ম্যানচেস্টার সিটি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর
ব্রিটেনের গ্রেটার ম্যানচেস্টার সিটি মেয়র এনডি বার্নহাম ও তার সফরসঙ্গীদের সংবর্ধনা প্রদান করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। গত শুক্রবার রাত ৮টায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতা ও উষ্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় সিলেট ও ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। সংবর্ধনার জবাবে ম্যানচেস্টার সিটি মেয়র এনডি বার্নহাম বলেন, সিলেট ও ম্যানচেস্টারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রায় ৫০ হাজার সিলেটি বাংলাদেশি ম্যানচেস্টারে বসবাস করেন। ম্যানচেস্টারের সকল ক্ষেত্রে সিলেটিরা কাজ করছেন এবং ব্রিটেনের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তিনি সিলেট ও ম্যানচেস্টারের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সী মার্ক গ্রুপের চিফ একি্রাকিউটিভ ইকবাল আহমদ ওবিই, ওল্ডহাম কাউন্সিলের ডেপুটি লিডার আব্দুল জব্বার এমবিই, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপম্যান্ট ইন্সটিটিউটের ডাইরেক্টর প্রফেসর ডেভিড হাম, শিক্ষাবিদ ড. কবির চৌধুরী, সিলেট প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. নাসিম আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী বিধায়ক রায় চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি এনডি বার্নহাম আরো বলেন, সিলেটি ৫টি জিনিস তাকে আকৃষ্ট করেছে। সেগুলো হলো-এখানের ফলের মধ্যে কলা, চা, ক্রিকেট, রেস্টুরেন্ট এবং একজন বিপুল জনপ্রিয় বিরোধী দলীয় মেয়র। তার এ বক্তব্যে শ্রেুাতাদের মুহুমুহু করতালিতে মুখরিত হয় পুরো হল। তিনি এ সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দুই শহরের মধ্যে সম্পর্ক যেমন ব্যাপক তেমনি কাজ করারও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। একসাথে কাজ করলে উভয়ে উপকৃত হব। তিনি বলেন, ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক সময় সিটি মেয়র ছিলেন। সিলেটের মেয়রও এক সময় তাঁর মতো স্থানে যাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ম্যানচেস্টার সিটি মেয়রকে সিলেট আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ম্যানচেস্টার ও সিলেট দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে কাজ করতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেটের আইটি সেক্টরে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। ব্রিটেন তাদের কাজে সুযোগ নিতে পারে।
এছাড়া, সিলেটে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্রা নির্মাণ, ওয়েস্ট বেইস পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সী মার্ক গ্রুপের চিফ একি্রাকিউটিভ ইকবাল আহমদ ওবিই বলেন, তিনি ১৯৯২ সালে ম্যানচেস্টারে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে সেখানে তার ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটি কর্পোরেশন ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন, সিলেটের পর্যটনখাতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীরা সেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।
ওল্ডহাম কাউন্সিলের ডেপুটি লিডার আব্দুল জব্বার এমবিই বলেন, ব্রিটেনে কারিগরি শিক্ষিতদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই মানুষ যায় এবং তখন তাদের ভারী কাজ করতে হয়। যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কিছু করার জন্য তিনি সিলেট সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপম্যান্ট ইন্সটিটিউটের ডাইরেক্টর প্রফেসর ডেভিড হাম দুই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে সাইন্স এন্ড টেকনোলজি এবং ম্যাথমেটিকসে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শিক্ষাবিদ ড. কবির চৌধুরী তার দীর্ঘ ব্রিটেনের প্রবাস সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ম্যানচেস্টারের মানুষ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং অতিথিপরায়ণ। বহিঃ ক্যাম্পাসের মাধ্যমে দুই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে। ম্যানচেস্টার সিটি মেয়রের মাধ্যমে দুইটি শহরের মধ্যে পরস্পরিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সায়েকা তাবাসুম চৌধুরী নাহিয়ার সঞ্চালনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-আজম খান, আবদুল মুহিত জাবেদ, সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম, এমএস শওকত আমীন তৌহিদ, তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু, শাহানারা বেগম, নাজনীন আক্তার কনা, রেবেকা বেগম, মাসুদা সুলতানা, শাহানা বেগম শানু, রেবেকা আক্তার লাকী প্রমুখ। কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আনম মনসুর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান, আইটি কনসালটেন্ট শাহাদাত হোসেন খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।