নিন্দায় সরব আরব বিশ্ব
জর্ডান উপত্যকা দখলের ঘোষণা নেতানিয়াহুর
ইসরাইলের বিরুদ্ধে ওআইসি’র জরুরি বৈঠক ১৫ সেপ্টেম্বর
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকা দখলের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের আসন্ন নির্বাচনে পুনর্র্নির্বাচিত হলে ওই এলাকাগুলোতে সাবভৌমত্ব কায়েম করা হবে বলে মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর আশদোদে এক নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশে ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। এছাড়া এ বিষয়ে দেশটির নির্ভরযোগ্য মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর ঠিক সাত দিন আগে মার্কিন সমর্থন নিয়ে জর্ডান উপত্যকা দখলের অঙ্গীকার করলেন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, জর্ডান উপত্যকা ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এমন একটি এলাকা, যেখানে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি এবং ১১ হাজার অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর বসবাস।
এদিন নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘আজ আমার উদ্দেশ্য ঘোষণা করছি, নতুন সরকার গঠনের পর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব জর্ডান উপত্যকা ও উত্তর মৃত সাগর পর্যন্ত প্রয়োগ করবো। নির্বাচনে ইসরাইলের জনগণ তথা আপনাদের রায় পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করবো।’ উলেস্নখ্য, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৩০ ভাগ এলাকা নিয়ে উত্তর মৃত সাগর (ডেড সি) ও জর্ডান উপত্যকা গঠিত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর নতুন এই দখলদারিত্বের অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলেছেন হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা। তার ভাষায়, ‘এই মুহূর্তে মার্কিন নীতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না। আমরা ইসরাইলের নির্বাচনের পর শান্তির জন্য আমাদের লক্ষ্য প্রকাশ করবো এবং ওই অঞ্চলে দীর্ঘ-প্রত্যাশিত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা এবং স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য সর্বোত্তম পথ নির্ধারণের লক্ষ্যে কাজ করবো।’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জর্ডান উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণার পর এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব বিশ্ব। ওই ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগ। এক যৌথ বিবৃতিতে তুরস্ক, জর্ডান এবং সৌদি আরবও এর কঠোর সমালোচনা করেছে। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে ‘আগ্রাসন’ ও ‘বিপজ্জনক কর্মকান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আরব লীগ। সংস্থাটি বলছে, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ধরনের পদক্ষেপ শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নষ্ট করবে। সৌদি আরবের জেদ্দায় ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে গঠিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসির) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর।
ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল উসাইমিন বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি সবসময়ই ওআইসির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। বিশেষত খাদেমুল হারামাইন সৌদি বাদশাহর আহ্বান এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের কল্যাণে একটি সমাধানমূলক অবস্থা সৃষ্টি করতে চাই।
এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু এ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে ‘ইসরাইলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি ও ওইসব চুক্তির বাধ্যবাধকতার সমাপ্তি ঘটবে।’
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর, গাজা ও সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। ইসরাইল ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেম, ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমি নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়, কিন্তু পশ্চিম তীরকে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বিরত থাকে। দেশটির এসব পদক্ষেপ কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পেলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি থেকে সরে এসে প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন উভয় পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিম তীর। ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য পুরো এলাকাটি দাবি করেছে ফিলিস্তিন। এখানে ও পূর্ব জেরুজালেমে ১৪০টি বসতি নির্মাণ করেছে ইসরাইল যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ, কিন্তু ইসরাইল এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে আসছে। নিরাপত্তার জন্য জর্ডান উপত্যকায় সবসময় ইসরাইলে উপস্থিত থাকা দরকার বলে নেতানিয়াহু আগে থেকেই দাবি করে আসছিলেন।
ফিলিস্তিনের কূটনীতিক সায়েব ইরেকাত বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এটি এ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের কবর রচনা করবে।’ দেশটির কর্মকর্তা হানান আনসারি বলেন, ‘নেতানিয়াহু কেবল দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই নষ্ট করছেন না, তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার সব সুযোগই নষ্ট করছেন।’ নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহু আগ্রাসী বার্তা দিচ্ছেন।’ জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি ওই পরিকল্পনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সমগ্র অঞ্চলে সহিংসতা ত্বরান্বিত হবে।’