বোমা ফাঁটালেন এবিএম মুসা
আমার কাছে বিষয়টি বিভ্রান্তিকর, আসলে আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেছি। সারাদিন বসে বসে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দেখছিলাম। রায় এবং যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বিভিন্ন জনের মতামত শুনতে ছিলাম। আমার কাছে কতগুলো ব্যপার মনে হচ্ছিল।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ করলাম, ১৯৭২ সনে আমরা ক্ষমতায় বসলাম। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট। ১৯৭২ সাল থেকে এই পর্যন্ত তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লুন্ঠনকারী এদের বিচারের ব্যপারে এতটা সোচ্চার হয় নি। কেন হয়নি? এই প্রশ্নটির উত্তর আমি খুঁজে পাই না। এতবছর আলোচনা হয়েছে এই প্রশ্নটি আমাকে কেউ করে নি।
দ্বিতীয়ত এতগুলো রায় হয়েছে, বিচার হয়েছে। সবগুলোর রায় সম্পূর্ণ পড়েছি, খুটিনাটি সব পড়েছি। প্রতিটি রায়েই আছে, পাকিস্তানি বাহিনীকে ডেকে নিয়ে এসেছে। পাকিস্তানি কর্ণেলদের তাবেদারী করেছে। পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছে। যারা সহায়তা করেছে তাদের বিচার হচ্ছে। তাহলে একটাও পাকিস্তানি আসামি নেই কেন?
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই এর মধ্যরাতের টকশো ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবিএম মুসা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
সঞ্চালক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানিদেরকে তো সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এবিএম মুসা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে তারা তো (পাকিস্থানি) বিদেশী। বিদেশী হবে বলে ছাড়া পাবে এমন কোনো কথা নেই। ইসরায়েল যাদের দণ্ড দিয়েছিল। তাদেরকে ত্রিশ বছর পরে ধরে এনে বিচার করে ছিল। তারা তো ইসরায়েলের নাগরিক ছিল না। ইসরায়েল যাদের বিচার করেছে তারা জার্মান নাগরিক। নুরেমবাগ ট্রায়ারে কথা চিন্তা করেন। জার্মানীরা তাদের লোকদের তারা বিচার করেনি। বিচার করেছে ইসরায়েল। ইহুদিদের হত্যাকারীদের বিচার করেছে ফ্রান্স, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র।
আজকে আমরা পাকিস্তানিদের বিচারের দাবি করছি না। দুটো জিনিস আমার মনে হয়, দু’টি কারণে ৯০ হাজার পাকিস্থানি সৈন্যবাহিনী ফিরে গেল। একটা পাকিস্তানিকে আমরা ধরে রাখলাম না। তথাকথিত সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি সৈন্যরা ফিরে যায়।
যদি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসতেন। যদি ভারতীয় সৈন্যরা পাহারা দিয়ে, ট্রেনে করে পাঠিয়ে না দিত, কিংবা ঢাকা ক্যান্টমেন্টে পাহারা না দিয়ে না রাখত। সেদিন স্টেডিয়ামে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যেটা শুরু করেছিল সেটা সারাদেশেই হতো।
তিন নম্বর, আমি তোমাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছি। আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলিনি। কোনো আলোচনায় আমি বলিনি। কিন্তু আমার সামনে যারা আওয়ামীলীগ করতেন। পরে যারা আওয়ামীলীগ করতেন বা যারা আওয়ামীলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা একটা জিনিস জানেন না। ১৯৭২ সালে পয়সার বিনিময়ে নন-কোলাবোরেট সার্টিফিকেট দেয়া শুরু হলো। আওয়ামীলীগের লোকজন নন-কোলাবোরেট সার্টিফিকেট বিক্রি করা শুরু করলো। ঐ খান থেকেই শুরু হয়েছে। ……… বাহিনীর কথা তো বললামই না।
তারপরেও বিভিন্ন জনের আলোচনা শুনছিলাম। যেটা হয়নি, সেটা শেষ পর্যন্ত হয়েছে। বিচার হয়েছে, সে বিচার কি ধরনের হয়েছে, সেটা নিয়ে বহুধরনের আলোচনা হচ্ছে।
আজ যে হরতাল হচ্ছে, কার হরতাল পালন করবো, শাহবাগীদের হরতাল, না জামাতের হরতাল?
সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, আপনার দাবি কি? বিচার মানি না!!! মুসা বলেন, দণ্ড মানি না… না দণ্ড কম হয়ে গেছে। যদি সত্যিকার অর্থে এরা অভিযুক্ত হয়ে থাকে, সাঈদীর যদি ফাঁসি হতে পারে, তাহলে গোলাম আজমের কেন নয়?
সঞ্চালক বলেন, বয়সের বিবেচনায় তার ফাঁসি হয় নাই। তোমাকে একটা উদাহরণ দেই, জেকবা কিলার নামে এক সিরিয়াল কিলার ছিল। সে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে, কোনো কারণ নেই। সেই ব্যক্তি ১৫০ বা ২০০ জন হত্যা করেছিল। বিশ বছর পর তার বিচার হয়েছে। কিংবা ২০ বছর পরে ঐ ব্যক্তির ফাঁসির রায় হয়েছে। কবর থেকে তুলে এনে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। ফাঁসিটা তো শুধু মারা নয়। এটা সিম্বল। অর্থাৎ তুমি অপরাধ করলে তোমার মোটেও রক্ষা নেই। আমাদের দেশে একটা কথা আছে, কবরে গেলেও শান্তি নেই।
এত বছর পরে হঠাৎ করে গণজাগরণ হলো। যেমন শাহবাগ মঞ্চ যেটা হঠাৎ করে শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামীলীগের প্রতিশ্রুতি ছিল। বর্তমানে এটা রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি উভয় দলই এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। শাহবাগের জাগরণের শুরুতের আমি একটি উদ্দীপনামুলক লেখা লিখেছিলাম। যার শুরু তে ববীন্দ্রনাথের কবিতা লিখেছিলাম, না জানি কেন রে এতদিন পরে জাগিয়া উঠেছে প্রাণ।