়াকুব আ: তার প্রিয় পুত্র হজরত ইউসুফ আ:-এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।
হজরত সোলায়মান আ: হারানো রাজত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। হজরত নূহ আ: মহাপ্লাবন থেকে বাঁচতে বিশাল আকারের কিস্তি তৈরি করেছিলেন। হজরত ইবরাহিম আ:কে নমরুদের আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন। হজরত আইয়ুব আ: কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। ফেরাউন দলবলসহ নীল নদে ডুবে নিহত হয়েছিল।
কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, মুসলমানদের সব ধরনের বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা ভিন্ন ভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে; এরাই হচ্ছে সেসব মানুষ, যাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে’ (সূরা আল ইমরান-১০৫ )। ‘তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরস্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পর সহযোগী হয়ো না’ ( সূরা মায়েদা-২)।
মহররম মাসের গুরুত্ব অনুধাবন করে, দৃঢ়তার সাথে আমল করলে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের আগের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। তাই আমাদের বেশি বেশি নফল রোজা, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করতে হবে। মহররম উপলক্ষে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, ব্লেড বা ছুরি দিয়ে আঘাত করা, নিজের শরীর থেকে চাবুক মেরে রক্ত বের করা, খালি পায়ে হাঁটা ইত্যাদি মনগড়া কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখক: প্রবন্ধকার