ব্রিটেনে ধনীদের সম্পদ দরিদ্রদের তুলনায় ৪গুণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে
ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী লোকেরা তাদের সম্পদ সবচেয়ে দরিদ্রদের তুলনায় ৪গুণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে দেখছেন। এক্ষেত্রে লন্ডন অন্যান্য অঞ্চলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। সম্পত্তির দাম এবং পেনশন পট বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের মোট সম্পদ ২০১৬ ও ২০১৮ সালের মধ্যে বেড়ে ১৩ শতাংশ অর্থ্যাৎ ১৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হয়। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস্ (ওএনএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ধনী ৩০ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে ১১ শতাংশ, যখন সবচেয়ে দরিদ্রদের বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ব্যাপী নিম্নস্তরের গড়পড়তা সম্পদ স্থির অবস্থায় রয়েছে, যখন সবচেয়ে ধনীরা তাৎপূর্বপূর্ণ পরিমান সম্পদ লাভ করেছেন।
২০১৮ সালে নীচের দশ শতাংশের একজন লোক সম্পত্তি, পেনশন, আর্থিক সম্পদ ও পজেশনসহ মোট ৩৭০০ পাউন্ড পান, যা ২০১০ সালের প্রাপ্তি থেকে প্রায় ১০০ পাউন্ড কম। শীর্ষ দশের সম্পদ একই সময়ে এক তৃতীয়াংশের ও বেশী বৃদ্ধি পায়। গড়ে ২০১০ সালের ১ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ২০১৮ সালের ২ দশমিক ৫ মিলিয়নে উন্নীত হয়। এই গ্রুপ যুক্তরাজ্যের সর্বমোট সম্পদের ৪৫ শতাংশের অধিকারী। তখন সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ লোক মাত্র ২ শতাংশ সম্পদের অধিকারী ছিলো।
শুধুমাত্র আর্থিক ও প্রোপাটিং সম্পদের দিকে তাকালে দেখা যায়, যাতে বাস্তব দখলাধিকার ও পেনশন অন্তর্ভুক্ত নয়, জনসংখ্যার সর্বনিম্ন দশের অর্থাৎ ১০ শতাংশের ঋণ রয়েছে, যা তাদের সম্পদের চেয়ে বেশী এবং তা আরও লাল বর্ণের দিকে ধাবিত। গড়ে তাদের নেতিবাচক আর্থিক ও সম্পদগত সম্পত্তি (প্রোপার্টি ওয়েলথ) ছিলো ২০১৮ সালে ৪৯০০ পাউন্ড, যা ২০১৪ সালে ছিলো আরো কম ৩৯০০ পাউন্ড।
এছাড়া ডাটা বা উপাত্তে একটি ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক বিভক্তি বিদ্যমান। লন্ডনের মোট সম্পদ প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে ২০০৮ সাল থেকে, যখন পূর্ব মিডল্যান্ড ও উত্তরপূর্ব উভয়ই নেমে গেছে ১০ শতাংশের চেয়েও বেশী। এছাড়া লন্ডনের রয়েছে যুক্তরাজ্যের অন্য যে কোন অঞ্চলের তুলনায় বিত্তবান ও দরিদ্রের মধ্যেকার সর্ববৃহৎ বিভক্তি।
যুক্তরাজ্যের ট্যাক্স জাস্টিসে’র নির্বাহী পরিচালক বলেন: ‘এসব সংখ্যা এটাই প্রকাশ করে যে, বিগত দশকব্যাপী সম্পদের অসমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একরোখাভাবে উচুঁতে রয়ে গেছে। এগুলো বৈশ্বিক পরিনতি লাভ করেছে। সম্পদ লাভ আপনাকে জীবনে অধিকতর সুযোগসুবিধা ও উত্তম স্বাস্থ্য প্রদান করে।’
‘এই নির্বাচনে অসমতা বা অসাম্য এক প্রধান আলোচ্য বিষয়। যদি আমাদের সরকারী পরিষেবাসমূহ পেতে হয় তবে করের সম্পদের অধিকতর ভূমিকা রয়েছে এর সমাধানে, ভোটাররা সুস্থিরভাবেই বলবে তা পেতে চায়।’
মজুরীর বৃদ্ধিতে সম্পদের বৃদ্ধি প্রতিফলিত হয়নি, গড়পড়তা মজুরী ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ উচ্চতার সামান্য নীচে থেকে গেছে। ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডসমূহসহ গৃহস্থালী ঋনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ২ বছরে ১১ শতাংশ বেড়ে ১১৯ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হয়।
‘রিজোলিউশন ফাউন্ডেশন’ এর গবেষণা বিশ্লেষক জর্জ ব্যাংহাম বলেন: ‘যখন আয় গত দশকব্যাপী স্থবির হয়ে আছে, তখন আমাদের জাতীয় সম্পদ অব্যাহতভাবে বর্ধিত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ১৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন সম্পদ উচ্চতরভাবে একীভূত এবং অসমভাবে বিস্তৃত। গৃহস্থালীর ১০ শতাংশ সর্বোচ্চ ধনীরা সাম্প্রতিক সম্পদ বৃদ্ধি থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং জাতীয় সম্পদের প্রায় অর্ধেকের অধিকারী হয়েছেন। এর বিপরীতে, উত্তর ও মিড ল্যান্ডস এর অংশসমূহে টিপিক্যাল (সাধারন) গৃহস্থালীসমূহ এখনো তাদের আর্থিক সংকটপূর্ব অবস্থার চেয়ে সম্পদশালী নয়।