ব্রেক্সিট নিয়ে তীব্র বিতর্কে জনসন-করবিন
যুক্তরাজ্যের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচার চলাকালে প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে ব্রেক্সিট নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে ব্রেক্সিট ছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা, আস্থা ও নেতৃত্ব, স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যত ও রাজপরিবার নিয়েও তারা একে অপরকে আক্রমন করেন।
আগামী ১২ই ডিসেম্বর ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচন। ব্রেক্সিটকে সামনে রেখে এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। এরই মধ্যে চলছে প্রচারণা। মঙ্গলবার কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির দুই শীর্ষ নেতা প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আইটিভির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সরাসরি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিটকে জাতীয় দুর্যোগ আখ্যায়িত করে এর সমাপ্তি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লেবার দল শুধুই বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তারা অচলাবস্থা সৃষ্টি করছে।’ জবাবে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ‘লেবার দল ক্ষমতায় থাকলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় বৃটিশ জনগণকে তাদের শেষ কথা বলার সুযোগ দিতো।’
বরিস জনসন বিজয়ী হতে চাইছেন, যাতে তিনি ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তিনি ব্রেক্সিট নিয়ে যে চুক্তিতে আটকে আছেন, তা তিনি আইনে পরিণত করতে চাইছেন। তবে তার এমন ইচ্ছার কড়া জবাব দিয়েছেন জেরেমি করবিন। তিনি বলেছেন, বরিস জনসনের করা চুক্তিকে তিনি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা করতেন। তাতে থাকতো কাস্টমস ইউনিয়ন ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকতো সিঙ্গেল মার্কেট সুবিধা। এরপরই তিনি এই চুক্তি নিয়ে জনগণের সামনে ভোটে দিতেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে জেরেমি করবিন মন্তব্য করার পরই ঝড়ো বিতর্ক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে উদ্দেশ্য করে করবিন বলেন, আপনি তো আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এবং বিগ ফার্মা’র কাছে বিক্রি করে দিতে চলেছেন। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কিছু গোপনীয় মিটিংয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। করবিনের ভাষায়, এসব বৈঠকে বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় মার্কিন পণ্যগুলোর পূর্ণাঙ্গ মার্কেট সুবিধা প্রস্তাব করেছে সরকার। জেরেমি করবিনের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। তিনি বলেন, করবিনের এমন দাবি পুরোটাই বানানো।
বিতর্কের আগে জনমত জরিপে পিছিয়ে ছিল লেবার দল। ফলে এই বিতর্ক তাদেরকে ব্যবধান কমানোর একটি সুযোগ এনে দিয়েছিল। বিবিসির রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেছেন, এই বিতর্কে কে বিজয়ী হয়েছেন অথবা কে পরাজিত হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ইউগভের এক জরিপ বলছে, বিতর্কে কে বিজয়ী হয়েছেন সে বিষয়ে জনগণ বিভক্ত। বেশির ভাগ লেবার দলীয় ভোটার মনে করছেন বিজয়ী হয়েছেন জেরেমি করবিন। অন্যদিকে রক্ষণশীল কনজার্ভেটিভ দলের ভোটাররা মনে করছেন বিজয়ী হয়েছেন বরিস জনসন। তবে বিতর্ক শুনে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির নেত্রী নিকোলা স্টার্জেন বলেছেন, তাদের দু’জনের একজনও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
বিতর্কে কনজারভেটিভ পার্টির অন্যতম টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘ফ্যাক্টচেকইউকে’ নিয়েও টোরিরা সমালোচনার মুখে পড়েছে। এদিনের বিতর্কে এসএনপি ও লিবারেল ডেমোক্রেট দলের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত না করায় দল দুটি আইটিভির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেলেও লাভ হয়নি। বিবিসি আগামী ৬ ডিসেম্বর সাউথহ্যাম্পটনে জনসন ও করবিনের মুখোমুখি বিতর্কের আয়োজন করেছে। -বিবিসি