নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৯
বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩৯৫ বিলিয়ন ডলার
বদরুল আলম: ব্র্যান্ড ভ্যালুতে দ্রুতবর্ধনশীল ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের হিসাবে, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৯৫ বিলিয়ন ডলার। এ ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম। আগের তালিকায় অবস্থান ছিল যেখানে ৩৭তম।
তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ড স্ট্রেনথ ইনডেক্স (বিএসআই), ব্র্যান্ড রয়্যালটি রেট ও ব্র্যান্ডের রেভিনিউ। এ তিনটি তথ্য নির্দিষ্ট একটি সূত্রে ব্যবহার করে ব্র্যান্ড মূল্য হিসাব করা হয়েছে। আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি অক্টোবরে প্রকাশ করেছে ব্র্যান্ড ফিন্যান্স।
নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৮ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিল ২৫৭ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ প্রতিবেদনে তা বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি হারে ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে মাত্র তিনটি দেশের। এর মধ্যে প্রথমেই আছে ঘানা। দেশটির ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা উগান্ডা ও প্যারাগুয়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৮ ও ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সূচক ব্র্যান্ড স্ট্রেনথ ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়েছে তিনটি স্তম্ভের ভিত্তিতে। এগুলো হলো বিনিয়োগ, সমাজ এবং পণ্য ও সেবা। এগুলোর বিপরীতে আবার রয়েছে আলাদা উপসূচক। বিনিয়োগ স্তম্ভের আওতায় রয়েছে তিনটি উপসূচক—সুশাসন, বাজার এবং জনগোষ্ঠী ও দক্ষতা। সুশাসন পরিমাপ করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ, কর ব্যবস্থা, অবকাঠামো ও বিনিয়োগকারীর সুরক্ষার ভিত্তিতে। প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণা ও উন্নয়ন, ব্যবসায় পরিবেশ ও বাজার উন্নয়নের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়েছে বাজার উপসূচক। আর জনগোষ্ঠী ও দক্ষতা উপসূচকের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা, মেধার স্থিতি এবং মেধার ব্যবহার।
দুর্নীতি, বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, ভাবমূর্তি, জীবনযাত্রার মান, করপোরেট নৈতিক অবস্থান—এসবের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় সমাজ স্তম্ভটি। পণ্য ও সেবা স্তম্ভের আওতায় রয়েছে সুশাসন, বাজার ও পর্যটন উপসূচক। এক্ষেত্রে সুশাসন পরিমাপে ব্যবহার করা হয় বাণিজ্য নীতিমালা ও সরকারের নীতি। বাজারের আকার, প্রতিযোগিতা ও উন্নয়ন বিবেচনা করে বাজার উপসূচকটির মান নির্ধারণ করা হয়।
প্রাপ্ত মান অনুযায়ী ছয়টি আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করা হয় প্রতিটি ব্র্যান্ডকে। এগুলো হলো অসাধারণ, অত্যন্ত শক্তিশালী, শক্তিশালী, উন্নয়নশীল, দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু। প্রতিটি শ্রেণীতে তিনটি করে উপশ্রেণী রয়েছে।
ব্র্যান্ড ভ্যালুতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটির অবস্থান সপ্তম। গত বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেড়েছে দেশটির ব্র্যান্ড ভ্যালু। আগের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ৩৪তম স্থানে। ২০১৮ সালের তালিকায় বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিল ২৫৭ বিলিয়ন ডলার।
অনেকগুলো মাপকাঠিতে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, বিনিয়োগ মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। এর একটা বড় ইতিবাচক প্রতিফলন বাংলাদেশের র্যাংকিং ও ব্র্যান্ড ভ্যালুতে দেখা গেছে। এছাড়া ক্রয়ক্ষমতার মাপকাঠিতেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। গত এক দশকের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় এক নম্বর অবস্থানটি বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে নেশন ব্র্যান্ডিংয়ে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো হওয়ার পাশাপাশি ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়ছে।
উল্লেখ্য, বরাবরের মতো এবারো ব্র্যান্ড ভ্যালুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৭৫১ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে দেশটির ব্র্যান্ড ভ্যালু। চলতি বছর ব্র্যান্ড ভ্যালুতে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য দেশগুলো হলো চীন, জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাজ্য। দেশগুলোর ব্র্যান্ড ভ্যালু যথাক্রমে ১৯ হাজার ৪৮৬, ৪ হাজার ৮৫৫, ৪ হাজার ৫৩৩ ও ৩ হাজার ৮৫১ বিলিয়ন ডলার।