জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির ডা. শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান। গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত আমির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। দলের সর্বোচ্চ সংখ্যক রোকনের (সদস্য) ভোট পেয়েছেন শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার তাকে জয়ী ঘোষণা করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দলটি। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী এবং মকবুল আহমাদের পর জামায়াতের চতুর্থ আমির হলেন শফিকুর রহমান। তিনি আমির পদে শপথ নেওয়ার পর দলের মজলিসে শূরার পরামর্শে সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত মাসে জামায়াতের মজলিসে শূরা দলের আমির নির্বাচন করতে প্যানেল গঠন করে। সেখানে শফিকুর রহমান ছাড়া জামায়াতের দুই নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ারেরও নাম ছিল। দলটির ৪৫ হাজার রোকনের বেশিরভাগ শফিকুর রহমানকে বেছে নেন। তবে তিনি কত ভোট পেয়েছেন তা জানানো হয়নি। জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমির নির্বাচনের পর দলের মজলিসে শূরা নির্বাচিত হবে। গঠন করা হবে নতুন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদ।
ডা. শফিকুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত: ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আবরু মিঞা ও মাতার নাম মরহুমা খাতিবুন নেসা। তার বর্তমান ঠিকানা সিলেট মহানগরীর শাহপরান থানার সবুজবাগ এলাকায়। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। তিনি ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হন। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এবং ১৯৯১ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বর্তমান সরকার তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে বন্দি করে রাখে। তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অনেক এতিমখানা ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং বহু দাতব্য চিকিৎসালয়, ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি একটি কামিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, গ্রীস, বেলজিয়াম, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ফিলিপাইন, ব্রুনেই প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করেছেন।
তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক ৮ম জাতীয় সংসদের সদস্যা ছিলেন। তার ২ মেয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন এবং একমাত্র পুত্র এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র।