উচ্চশিক্ষার জন্য এমপির দুর্নীতি

নরসিংদী আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী ঢাকায়। কিন্তু তার পক্ষ হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিয়ে দিচ্ছেন অন্য কেউ। এই পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে অন্তত আটজন মেয়ে তার পক্ষে পরীক্ষা দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মহিলা আসন ২৪ এর সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি।

তবে দমে যাওয়ার মেয়ে তিনি না! উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো কিন্তু এই সংসদ সদস্য বিএ পরীক্ষায় পাস করার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি একটিতেও অংশ নেননি। তাতে দোষের কিছু নয়! সমস্যা হলো তার পক্ষে এ পর্যন্ত অন্তত আটজন নারী ওইসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সবাই সবকিছু জানতো কিন্তু এমপি’র ভয়ে সবাই ছিলো চোখ বন্ধ করে। সেই টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সরেজমিনে করা প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এমন সব তথ্য।

পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নম্বরের সিটে বসা পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন তার নাম তামান্না নুসরাত বুবলী। পরে তার আইডি কার্ড আছে কিনা জানতে চাইলে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, তার সাথে আইডি নেই। পরে ওই প্রতিবেদক পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, তামান্না নুসরাত বুবলী একজন সংসদ সদস্য।

তিনি এই সিটে পরীক্ষা দিচ্ছেন কেন? তখন ওই পরীক্ষার্থী নিজেকে সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। তার আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে এবং সে জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, বুবলীর সব পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) প্রশাসন। এছাড়াও এ ঘটনার তদন্তে বাউবির পক্ষ থেকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

উপাচার্য ড. এম এ মান্নান বলেন, “বুবলীর এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছে। তিনি বাউবির কোনো প্রোগ্রামেই আর কখনও ভর্তি হতে পারবেন না। এ ধরনের কাজ একটি ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ। যারা তার হয়ে প্রক্সি দিয়েছে তাদের পরিচয়প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।”

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button