দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ: সৃজনশীল প্রতিভার অহমিকা
জন্ম: ২৫ অক্টোবর ১৯০৬ খৃ:, মৃত্যু: ১ নভেম্বর ১৯৯৯ খৃ:
সোলায়মান আহসান: ওয়ান মোহাম্মদ আজরফ (১৯০৬-১৯৯৯) বহু প্রজ দৃষ্টিদীন, বহুমুখীন, কর্মকুশলী, দার্শনিক এবং প্রবাদতুল্য প্রতিভার নাম। এমন বর্ণাঢ্য ও বহুগামী কর্মপটু তিরানব্বই বছরের এক সাফল্যের কাহিনী ভরা জীবন আলেখ্য আমাদের উপমহাদেশে খুবই বিরল। তাঁর কি না গুণপনা ছিল, তিনি একাধারে দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, ইকবাল বিশেষজ্ঞ, সাহিত্য গবেষক, ইতিহাস গবেষক, ভাষা সৈনিক, কথাসাহিত্যিক, কবি, সুবক্তা, রাজনীতিক ইত্যাদি। এমন বিশাল প্রতিভাকে স্পর্শ করা, তাঁর সম্পর্কে কিছু বলা এক সুকঠিন বিষয় ও স্পর্ধাও বটে। এ কারণেও এমন ধাঁচের ব্যক্তিরা আমাদের সময়ে উপেক্ষিত হন। তাছাড়া ‘চলিত গতিধারা’ যারা জীবদ্দশায়, মৃত্যুর পর যা পাওয়ার কথা, তার নগদ ব্যবস্থা না করেন, তাদের প্রটোকলহীন জীবনের কি-ইবা দাম থাকে? তাই, আজকাল দেখা যায়, জীবদ্দশায় নিজের ঢোল নিজেই বাজানোর যতটুকু সম্ভব তার কসরৎ করে থাকেন। শুনেছি, পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের এক অঞ্চলে মৃত্যুর আগেই ধনী লোকেরা জিয়াফতখানার ব্যবস্থা করেন। কারণ মৃত্যুর পর সন্তান-সন্ততিরা যদি তা না করে। এও শুনেছি, কোনো এক দেশে মৃত্যুর পর রোদনের জন্য ভাড়া করে মানুষ আনা হয় শোক প্রকাশ করার জন্য। কারণ মৃত্যুর পর নাকি শোক প্রকাশের স্বাভাবিক ধারাটি সেখানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। আনুষ্ঠানিকতা বজায় রাখতে ওখানেও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করতে হয়।
উপরোক্ত প্রসঙ্গের অবতারণা করলাম এ জন্য, আমাদের একজন মনীষীতুল্য সাহিত্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক আগেই এমন এক মন্তব্য করেছেন, যে জাতি গুণীর কদর করে না, সে দেশে গুণী জন্মে না, এমনটি এখন দেখতে পাচ্ছি। সে কারণেই বুঝিবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) তার পিতামহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরর (১৮১৭-১৯০৫) জীবদ্দশায় শান্তিনিকেতনকে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয়ে রূপ দেয়ার কাজটি করেন। তাছাড়া পিতা দেবেন্দ্রনাথ তাঁর এই প্রতিভাবান ছেলেকে বিশেষ একটু আলাদা নজরে দেখতেন বলেই রবীন্দ্রনাথকে জমিদারির কাজ-কর্ম থেকে যেমন অব্যাহতি দেয়া হয়, তেমনি ছেলের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য চর্চা এবং গবেষণা অব্যাহত রাখার উদ্দেশে বিশ^ভারতী ছাড়া আরও দু’দুটো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মত জায়গা প্রদান করেন। কিন্তু সবাই তো রবীন্দ্রনাথ নন, সবার দেবেন্দ্রনাথের মত উদার দৃষ্টিভঙ্গির পিতার সন্তান হওয়ার সৌভাগ্য হয় না।
অবশ্য বক্ষমান আলোচ্য ব্যক্তি দেওান মোহাম্মদ আজরফ জমিদার পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত মরমী কবি ও সঙ্গীত সাধক হাসন রাজার তিনি দৌহিত্র। হাসন রাজার জ্যেষ্ঠা কন্যা রওশান হুসন বানু ছিলেন আজরফের মাতা। এছাড়া পিতৃকূলও ছিল জমিদার বংশোর উত্তরাধিকার। পিতা দেওয়ান মোহাম্মদ আসফ চৌধুরী ছিলেন উঁচু বংশীয় শিক্ষিত ব্যক্তি, দুহানিয়ার জমিদার ও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী নেতা, সিলেট জেলা কংগ্রেস এবং খিলাফত কমিটির নির্বাচিত সভাপতি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। প্রতিভার পার্থক্য যাই থাকুক, বৈষয়িক চিন্তাধারায় দু’জন সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ জমিদারি প্রথাকে পছন্দ করেননি, কঠোর সমালোচক ছিলেন তার। যে কারণে তাকে পারিবারিকভাবে অনেক তিরস্কার ও গঞ্জনা সইতে হয়েছে। এমনকি ‘নাস্তিক’ হয়ে গেছেন এমন কল্পিত ও আরোপিত অভিযোগ এনে তাকে শাস্তিও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মনে মনে জমিদারি প্রথাকে গ্রহণ করতে না পারলেও এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ নীরব এবং সুবিধাভোগী। তবে তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথ অভিযোগ আনে ‘.. বিষয় ব্যাপারে তার মাথা নেই, সারাদিন শুধু ব্রহ্ম আর ব্রহ্মা।’ [উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেব দেবেন্দ্রনাথ রাজা রামমোহনের সংস্পর্শে এবং ব্রহ্ম ধর্ম অবলম্বন করে ব্যাপকভাবে ভারতবর্ষে প্রচার শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। রবীন্দ্রনাথ পিতার সঙ্গে ব্রহ্ম ধর্ম প্রচারে বালক বয়সে বিভিন্ন স্থানে সহযাত্রী থাকতেন। দেওয়ান আজরফের ব্যাপারে ঘটলো ভিন্ন ঘটনা। আজরফ শব্দের অর্থ ‘মহাজ্ঞানী’। তিনি তার নামের অর্থকে পরিপূর্ণ সার্থক করতে শুধুমাত্র বৈষয়িক জমিদারি প্রথার বাইরেই বিচরণ করলেন না, সারাজীবন জ্ঞানচর্চার মধ্যে নিজেকে এমনভাবে নিয়োজিত রাখলেন, জীবদ্দশায় তিনি ছেলের ভাড়া করা বাড়িতে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত কাটিয়ে গেলেন। এব্যাপারে তার কোন আক্ষেপ ছিল না। বরং এমন বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলতেন, আমার নানাজী বলিয়া গেছেন, ‘আকি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার…।
দেওয়ান আজরফ দার্শনিক ছিলেন, না সাহিত্যিক ছিলেন, এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাঁর জীবদ্দশায়। তাঁর ভাষায়, ‘যেহেতু আমি দর্শনের ছাত্র ছিলাম সে কারণে এখনও নিজেকে দর্শনের ছাত্র বলেই মনে করি। আমি নিজেকে কখনও পুরো দার্শনিক বলে মনে করি না।’
অপরদিকে তাঁর লিখিত সাহিত্য গ্রন্থের দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি এবং তাঁর রসবোধ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করি তবে তিনি একজন পুরো সৃষ্টিশীল জীবন শিল্পী ও সাহিত্য গবেষক। তাঁর ভাষায়- “আমি গল্প লিখেছি শতাধিক, ১০৭টির অধিক। দর্শন গ্রন্থ, গল্প গন্থ, উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শ’ এর কাছাকাছি। প্রকাশিত গ্রন্থ ৪০টি। সম্পাদনামূলক ও ভূমিকা-লিখিত গ্রন্থের সংখ্যাও অনেক। তবে বাংলা ও ইংরেজিতে রচিত প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক।’
তাঁকে যে দার্শনিক বলা হয়, অথচ দর্শনের ওপর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ৪টি। এগুলো হলো: ১. ফিলোসফি অব হিস্ট্রি (১৯৮২), ২. ধর্ম ও দর্শন (১৯৮৬), ৩. দর্শনের নানা প্রসঙ্গ (১৯৭৭) ও ৪. জীবনদর্শনের পুনর্গঠন।
এ প্রসঙ্গে কথা সাহিত্যিক শাহেদ আলী যথার্থ বলেছেন, ‘দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ দার্শনিক ও শিক্ষাব্রতী ছিলেন কিন্তু তাঁর রচনায় দর্শনের ছিটেফোঁটাই কেবল আছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোটামুটি একজন সৃজনশীল রস্রষ্টার পরিচয়ই এ গ্রন্থে ফুটে উঠেছে।’ [সোনা ঝরা দিনগুলো’ গ্রন্থের ভূমিকা]
মোহাম্মদ আজরফ একজন বড় মাপের সৃজনশীল লেখক ছিলেন। কিন্তু তার দার্শনিকত্ব, শিক্ষাবিদ হিসেবে দীর্ঘদিন বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা সর্বোচ্চ পদ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন তাঁর ব্যক্তিত্ব ও পরিচিতি খন্ডিত করেছে। বিশেষ করে তিনি ঢাকায় আবু জর গিফারী কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ১৯৬৭ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি অনেক কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হন। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের মত আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে তিনি তমুদ্দুন মজলিসের সভাপতি হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, এমন বড় মাপের প্রতিভা দেওয়ান আজরফের প্রকাশিত গ্রন্থ পাওয়া খুবই দুষ্কর। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গ্রন্থ প্রকাশের তেমন শুভ উদ্যোগ এ যাবতকাল (১৬ বছর) পর্যন্ত কেউ গ্রহণ করেনি। যে কারণে মোহাম্মদ আজরফ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিদের পক্ষেও চট করে তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করা সুকঠিন ব্যাপার।
আগেই বলেছি, আজরফ সম্পর্কে এমন অভিযোগ উঠেছে, তিনি ধর্মের ব্যাপারে বিরূপ ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ধর্মদ্রোহী ছিলেন না, প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাপারে ছিলেন বিরূপ। তিনি জমিদারী প্রথাকে শোষণের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে এর বিরোধী ছিলেন। এটা তিনি তাঁর লিখিত গল্পের মাধ্যমে নানাভাবে প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর বেশির ভাগ গল্পগুলো সমাজের অবহেলিত, ভূমিহীন প্রজা, নানকার, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, সমাজ বিতাড়িত ভুখা-নাঙ্গা মানুষদের কষ্টের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত। বেদে সম্প্রদায় সম্পর্কে তাঁর কৌতূহল ছিল বলে তিনি ঐ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বহুদিন মিশেছেন, তাদের জীবন যাপন খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাঁর গল্পে এদের জীবনের কাহিনী নিখুঁতভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। এটা একজন মজিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে কতটা উদার দৃষ্টিভঙ্গির হলে করা সম্ভব, তা একটু ভাবলেই অনুধাবন করা যাবে। আল্লাহতা’লা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কুরআনের মাধ্যমেই তাঁর নিজের স্বরূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, জাত ও ঊংংবহপব হিসেবে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। তবে তাঁর রয়েছে নিরানব্বই গুণ বা ধঃৎরনঁঃব। এগুলিই এ দুনিয়ায় বিকাশ লাভ করেছে। যেহেতু মানুষকে আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে এ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান এ জন্য মানুষের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর গুণাবলী যথসাধ্য আয়ত্ব করে ইনসানে কামেল হওয়া। এ গুণাবলীর মধ্যে রব্ব নামক গুণকে সর্বপ্রধান বা ইসমে আজম বলে গণ্য করা হয়। ‘রব্ব’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সৃষ্টিকর্তা, ও বিবর্তনকারী। যেহেতু আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, এ জন্য আল্লাহর এ গুণ থেকে পালনকর্তা গুণ বর্তে। (গ্রন্থ: দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, মোঃ রফিকুল ইসলাম) ।
আজরফ শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত কৃতী ছাত্র। তিনি মেট্টিক (১৯২৫) পাশ করেন ফারসীতে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। ইন্টারমিডিয়েট (১৯২৭) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন একই বিশ^বিদ্যালয়ের অধীন। স্নাতক(বি.এ) (১৯৩০) পাশ করেন ডিস্টিংশনসহ (ফারসীতে লেটার মার্কসহ) ঐ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে। স্নাতকোত্তর (প্রিলিমিনারী) (১৯৩১) ও দর্শন বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন এবং এম.এ চূড়ান্ত পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী পান। তিনি ফারসীসহ ইংরেজী, আরবী ও উর্দু ভাষায় সুদক্ষ ছিলেন। হিন্দিও তার দখলে ছিল।
আগেই বলেছি, আজরফের জীবন ছিল এক মহীরূহ সম। তাকে নিয়ে লিখতে যাওয়া এক নেহায়েৎ বিপত্তি ছাড়া কিছু নয়। এতো সাফল্য তিনি অর্জন করলেও তার নিজের মনে একটি বিষয়ে অপূর্ণতার খেদ ছিলই, তার ভাষায়: ‘কিন্তু যে স্বপ্নটি পূরণ হয়নি তা হচ্ছে পিএইচডি করা। আমি ১৯৩২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে পাস করে তদানীন্তন দর্শন বিভাগের প্রধান ড. গোবিন্দ চন্দ্র (জিসি) দেব এর অধীনে ‘এসিস টু রিয়েলিটি’ নামে একটি পিএইচডি থিসিস সম্পন্ন করি। কিন্তু ড. গোবিন্দ চন্দ্র ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে আমেরিকায় চলে যাওয়ায় এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্মমভাবে নিহত হওয়ার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তখন থিসিস জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। পরে যারা ছিলেন, তাদের কাছে জমা দেয়া হলে তারা আমার থিসিস সম্পর্কে তেমন বুঝতে পারছেন না বলেছেন। ফলে আমার পিএইচডি ডিগ্রি হলো না।’
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আজরফের এই দুঃখ থাকার কথা নয়, তিনি যে জ্ঞানের বিশাল ভূমি কর্ষণ করেছেন, তার উপর যদি আমরা বিচরণ করতে পারি, তবে তার একটি পিএইচডি’র স্থলে কয়েকটি ঐ ডিগ্রি প্রদান সম্ভব।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ জাতীয় অধ্যাপক ভূষিত হয়েছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তার একটি চেয়ার ছিল (সম্মানজনক), কিন্তু আজ তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। এতে তিনি নন আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য-ইতিহাস জানতে পারছি না। দিনে দিনে হীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। আমরা পরনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হতে চলেছি। যে জাতি তার অতীত গৌরব জানে না, অতীতের কীর্তিমান পুরুষদের সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, সে জাতি অন্যের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য। আমরা সেদিকেই ধাবিত হচ্ছি। দেওয়ান আজরফ তাই সমগ্র জীবন ব্যয় করেছেন শিক্ষা বিস্তারে। আমরা সেই মৌলিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
তাই, আজরফকে আমাদের পাঠ করতে হবে। তাঁর গ্রন্থসমূহ প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার জীবনের মহান কর্মকে তুলে ধরতে হবে। এতে আমরা উপকৃত হবো। এমন প্রতিভাধর ব্যক্তিরাই জাতির অহমিকা হতে পারেন।