শেফিল্ডের বাসে হিজাব পরিহিতা স্কুল ছাত্রী বর্ণবাদী হামলার শিকার
রাদেনা আল-হাদি (১৪) এবং তার বোন উইদা (১৩) শেফিল্ডের সিলভার ডেইল স্কুল থেকে ফেরার পথে ৪০ বছর বয়সী এক মহিলার নির্মম হামলার শিকার হয়। হামলাকারী আল-হাদির ইসলামী হিজাব দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করলে সে বাসের মেঝেতে পড়ে যায়। পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে এসে ৪০ বছর বয়সী ঐ মহিলা ও ৪৪ বছর বয়সী একজন পুরুষকে গ্রেফতার করে। বর্ণবাদী হামলা ও সরকারী শৃংখলা সংক্রান্ত অপরাধ সন্দেহে তাদের আটক করা হয়। হামলার পর রাদেনা মিররকে বলেন, ঘটনাটি আমাকে অসুস্থ ও ভীত করেছে। আমি স্কুলে যেতে চাইনে। কীভাবে একজন বয়স্ক লোক হিজাব পরার জন্য একটি শিশুর ওপর হামলা চালাতে পারে? আমি একটি ছোট্ট মেয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলাম। আমি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত বলে অনুভব করছি। পরিচয় সংকটে পড়েছি আমি।
হাদি বলে, যখন মহিলাটি আমাকে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেছিলো, তখন আমার মনে হচ্ছিলো আমি মারা যাচ্ছি। তার রাস্তায় থাকা উচিত নয়। সে যে কোন মুসলিমের প্রতি এটা করতে পারে। আমি এখন আমার বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছি। সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশ প্রাথমিকভাবে মহিলাকে সাবধান করে দিয়ে চলে যেতে দেয় কিন্তু তারা মেইল অনলাইনকে জানিয়েছে, পূর্ণ পর্যালোচনার লক্ষ্যে তদন্ত চলবে।
আল-হাদি জানায়, বিবাদের সূত্রপাত হয় যখন সে, তার বোন এবং অপর একজন নারী বন্ধুকে ৪৪ বছর বয়সী পুরুষ লোক সম্ভাষন জানায়, যে অভিযোগ অনুযায়ী, বন্ধুটিকে এন-ওয়ার্ড অর্থাৎ অশোভন বর্ণবাদী মন্তব্য করে। পাশে দাঁড়ানো এক তরুণ তখন দলটির পক্ষে যোগ দেয় কিন্তু তাকে ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ।
সে বলে, সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাস থেকে নেমে যেতে চায় কিন্তু ঠিক তখনি মহিলাটি তার ওপর নিষ্ঠুর হামলাটি চালায়।
মহিলাটি যখন তার শিকারকে নীচে ফেলে দেয় এবং উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকে, তখন চিৎকার শোনা যায়। তার দাবি, হামলায় তার বোনের চোখে আঘাত পেয়েছে এবং তার গালের হাঁড় ভেঙ্গে গেছে বলে তার আশংকা। সে পুলিশের কাছে একটি বিবৃতি প্রদান করে, যার ঠিক পরেই হামলাকারীকে চলে যেতে দেয়।
অশ্রুসিক্তভাবে জনৈক প্রত্যক্ষদর্শী এই বলে চিৎকার করে ওঠেন: সে… একটি শিশুমাত্র। কিন্তু মহিলার সঙ্গী অশ্রাব্য ভাষায় শিশুদের জবাব দেয় এবং তাদের হুমকী প্রদান করে। এরপর মহিলাটি অপর একজন দর্শকের দিকে তেড়ে যেতে চায় কিন্তু তার সঙ্গী তাকে টেনে ধরে তাকে নিবৃত্ত করে। শেষ পর্যন্ত জুটিটি হেঁটে চলে যায়। ভিকটিমের বন্ধুরা তখনো পেছন থেকে তাদের চেচাঁমেচি শুনতে পায়। ঐদিন সকালে আক্রান্তের বোন পরিচয়ে জনৈক মহিলা ফেইসবুকে লিখেন: আক্রান্তদের একজন আমার বোন। আমরা সবাই এএন্ডই-তে সারা রাত ছিলাম। তার চোখে জখম হয়েছে, তার মুখমন্ডলে ও ঘাড়ে আঁচড়ের দাগ। তাকে আবারো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কারণ ডাক্তারেরা তার চোখের কোটরের হাঁড় ভেঙ্গেছে বলে আশংকা করছেন। ঘটনাস্থলে সকল শিশু ছিলো ভীত, শংকিত। তবে এখন তারা ঠিক আছে।
সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশের জনৈক মুখপাত্র বলেন: শেফিল্ডের একক্লেসাল রোড এলাকায় গত ৪ ডিসেম্বর বুধবারে সংঘটিত বর্ণবাদ নিপীড়নের ঘটনাসমূহের বিষয়ে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে তদন্ত পূর্ণ পর্যালোচনার মধ্যেও রয়েছে। এতে পুনরায় পরিদর্শন ও সাক্ষীদের সাথে কথা বলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। অফিসাররা ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এব তাদেরকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রাখছেন। হামলায় আটককৃত জনৈক ৪০ বছর বয়সী মহিলাকে সতর্ক করা হয়, যখন ৪৪ বছর বয়সী পুরুষ লোকটি পুলিশ বেইলে রয়েছে, যেহেতু তদন্ত অব্যাহত আছে।