ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় : স্বপ্ন পূরণ নাকি দুঃস্বপ্নের যাত্রা শুরু !
মুহাম্মদ আমিনুল হক:
১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বিল-২০১৩’ উত্থাপিত হলে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই বিলটি পাস হয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়। যার কাজ হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, ফাজিল/স্নাতক, কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ, পরীক্ষা পরিচালনা করা। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্যসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
সংসদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি পাসের পর এদেশের কতিপয় আলেম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বর্তমান আওয়ামি সরকার পীর-মাশায়েখ, আলেম-উলামাদের ৭৮ বছরের পুরাতন দাবিকে বাস্তবে রূপদান করে জাতির স্বপ্ন পূরণ করেছে। তবে আলেম-উলামাদের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস কতটা স্থায়ী হবে—এটাই এখন ভাবার বিষয়। একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কাঠামো, তাতে ইসলামি উম্মাহর স্বপ্ন পূরণ তো হবেই না বরং দুঃস্বপ্নের কারণও হতে পারে। যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কতিপয় উলামা তাদের বিজয় বলে দাবি করছেন, ভবিষ্যতে এটি তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় মূলত অনার্স-মাস্টার্স লেভেলে নির্দিষ্ট কিছু সাবজেক্টে শিক্ষার্থীদের বুত্পত্তি অর্জনের সুযোগ করে দেয়। এরপর একজন শিক্ষার্থী এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে নিজের জ্ঞানের জগতকে আরও শাণিত করতে পারে। কিন্তু ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কিছুর সুযোগ থাকছে না। একটি বোর্ড যা করে, তাই করা হবে এই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও একই কাজ করছে। একটি শিক্ষা বোর্ডের মতো সারাদেশের কলেজগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামি জনগোষ্ঠীর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল এদেশে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে সৃষ্টি হবে একদল ইসলামিক স্কলার; যারা মুসলিম উম্মাহর খেদমতে নিজেদের উত্সর্গ করবে। তাদের স্বপ্ন ছিল মিসরের আল-আজহার কিংবা সৌদি আরবের উম্মুল কুরা, মদিনা ইউনিভার্সিটি, কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি জেদ্দার মতো বাংলাদেশেও একটি স্বতন্ত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে; যা হবে কোরআন-হাদিস, ফিক্হ, আরবিসহ জ্ঞানের অন্যান্য শাখা চর্চার একটি আদর্শ পাদপীঠ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপ্রিয় জনতার সেই আকাঙ্ক্ষার একটি বীজ বপিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে মক্কা মুকাররমায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে। ওআইসির ওই সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধান এক সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, প্রত্যেকটি মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামি শিক্ষা চালু করতে হবে। ওআইসির সহায়তায় সারা মুসলিম বিশ্বে তিনটি (মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে) ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তখন। মুসলিম উম্মাহর এই একান্ত প্রয়োজনকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও আন্তরিকভাবে অনুধাবন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে শহীদ জিয়ার কণ্ঠে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুরণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সারা মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেবে। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রয়াস। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ইসলামি ভাবধারার পরিচয় ঘটিয়ে সব মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে ন্যায়নিষ্ঠ, নীতিবান, সুনাগরিক গড়ে তুলবে এ বিশ্ববিদ্যালয়’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ নভেম্বর, ১৯৮৯)। মূলত শহীদ জিয়ার ওই বক্তব্যের মধ্যেই এদেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামি চিন্তাবিদ ও ইসলামপন্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কথা উচ্চারিত হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় নামের সেই বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। ইসলামি নাম আর চারটি ইসলামি সাবজেক্ট ছাড়া আর কিছু নেই সেখানে। মসজিদের টাকা দিয়ে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পরও সেখানে শরিয়াহ অনুষদের কোনো ভবন নেই। শরিয়াহ অনুষদ যে ভবনে, সেই ভবনের নামকরণ করা হয়েছে অনুষদ ভবন। ওআইসি এবং আরব দেশের তত্ত্বাবধানে বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলো, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দশা থেকেই অনুমান করা যায় এদেশে নব্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত্ কেমন হবে। বিশেষ করে যে আওয়ামী সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিরুদ্ধ কার্যকলাপের অনেক নজির আছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে যে, সেখান থেকে হক্কানি আলেম তো দূরে থাক, আরবি হরফ ঠিকমত পড়ার লোকও আর তৈরি হবে না। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ইসলামকে তো একদম সহ্যই করতে পারেন না। ‘মেয়েদের বোরকার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের নাচ-গান শিক্ষা দিতে হবে’, ‘কওমি মাদরাসার ছেলেরা কিচ্ছু জানে না, এরা উজবুক, এরা শুধু মুখস্থই করে’, ‘ভবিষ্যতে সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়াটুকুও মুছে ফেলা হবে’, ‘রাসুলকে কটূক্তি করা স্বাভাবিক বিষয়, এটা নিয়ে এত হৈ চৈ করা ঠিক নয়’, ‘তথাকথিত আল্লাহর শাসন দিয়ে কিছু হবে না’, ‘কুিসত মেয়েরা চেহারা ঢাকতেই বোরকা পরে’, ‘কওমি মাদরাসাগুলো জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’, ‘ধর্ম হলো মদ আর গাঁজার নেশার মতো’ ইত্যাদি মন্তব্য যারা করে, ঠিক তারাই যখন বিনা প্রতিবাদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিয়ে দেয়, তখন সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল না জেগে পারে না। দেশের শ্রদ্ধাভাজন উলামাদের যারা মূর্খ মোল্লা কিংবা তেঁতুল হুজুর বলে হররোজ গালিগালাজ করে, তারা আবার কীভাবে এত সহজেই আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন করল?
আওয়ামী লীগের পলিসিমেকারদের অন্যতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কিছুদিন আগে মাদরাসাবিরোধী বক্তব্যকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর দেশে স্কুল তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রতি তিনজন স্কুলছাত্রের বিপরীতে একজন মাদরাসা ছাত্র তৈরি হয়েছে। এটা কমিয়ে দিতেই আমরা ইতোমধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি।’ মূলত জয়ের এই বক্তব্য কোনো ফালতু বক্তব্য নয় বরং সরকার জয়ের ফর্মুলাতেই আগাচ্ছে। গত নির্বাচনের প্রাক্কালে সজীব ওয়াজেদ জয় পাশ্চাত্যের নজর কাড়তে প্রচণ্ড মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত কার্ল জে সিওভাক্কোর সঙ্গে যৌথভাবে ‘Stemming the rise of Islamic Extremism in Bangladesh’ একটি আর্টিকেল রচনা করেন। তাতে তিনি লেখেন যে, The Awami League must, however, implement certain changes to proactively check this Islamism if it hopes to secure long-lasting secularism and democracy. If successful, an Awami League-led Bangladesh could be the global example of secular governance in a Muslim country. অর্থাত্ আওয়ামী লীগ যদি এদেশে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেকুলারিজম ও গণতন্ত্রকে কায়েম করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই ইসলামি তত্পরতাকে থামিয়ে দিতে হবে। এটি যদি সফল হয়, তাহলে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সেক্যুলার রাষ্ট্র কায়েমের বৈশ্বিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। ওই আর্টিকেলের অন্য অংশে তিনি লেখেন, Can the Awami League stop the growing tide of Islamism in a country that has seen the sale of burkas rise nearly 500 percent in the last five years? The answer is yes if it implements the following secular renewal plan. First, it must modernize the curriculum of the madrasses. Second, it must build proper, secular elementary schools and hospitals. Third, it should increase the recruitment of secular-minded students into the military from secular cadet academies. Fourth, it must attempt to rehabilitate known extremist clerics. অর্থাত্ ‘আওয়ামী লীগ কি পারবে ইসলামের তত্পরতা ও অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করতে, যেখানে গত পাঁচ বছরে (চারদলীয় জোট সরকারের আমলে) বোরকা বিক্রির হার বেড়েছিল শতকরা ৫০০ ভাগ? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ পারবে, যদি নিম্নের নতুন সেক্যুলার প্ল্যান তারা বাস্তবায়ন করেন। এক. অবশ্যই আওয়ামী লীগকে মাদরাসার সিলেবাস আধুনিকায়ন করতে হবে। দুই. অবশ্যই তাকে সেক্যুলার স্কুল ও হসপিটাল নির্মাণ করতে হবে। তিন. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেক্যুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেক্যুলারপন্থী ছাত্রদের রিক্রুট করতে হবে…।’ মূলত বর্তমান সরকার জয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিগত সময় পার করেছে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে তারা সেক্যুলারাইজ করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রকে তারা সফলভাবে সেক্যুলার করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এরই মধ্যে সরকার ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’ রচনা করেছে, যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ইবতেদায়ী এবং প্রাইমারির শিক্ষার্থীরা ৮টি সাবজেক্ট অভিন্ন পড়বে। এ আইন অনুযায়ী কেউ মাদরাসায় পড়লে তার মধ্যে মাদরাসার বিশেষত্ব বলতে আর কিছুই থাকবে না। কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণেরও নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে। মাদরাসার ফাজিল-কামিল পাস করা ছাত্ররা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না—এমন ঘোষণা এসেছে। কামিল পর্যায়ের শিক্ষকের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারের মধ্যে ইসলামবিরোধী বাম শক্তির আধিক্যের কারণে আমরা দেখতে পেয়েছি, হকপন্থী আলেম-উলামার ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার; দাড়ি-টুপি-হিজাবওয়ালারা হয়েছেন নিগ্রহের শিকার। সারাদেশের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে চরম সেক্যুলার মুসলিম অথবা সংখ্যালঘুদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে ইসলামি ভাবধারার লোকজন প্রতি পদে চাপের মধ্যে পতিত হয়েছেন।
অতএব, নামে যত আরবি আর ইসলামি বলা হোক না কেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় তো সেক্যুলার সরকারের সেক্যুলার নীতিমালার বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগের মতো কোনো দল কস্মিনকালেও চাইবে না এদেশ ইসলামাইজড তথা ইসলামিকরণ হয়ে যাক। তাছাড়া ভিসি-প্রোভিসিসহ নীতিনির্ধারকরা থাকবেন সরকারের লাগামের মধ্যে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আমরা যেমন সামীম আফজালকে দেখেছি মার্কিন নৃত্য আমদানি করতে কিংবা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের একান্ত আজ্ঞাবহদের ভিসি-প্রোভিসি হতে, সে ধরনের লোকরাই যখন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার হবেন, তখন উলামাদের অবস্থা কী হবে আল্লাহ মালুম। সম্ভবত এ কারণেই এদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী দীনি প্রতিষ্ঠান ছারছিনা আলিয়া মাদরাসা বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ছারছিনার বর্তমান পীর সাহেব। আলিয়া মাদরাসা বন্ধ করে তিনি কওমি ধারার দীনি মাদরাসা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার এই সিদ্ধান্ত অনেককে হতবাক করেছে। যে মাদরাসা থেকে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পত্রিকার সম্পাদক, এমপি, মন্ত্রী সৃষ্টি হয়েছেন, সেই মাদরাসা বন্ধ করার কারণ কি? শ্রদ্ধাভাজন পীর সাহেব হুজুর হয়তো ভেবেছেন—আধুনিকতার নাম করে সরকার যেভাবে মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস কাটসাঁট করছে, তাতে ভবিষ্যতে মাদরাসার স্বকীয়তা বলতে কিছু থাকবে না এবং খাঁটি আলেমে দীনও সৃষ্টি হবে না। কিন্তু বিকল্প মাদরাসা খোলারও যে সুযোগ নেই! সরকারের নতুন শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো স্কুল, কলেজ, মাদরাসা বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবে না। মাদরাসা শিক্ষা আন্দোলনের যেসব পুরোধা ব্যক্তিত্ব একজন সেক্যুলার শিক্ষামন্ত্রীর গলায় ফুলের মালা দিয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন, তারা হয়তো এখনও ভুলের মধ্যে আছেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক কার্যক্রম চলবে না বরং বিভিন্ন নীতিমালার আওতায় মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও সেক্যুলার করতে করতে সাইজ করা হবে—সে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এত উদ্বেলিত হওয়ার কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। আল্লাহর ওপর আস্থা ব্যতিরেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বানিয়ে যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে, ঠিক তেমনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় উপাধি দিয়ে অন্তঃসারশূন্য আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়ে এদেশের সরল-সোজা উলামাদের চমক দেখাল আওয়ামী লীগ!