ইউরোপের নিচে পাওয়া গেছে আরেক মহাদেশ

বিশ্ব মানচিত্রে এখন যেখানে ইউরোপের অবস্থান, ঠিক তার নিচেই হারিয়ে যাওয়া একটি মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। ভূমধ্যসাগরীয় জটিল ভূতাত্ত্বিক বিবর্তন ও গঠন নিয়ে গবেষণা ও খোঁড়াখুঁড়ির সময় সম্প্রতি এর খোঁজ পান ভূতাত্ত্বিকরা। মহাদেশটিকে বলা হচ্ছে ‘গ্রেটার অ্যাড্রিয়া’।

উঁচু উঁচু পাহাড় ও পর্বতমালা রয়েছে এই মহাদেশে। সেই সঙ্গে স্পেন থেকে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রও রয়েছে এর। এটি হারিয়ে যায় ১২ কোটিরও বেশি বছর আগে। ভূতত্ত্ববিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল গন্ডোয়ানা রিসার্চে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ খবর দেয়া হয়েছে।

ভূতত্ত্ববিজ্ঞানীরা বিগত বছরগুলোয় গ্রেটার অ্যাড্রিয়ার উপস্থিতির ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন। কিন্তু ভূমধ্যসাগর এলাকাটি অবিশ্বাস্য রকমের জটিল। তাই পুরনো ইতিহাস জোড়া দিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণায় লেগে যায় এক দশক। যদিও কাজটি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রথম প্রণেতা নেদারল্যান্ডসের উথরেখট ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত¡বিজ্ঞানী দাও ফান হিন্সবার্গা ‘গন্ডোয়ানা রিসার্চে’ বলেছেন, ভূমধ্যসাগর ও এর আশপাশের অঞ্চল পুরোপুরি ভূতাত্তি¡ক জগাখিচুরি। এখানকার ভৌগোলিক প্লেটের একটা অংশ বেঁকে গেছে। কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আবার কোথাও কোথাও স্তুপ হয়ে আছে।’
সুপারকন্টিনেন্ট ‘গন্ডোয়ানা’ ভেঙে তৈরি হয়েছে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টার্কটিকা ও ভারত। ২৪ কোটি বছর আগে ‘গ্রেটার অ্যাড্রিয়া’ তার মাতৃ-মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে উত্তরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

প্রায় ১৪ কোটি বছর আগেও এর আকার ছিল আজকের গ্রিনল্যান্ডের কাছাকাছি। তবে এর বেশির ভাগ অংশই ছিল গ্রীষ্মমÐলীয় সাগরে নিমজ্জিত। সেখানেই পলি জমতে জমতে শিলায় রূপ নেয় এটি। এরপর প্রায় ১২ থেকে ১০ কোটি বছর আগে এটি ভবিষ্যৎ ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তকে আঘাত করে এবং ঘড়ির বিপরীতে বছরে তিন থেকে চার সেন্টিমিটার করে অগ্রসর হতে থাকে।

এক্সপেরিমেন্টাল ভোলকানোলজি বিষয়ে ডক্টর এবং পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক-সাংবাদিক হয়ে ওঠা রবিন জর্জ অ্যান্ড্র–স ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে লিখেছেন, ‘গ্রেটার অ্যান্ডিয়া’ ধ্বংসের প্রক্রিয়াও ছিল বেশ জটিল। এটি এমন কয়েকটি ‘সাবডাকশান জোনে’ বা এলাকায় আঘাত করেছিল, যেগুলো ছিল ‘টেকটোনিক প্লেটের’ সংযোগস্থল।

এতে ‘গ্রেটার অ্যাড্রিয়া’ প্লেটের ওপর ‘ইউরোপীয় প্লেট’ উঠে যায়। ফলে ‘গ্রেটার অ্যাড্রিয়া’ প্লেটের বেশির ভাগই ঢেকে যায় ইউরোপীয় প্লেটে। আর সেই ধ্বংসাবশেষ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ইতালি, তুরস্ক, গ্রিস, বলকান ও আল্পসের পর্বতশ্রেণি। মাটির তলদেশে হারিয়ে যাওয়া থেকে ‘গ্রেটার অ্যাড্রিয়ার’ কিছু অংশ রক্ষা পেয়েছিল। সেগুলো এখনও ইতালি ও ক্রোয়েশিয়ায় আছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button