সৌদি আরবের হাজার কোটি ডলারের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কি ব্যর্থ হচ্ছে
সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলার পর এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, ইয়েমেনে গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ করলেও উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষায় মোটেই শক্তিশালীয় নয়। অথচ তারা প্রতিবছর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে কোটি কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কেনে।
শনিবার যে হামলাটি হয়েছে সৌদি আরবে, তা মোটেই শক্তিশালী প্রযুক্তির ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই হামলা ঠেকাতে পারেনি সৌদি আরব। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ হামলার পেছনে ইরান ছিল বলে তাদের বিশ্বাস। যদিও ইরান সেই অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতায় ইরান অনেক এগিয়ে আছে। তারা সৌদি আরবের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিতে পারবে বলে ভাষ্য থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিআইএসএস এর; এক্ষেত্রে ইরানের বিশাল আয়তন ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাদের সমর্থিত বাহিনীগুলোর শক্তিমত্তাও উল্লেখ করেছে তারা।
কিন্তু ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরাও সৌদি আরবে অনেকবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের বেসামরিক বিমানবন্দর, অয়েল পাম্পিং স্টেশন ও শায়বাহ তেলক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সফল হামলাগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।
একথা স্বীকার করে সৌদি আরবের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা উন্মুক্ত। কোনো বাস্তব স্থাপনার জন্যই কোনো বাস্তব সুরক্ষা নেই।’
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর দুটি প্লান্টে ১৪ সেপ্টেম্বরের হামলাটি ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় সঙ্কটের সময় সাদ্দাম হুসেন কর্তৃক কুয়েতের তেল কূপগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার পর ওই অঞ্চলের তেল স্থাপনায় চালানো সবচেয়ে বড় হামলা।
প্রাথমিক তদন্তের ফলাফলে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো ইরানি বলে ইঙ্গিত পাওয়ার কথা জানিয়েছে রিয়াদ, কিন্তু হামলাটি ঠিক কোন স্থান থেকে চালানো হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি। আবার হামলা ড্রোন নাকি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে হয়েছে সেটিও নিশ্চিত হতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘এই হামলাটি সৌদি আরবের জন্য ৯/১১ হামলার মতো, এটি একটি গেম চেঞ্জার (পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার মতো)’।
তিনি বলেন, ‘কোথায় সেই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মার্কিন অস্ত্র, রাষ্ট্র ও এর তেল স্থাপনাগুলো সুরক্ষার জন্য যার পেছনে আমরা শত শত কোটি ডলার খরচ করেছি? তারা যদি এত নিখুঁতভাবে হামলা করতে পারে তাহলে তারা লবনমুক্তকরণ প্লান্ট ও অন্যান্য লক্ষ্যেও আঘাত হানতে পারবে।’
সৌদি আরবের প্রধান প্রধান শহর ও স্থাপনাগুলো সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। ড্রোন কিংবা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আরও ধীরগতিতে অল্প উচ্চতা দিয়ে চলায় প্যাট্রিয়টের পক্ষে এগুলোকে যথসময়ে শনাক্ত করে ধ্বংস করা কঠিন।