চাঁদে নামতে পারেনি ‘বিক্রম’
ভারতের স্বপ্নভঙ্গ
একেবারে শেষ মুহূর্তে থমকে গেল ভারতের স্বপ্ন, পৃথিবী থেকে দীর্ঘ ৪৭ দিনের যাত্রা শেষে চাঁদের মাটি থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকতেই চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল যোগাযোগ। আর এর মধ্যে দিয়ে প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের রোভার নামানোরর চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেল। তবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীদের নতুন অভিযানের উৎসাহ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “আমরা পিছিয়ে পড়িনি…চাঁদে পৌঁছনোর জন্য আমাদের ইচ্ছাশক্তি আরও প্রবল হল, সংকল্প আরও দৃঢ় হল।”
চাঁদের ওই অংশটি এখনও মানুষের কাছে অজানা। সেখানে জমাট বরফ আকারে পানি থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছিলেন ভারতের চন্দ্রযান-১ অভিযান থেকে। কথা ছিল, ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারলে চন্দ্রযান-২ এর রোভার প্রজ্ঞান নতুন তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সেখান থেকে হয়ত জানা যাবে, চাঁদের বুকে কতটা পানি কী অবস্থায় আছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২২ জুলাই মিশন শুরুর পর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল গত ২০ অগাস্ট।
কক্ষপথে ঘুরতে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে শনিবার প্রথম প্রহরে চাঁদের ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে নিয়ন্ত্রিত অবতরণের কথা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। তারপর উপযোগী পরিবেশে ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে আসত রোবটযান প্রজ্ঞান। চাঁদে নিয়ন্ত্রিত অবতরণের মিশন সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে নাম লেখাতে পারত ভারত। প্রজ্ঞান ঠিকমত কাজ করলে ভারত হত চন্দ্রপৃষ্ঠে রোভার চালাতে সফল হওয়া তৃতীয় দেশ। আর ভারত হত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে নিয়ন্ত্রিত অবতরণে সক্ষম হওয়া প্রথম দেশ। সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে পুরো ভারতবাসীর নজর ছিল টেলিভিশনে অথবা ইসরোর লাইভকাস্টে। আর চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারের চাঁদে নামার দৃশ্য দেখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গালুরুর শ্রীহরিকোটায় ইসরোর সদরদপ্তরে।
অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ শুরু করলে করতালিতে ফেটে পড়েছিল ইসরোর কন্ট্রোল রুম। কাচের দেয়ালের বাইরে দর্শক সারিতে বসে সেই দৃশ্য দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সব ঠিক থাকলে ভারতীয় সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করার কথা ছিল বিক্রমের। তার এক মিনিট আগে চাঁদের ছবি পাঠানোর কথা ছিল নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। টান টান উত্তেজনা নিয়ে সেই চরুম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সবাই। কিন্তু ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের স্ক্রিনে যে বিন্দু আর রেখায় বিক্রমের অবস্থান দেখানো হচ্ছিল, সেটা হঠাৎ থমকে গেল। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ল্যান্ডার বিক্রমের উচ্চতা তখন ২.১ কিলোমিটার। চন্দ্রযান-২ অভিযান কার্যত শেষ হয়ে গেল সেখানেই
ভারতের মহাকাশ গবেষণার পুরোধা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে চন্দ্রযানের ল্যান্ডারের নাম রাখা হয়েছিল বিক্রম। তার ভেতরে ছিল রোভার প্রজ্ঞান, যার লক্ষ্য ছিল চাঁদের মাটি থেকে মানুষের জন্য নতুন জ্ঞান আহরণ। ঠিক কী কারণে ল্যান্ডার থেকে সংকেত আসা বন্ধ হয়ে গেল, শেষ পর্যন্ত বিক্রমের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়গুলো এখনও জানতে পারেননি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
চন্দ্রজয়ের আকাক্সক্ষা আগের চেয়েও প্রবল হয়েছে: মোদী : চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের একেবারে শেষ মুহুর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মহাকাশ যানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের সান্ত¡না দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এ অভিযান ভারতের চন্দ্র বিজয়ের আকাক্সক্ষাকে আরও সুদৃঢ করেছে।
“চাঁদ স্পর্শে আমাদের আকাক্সক্ষা আগের চেয়েও প্রবল হয়েছে, সেরাটা এখনও বাকি,” বলেছেন তিনি। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ‘চন্দ্রযানে স্বপ্নভঙ্গের’ ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার সকালে মোদী বেঙ্গালুরুতে সংস্থাটির সদরদপ্তরে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সান্ত¡না ও পরবর্তী অভিযানে উৎসাহ যোগান বলে জানিয়েছে।
“ভারতের মাথা উঁচু রাখতে আপনারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন ত্যাগ করেছেন, অসংখ্য বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন। গত রাতে আপনাদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তা বুঝতে পেরেছিলাম আমি। আপনাদের মুখে থাকা কষ্টের ছাপ পড়তে পেরেছিলাম, আপনারা কয়েক রাত ঘুমাতে পারেননি,” বলেছেন তিনি।
পৃথিবী থেকে দীর্ঘ ৪৭ দিনের যাত্রা শেষে শুক্রবার মধ্যরাতের পর চাঁদের মাটি থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকতে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর কন্ট্রোলরুমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা ভারতীয় সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে বিক্রম চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই সেটি হারিয়ে যায়। অবশ্য চন্দ্রযান-২ যাত্রার শুরুতেই যান্ত্রিক গোলযোগের মুখোমুখি হয়েছিল। গত ১৫ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে সেটির মহাকাশে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও উড্ডয়নের নির্ধারিত সময়ের মাত্র ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে ত্রুটি সামলে এক সপ্তাহ পরে গত ২২ জুলাই বাহুবলী রকেটে চেপে মহাকাশে রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান-২। আনন্দবাজার জানায়, তখনই ঠিক হয়েছিল যাত্রা পিছিয়ে গেলেও আগের নির্ধারিত দিনেই গন্তব্যে পৌঁছৈ দেওয়া হবে চন্দ্রযান ২-কে।
সেই নির্ধারিত দিনটি ছিল ৭ সেপ্টেম্বর। এদিনই দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শততম দিন। সাফল্যের তালিকায় চন্দ্রবিজয়কে জুড়ে নেওয়ার পক্ষে এমন ভাল দিন আর কী হতে পারত। কিন্তু চাঁদের মাটিতে নামার আগে হারিয়ে গেল বিক্রম। চন্দ্রযান-২র যাত্রা পিছিয়ে গেলেও পৌঁছনোর দিন একই রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বলেও জানায় আনন্দবাজার।
“শঙ্কা ছিল,তাতে কোনও বিপত্তি হবে না তো!” কিন্তু ইসরো আশ্বাস দিয়েছিল, “এর জন্য গতি কিছুটা বাড়াতে হবে। পৃথিবীকে পাঁচ পাক ও চাঁদের চারপাশ পাঁচ পাক খাবে চন্দ্রযান-২। তার মাপজোকেও কিছু বদল অবশ্যই ঘটাতে হবে।”
চন্দ্রযান-২ এ থাকা ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ দেখতে শুক্রবার রাতেই বেঙ্গালুরু উড়ে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। চাঁদে দ্বিতীয় অভিযান সফলতার মুখ না দেখলেও সমগ্র ভারত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। আধঘণ্টাব্যাপী ভাষণের পর প্রধানমন্ত্রী ইসরোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মেলান, জড়িয়ে ধরেন সংস্থাটির প্রধান ভারতের শীর্ষ মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. কে সিভানকে। চাঁদে এবারের অভিযানটি কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পর শুক্রবার রাতে সিভান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠের অংশটি এখনও মানুষের কাছে অজানা। সেখানে জমাট বরফ আকারে পানি থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছিলেন ভারতের চন্দ্রযান-১ অভিযান থেকে। কথা ছিল, ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারলে চন্দ্রযান-২ এর রোভার প্রজ্ঞান নতুন তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সেখান থেকে হয়ত জানা যাবে, চাঁদের বুকে কতটা পানি কী অবস্থায় আছে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২২ জুলাই মিশন শুরুর পর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল গত ২০ অগাস্ট।
কক্ষপথে ঘুরতে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে শনিবার প্রথম প্রহরে চাঁদের ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে নিয়ন্ত্রিত অবতরণের কথা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। তারপর উপযোগী পরিবেশে ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে আসত রোবটযান প্রজ্ঞান।
চাঁদে নিয়ন্ত্রিত অবতরণের মিশন সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে নাম লেখাতে পারত ভারত। প্রজ্ঞান ঠিকমত কাজ করলে ভারত হত চন্দ্রপৃষ্ঠে রোভার চালাতে সফল হওয়া তৃতীয় দেশ। আর ভারত হত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে নিয়ন্ত্রিত অবতরণে সক্ষম হওয়া প্রথম দেশ।
সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে পুরো ভারতবাসীর নজর ছিল টেলিভিশনে অথবা ইসরোর লাইভকাস্টে। আর চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারের চাঁদে নামার দৃশ্য দেখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গালুরুর শ্রীহরিকোটায় ইসরোর সদরদপ্তরে।
অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ শুরু করলে করতালিতে ফেটে পড়েছিল ইসরোর কন্ট্রোল রুম। কাচের দেয়ালের বাইরে দর্শক সারিতে বসে সেই দৃশ্য দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সব ঠিক থাকলে ভারতীয় সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করার কথা ছিল বিক্রমের। তার এক মিনিট আগে চাঁদের ছবি পাঠানোর কথা ছিল নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। টান টান উত্তেজনা নিয়ে সেই চরুম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সবাই। কিন্তু ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের স্ক্রিনে যে বিন্দু আর রেখায় বিক্রমের অবস্থান দেখানো হচ্ছিল, সেটা হঠাৎ থমকে গেল। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ল্যান্ডার বিক্রমের উচ্চতা তখন ২.১ কিলোমিটার। চন্দ্রযান-২ অভিযান কার্যত শেষ হয়ে গেল সেখানেই। সিভানের কাছ থেকে স্বপ্নভঙ্গের কথা জানতে পেরে ইসরোর সদরদপ্তর ছেড়ে যান বিষণ্ন মোদী।
“পরিকল্পনামাফিক সব হয়নি, এমনটা দেখার পর আপনাদের আশপাশে থেকে চাপ বাড়াতে চাইনি আমি। সেকারণেই তখন চলে গিয়েছিলাম এবং আপনাদের সবার ভাবনা ও আবেগকে এক করার সময় দিতে চেয়েছিলাম,” শনিবার সকালে বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
দেশটির মহাকাশ গবেষণার পুরোধা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে চন্দ্রযানের ল্যান্ডারের নাম রাখা হয়েছিল বিক্রম। তার ভেতরে ছিল রোভার প্রজ্ঞান, যার লক্ষ্য ছিল চাঁদের মাটি থেকে মানুষের জন্য নতুন জ্ঞান আহরণ। ঠিক কী কারণে ল্যান্ডার থেকে সংকেত আসা বন্ধ হয়ে গেল, শেষ পর্যন্ত বিক্রমের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়গুলো এখনও জানতে পারেননি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।