বিটি বেগুন বাজারজাত করার ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
জেনেটিক্যালি মোডিফাইড (জিএম) করায় বিটি বেগুন গাছেই কীটনাশক উত্পাদিত হয় যা গাছকে কীট থেকে সুরক্ষা করে এবং তা ধুয়ে যায় না। এটি হতে পারে মানুষের সরাসরি গ্রহণ করা প্রথম জিএম খাদ্য শস্য।
স্বাস্থ্যহানীর ঝুঁকি : যে প্রক্রিয়ায় বিটি বেগুন উত্পাদন হয় তার মাধ্যমে বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি হয় যা মানুষের শরীরে ক্যান্সার, পারকিনসন্স ও জন্মগত বিকলঙ্গতার কারণ হতে পারে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
একটি মার্কিন কোম্পানি কর্তৃক বেগুনের জিন বদলিয়ে তা বাজারজাত করছে। এই বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। একটি স্বাধীন গবেষণার মাধ্যমে জিন বদলে উত্পাদিত বেগুন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি-না তা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
বাংলাদেশে প্রায় ৩০ জাতের বেগুন রয়েছে। এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এক ধরনের বেগুনে ব্যাসিলাস থারিনভেনসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে বিটি বেগুন করা হয়েছে। এই বেগুনকে পোকানিরোধী বেগুন বলে বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষেই ওই বেগুনে পোকা ধরে না। কারণ এই বেগুন খেলে পরিপাকতন্ত্র নষ্ট হয়ে পোকা মারা যায়। এই বেগুন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে হাইকোর্টে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেয়। এছাড়া জীবন ও স্বাধীনতায় মানুষের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার বিপন্ন করে বিটি বেগুন কৃষকদের কাছে ছাড়ার আগে এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি এবং ইকোলোজিকাল ভারসাম্য বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে কৃষি সচিব, পরিবেশ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহা-পরিচালক, পরিবেশ অধিপ্তরের মহা-পরিচালক এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রমের নির্বাহী পরিচালক সাকিউল মিল্লাত মোরসেদ গত বৃহস্পতিবার উপরোক্ত নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আবেদনকারীর পক্ষে এডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম ও এডভোকেট ইকবাল কবির লিটন বক্তব্য রাখেন। আইনজীবীরা বলেন, মার্কিনি এই কোম্পানি ভারতের মহারাষ্ট্রে এই বেগুন বাজারজাত করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিপাইনেও তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বাংলাদেশে বিটি বেগুন বাজারজাতকরণের সকল উদ্যোগ অবিলম্বে স্থগিত রাখা, বিদেশি কোম্পানির কাছে স্থানীয় জাতের বেগুন হস্তান্তরের আইনি ভিত্তি এবং এ বেগুনের মেধাস্বত্ব কার অনুকূলে যাবে-তা জানানোর পাশাপাশি বিটি বেগুনের মাঠ পর্যায়ের সম্পাদিত সকল পরীক্ষার পূর্ণ ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে।
কৃষি সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট বরাবর এই নোটিস পাঠানো হয়। বেলার নোটিসে বলা হয়, বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য হস্তান্তর সংক্রান্ত কোন আইন বিদ্যমান না থাকা সত্ত্বেও শস্য প্রজাতি হস্তান্তরের উদ্যোগ সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনকি এ বিষয়ে কৃষকের মতামতও গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া বিটি বেগুনে মার্কিন কোম্পানি মনসান্তোর বিটি জিন যোগ করা হয়েছে বিধায় এ বেগুনের মেধাস্বত্ব নিয়েও নোটিসে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া বিটি বেগুনের মাঠ পর্যায়ের সম্পাদিত সকল পরীক্ষার পূর্ণ ফলাফল অদ্যাবধি জনসম্মুখে তুলে ধরা হয়নি। বেগুন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি- যা দেশের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে চাষাবাদ করা হয়। এ সবজি নিয়ে সকল কার্যক্রম অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহিতামূলক হওয়া আবশ্যক বিধায় সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই নোটিস প্রেরণ করা হয়। নোটিসে আরো বলা হয়, ইতোপূর্বে বিভিন্ন কোম্পানির বীজ ক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সমপ্রদায়কে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। বিশ্বে সম্পূর্ণ অপরীক্ষিত এবং জেনেটিক দূষণের জন্ম দিতে পারে- এমন বেগুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার আগে ব্যর্থ ফলন এবং সম্ভাব্য দূষণের বিপরীতে সিবিডি এবং কার্টাহেনা প্রটোকল অনুযায়ী ক্রেতাস্বার্থ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা উল্লেখিত কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
প্রতিবেশী ভারতের জাতীয় জীববৈচিত্র্য কমিটি সে দেশের জীববৈচিত্র্য আইন ২০০২ ভঙ্গ করে ১৬টি দেশীয় প্রজাতির বেগুনে জিএম জিন সংযোজন করায় মাহিকোসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ভারত ও ফিলিপাইনে বিটি বেগুন বাজারজাতকরণের উপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ বেগুন বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যা জনস্বার্থ বিরোধী।