এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর ব্রিটেনের অর্থনীতি
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারিত হওয়ায় মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে ব্রিটেন। তবে ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ব্যবসা কার্যক্রমকে সংকুচিত করায় তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সবচেয়ে মন্থর। দ্বিতীয় প্রান্তিকে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
এদিকে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের পর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসায় মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাজ্য। পরপর দুই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হলে মন্দা ধরা হয়।
ওএনএসের এক পরিসংখ্যানবিদ বলেন, মূলত জুলাইয়ের শক্তিশালী পরিসংখ্যানের সুবাদে তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ‘স্থিতিশীলভাবে’ বেড়েছে। পণ্য ও সেবা উভয়ের রফতানি বাড়ায় ব্রিটেনের অন্তর্নিহিত বাণিজ্য ঘাটতি সংকুচিত হয়েছে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও তা অর্থনীতিবিদদের দেয়া দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে মন্থর ছিল।
এদিকে সেপ্টেম্বরে জিডিপিতে দশমিক ১ শতাংশ পতন দেখা গেছে। এছাড়া আগস্টে ওএনএসের সংশোধিত পরিসংখ্যানে সংকোচন দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে কেবল জুলাইয়ে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে।
ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের অর্থনীতিকে আরো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু দেশটির সেবা খাত যুক্তরাজ্যকে ধনাত্মক টেরিটোরিতে নিয়ে আসার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোডাকশন শিল্প থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাতটির অন্তর্গত।
ব্রিটেনের ছায়া অর্থমন্ত্রী জন ম্যাকডোনেল বলেন, আমাদের মন্ত্রীরা গত ছয় মাসের মধ্যে কেবল দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়াতেও যেভাবে আনন্দ উদযাপন করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতি নিয়ে তাদের আশা ও প্রত্যাশা কতটা কম।
ব্রিটেনের লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির ট্রেজারি মুখপাত্র এড ডেভি বলেন, এ ‘ফ্যাকাশে’ অর্থনীতির জন্য সরকার দায়ী। আজকের এ প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান উদযাপনের একটি কারণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এ পরিসংখ্যানকে ‘ওয়েলকাম সাইন’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি যে শক্তিশালী এ পরিসংখ্যান তারই আভাস দিচ্ছে।
ওএনএসের পরিসংখ্যান অনুসারে, তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের রফতানি প্রান্তিকওয়ারি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় আমদানি বেড়েছে মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে নিট বাণিজ্য বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ পরিসংখ্যানের যথাযথতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওএনএস। সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘বহিঃস্থ তথ্য’ থেকে সরকারিভাবে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তুলনায় দুর্বল রফতানি প্রবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং খাত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ব্যবসা বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ম্যানুফ্যাকচারারদের সংগঠন মেক ইউকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সিমাস নেভিন বলেন, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ও মন্থর বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে। তবে সরকারি খাতের আবাসন নির্মাণ বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক কাজের নতুন কার্যাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোয় মে মাসের পর নির্মাণ খাতে প্রথম ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।