লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো অষ্টম মুসলিম চ্যারিটি রান
মো: আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল: ২২ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পূর্ব লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে অনুষ্ঠিত হয় অস্টম মুসলিম চ্যারিটি রান। ঐতিহ্যবাহী এই চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামজের পর লন্ডন মুসলিম সেন্টারে শেষ মহূর্তের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেন কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। এসময় তাঁরা চ্যারিটি রানের মনোগ্রামখচিত টি-শার্ট সংগ্রহ করেন। মূল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে ইস্ট লন্ডন মসজিদের ট্রাষ্টি সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় দীর্ঘক্ষণ চলে শরীরচর্চা। ঘড়ির কাটা যখন ১১টায়, তখন সকলেই গিয়ে দাঁড়ান স্টার্টিং পয়েন্টে। সোয়া এগারোটা বাজতেই বেজে উঠে হুইশেল। শুরু হয় ৫ কিলোমিটার দৌঁড়। মাত্র ১৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে এসে প্রথম হওয়ার রেকর্ড গড়েন ইতিওপিয়ান বংশোদ্ভুত বৃটিশ মুসলিম সাইফু জামাল। তিনি হেলপ ইয়াতিম চ্যারিটি সংস্থার পক্ষে দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্য বিজয়ীরাও আধঘন্টার আগেই পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসেন। আর এভাবেই ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও বিভিন্ন চ্যারিটির জন্য হাজার হাজার পাউন্ড ফান্ডরেইজ করেন অংশগ্রহণকারীরা।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এই চ্যারিটি রান প্রথম তিন বছর ‘রান ফর ইউর মস্ক’ নামে পরিচালিত হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে কিছু পরিবর্তন এনে ক্যাম্পেইনের নামকরণ করা হয় মুসলিম চ্যারিটি রান। বিগত দিনে শুধু ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজ করা হতো। আর মুসলিম চ্যারিটি রান নামকরণের পর থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য চ্যারিটি সংস্থার জন্যও ফান্ডরেইজ করছেন অংশগ্রহণকারীরা।
এবারের চ্যারিটি রানে ৩১টি চ্যারিটি সংগঠন অংশগ্রহণ করছে। চ্যারিটিগুলো হচ্ছে, ইস্ট লন্ডন মসজিদ, ইন্টারপাল, মুনতাদা এইড, প্যানি অ্যাপিল, লুইশাম ইসলামিক সেন্টার, লনলী অরফান, মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন, মুসলিম এইড, গ্লোবাল রিলিফ ট্রাস্ট, মুসলিম চ্যারিটি, লন্ডন ইস্ট একাডেমী এণ্ড আল-মিজান স্কুল, হাগস, হিউম্যান এইড, এমআরডিএফ, হেলপিং হিউমিনিটি, হিউম্যান কেয়ার, মুসলিম হেলপ ইউকে, হেলপ ইয়াতিম, স্টেপনী শাহজালাল মস্ক, অফ দ্যা স্ট্রিট, সিরিয়া রিলিফ, ফিন্সবারী পার্ক মস্ক, হিউম্যান অ্যাপিল, মাউন্টেন অব মার্সি, গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট, কেন্টিশ টাউন বায়তুল আমান মসজিদ, ওয়ান ন্যাশন, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন, এইটথ ইস্ট লন্ডন স্কাউট গ্রুপ, দারুল আমান মসজিদ ও দারুল উম্মাহ মসজিদ ইউকে।
চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ৫ বিজয়ীকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে অনুর্ধ ১২ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মোহাম্মদ ইসা আলী। তিনি মাত্র ২৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে আসেন। তাছাড়া ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মাজিন আবদি। তিনি ২০ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করেন। এরপর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন সাইফু জামাল। তিনি ১৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার দৌঁড় সম্পন্ন করেন । ২৫ থেকে ৩৪ বয়স ক্যাটারিতে বিজয়ী হন সাহিব আহমদ। তিনি ২০ মিনিটে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হন। ৩৫ থেকে ৫০ বছর ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হন আব্দুল্লাহ কিজিতো । তিনি ২১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে দৌঁড় সম্পন্ন করেন। তাছাড়া সর্বশেষ ক্যাটাগরি ৫১ ও ততোর্ধ বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মুহাম্মদ রাহমান। তিনি ২৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে দৌড় সম্পন্ন করেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে মুসলিম চ্যারিটি রানের মনোগ্রামখচিত ক্রিস্টাল ট্রফি তুলে দেয়া হয়।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক দেলওয়ার হোসাইন খানের উপস্থাপনায় পুরষ্কার বিতরনী পর্বে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম, ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি আইয়ুব খান, ইমাম ও খতীব শায়েখ আব্দুল কাইয়ূম ও সিনিয়র ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। এছাড়াও বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুনতাদা এইড এর রেজা মালিক, পেনি অ্যাপিল এর জাহান রহমান, স্টেপনী শাহাজাল মসজিদের শফিক ইসলাম ও হিউম্যান অ্যাপিল এর মোহাম্মদ কালাম।
ডেপুটি মেয়র সিরাজুল ইসলাম এ ধরনের উৎসবমুখর একটি কর্মসূচি ৮ বছর ধরে নিয়মিত পরিচালনার জন্য ইস্ট লন্ডন মসজিদকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, যুব সমাজকে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে এই কর্মসূচি বিরাট ভুমিকা রাখছে। তিনি আগামী বছরগুলোতে চ্যারিটি রানে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুসলিম চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই রান কমিউনিটির মানুষের একটি বার্ষিক মিলন মেলায় রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আবহাওয়া সংবাদ দেখে আমরা অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সর্বোত্তম পরিকল্পকারী। তাঁর পরিকল্পনা ছিলো একটি রৌদ্রজ্জোল দিন। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারী স্টেপনী শাহজালাল মস্ক টিমকে ধন্যবাদ জানান। কারণ তাঁদের মসজিদের পক্ষে ১৩০জন দৌঁড়ে অংশগ্রহণ করেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের সেক্রেটারি আইয়ূব খান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুসলিম চ্যারিটি রান কমিউনিটির জন্য একটি আনন্দঘন কর্মসূচি। এ বছরের আবহাওয়া ছিলো দৌঁড়ের জন্য যথোপযুক্ত। খুব গরম নয়, আবার ঠাণ্ডাও নয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে পার্কে এসেছেন। আনন্দ উপভোগ করেছেন। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা একদিকে যেমন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজ করতে পারছি, অপরদিকে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্ধুদ্ধ হচ্ছি। মুসলিম চ্যারিটি রান আমাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম এর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পুরস্কার বিতরনী পর্বের সমাপ্তি ঘটে। ৮ বছর যাবত মুসলিম চ্যারিটি রান সফলতার সাথে আয়োজনের জন্য চ্যারিটি রানের মূল অর্গানাইজার, ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিনিয়র ফান্ডরেইজিং ম্যানেজার তজম্মুল আলীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।