মুসলিম দাতব্য সংস্থা বার্মিংহামের গৃহহীনদের খাবার দিচ্ছে ক্রিসমাসে
‘পারপাস অব লাইফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাজ উদ্দীন বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সাহায্য করা তার বিশ্বোসের অংশ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বার্মিংহামের গৃহহীনদের মাঝে উদার আগন্তুকদের নিকট থেকে সহয়তার প্রয়োজন ক্রমশ: বাড়ছে। তাই ক্রিসমাস আমার সাথে সাথে ‘পারপাস অব লাইফ’ দাতব্য সংস্থা নগরীর যত্রতত্র শয়নকারী ও কষ্টের মধ্যে নিপতিতদের লাঞ্চ খাওয়ানোর একটি উৎসবের আয়োজন করে। এর প্রতিষ্ঠাতা সাজ উদ্দীন একজন মুসলিম। তিনি মনে করেন, যে ধর্মের লোক হোক না কেনো, অভাবগ্রস্তদের যতœ নেয়া তার জীবনের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আসলে তিনি একজন ভালো মুসলিম হতে পারবেন না, যারা রাস্তায় ক্রিসমাস উদযাপন করছে, যদি তিনি তাদের খেয়াল ও যত্ন না করেন।
সাজ রোববারের অনুষ্ঠানে বলেন, আমি লোকজনকে সাহায্য করতে অনেক বছর আগে দাতব্য সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করি। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, সে একজন মুসলিম নয় যে তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে পেট পুরে খায়। আমি গেটগুলো থেকে ফিরে যেতে চাইনে যখন সময় এসেছে, কারন আমি শুধুমাত্র আমার নিজের দিকেই খেয়াল রেখেছি। এক সময় বলা হতো, আমাদের জীবনে দু’টো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে- যেদিন আমরা জন্মগ্রহণ করি এবং যেদিন কেনো জন্মিলাম তা খুঁজে পাই। এর কোনটাই আকস্মিকভাবে ঘটে না।
আমার পরামর্শ হচ্ছে, প্রত্যেকের উচিত তাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে কাজ করান কারণ এটা তাদের নিজেদের। এই প্রকল্প হচ্ছে আপনাদের মাধ্যমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জনানোর পন্থা। আগষ্টে আমাদের একটি প্রকৃতপক্ষে সফল ডিনার হয়েছিলো এবং সেটা ছিলো আমাদের দ্বিতীয় অনুষ্ঠান। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক মাসে এর আয়োজনে সক্ষম হওয়া।
অনুষ্ঠানে একশ’ গৃহহীন লোক উপহার, খেলাধূলা ও মেকওভারসহ একটি উৎসবমুখর লাঞ্চ উপভোগ করে। এটা অনুষ্ঠিত হয় ক্যামডন স্ট্রিটের কাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল-এ, যেখানে গৃহহীনদের গরম খাবার প্রদান ও বিনামূল্যে চুল কাটার সুবিধা প্রদান করা হয়। প্রায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী, যাদের বয়স ৮ থেকে ৪০ বছর, তাদেরকে লাঞ্চ প্রদান করেন। এছাড়া তাদেরকে চাকুরী ও বাসস্থানের পরামর্শও প্রদান করা হয়। প্রকল্পটি লীডসে শুরু হয়। কিন্তু আগস্টে প্রথমবারের মতো বার্মিংহামে চলে আসে। প্রথম অনুষ্ঠানের পরিচিত মুখদের ৮ ডিসেম্বরের লাঞ্চে উপস্থিত হতে দেখা যায়।
৩৬ বছর বয়সী মার্টিন বার্ন বলেন, আগস্টের অনুষ্ঠানের পর থেকে তার জীবনে উন্নতি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে গৃহহীন হই এবং যখন আমি পারপাস অব লাইফ-এর গত অনুষ্ঠানে আসি, আমি ‘সালভেশন আর্মি’ থেকে প্রদত্ত বাসস্থানে অবস্থান করতে শুরু করি। আমার মায়ের মৃত্যুর পর আমি গৃহহীন হয়ে পড়ি। এরপর আমার ন্যানকে এবং ৬ বছর পর আমার সম্পর্কের ইতি ঘটে। এরপর আমার সৎমায়ের মৃত্যু হয়, যখন তার বয়স মাত্র ২১ বছর। এরপর শুধুই ড্রিংক, আর ড্রিংক….।
‘আমি এখন সাহায্য পেতে সক্ষম হচ্ছি এবং ঐ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি খুঁজে পেয়েছি। আমি এখন একটি বাসায় ভাগাভাগি করে বাস করছি।’ মার্টিন অনুষ্ঠানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য করেন। তিনি বলেন, প্রতিদান হিসেবে তিনি সেই কাজ ফিরিয়ে দিতে চান, যা তাকে প্রদান করা হয়েছে।
কমিউনিটির সদস্যরা, যারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবেন, তারাও এই অনুষ্ঠানে স্বাগত। চেমসলি উড থেকে আসা জনৈক বয়োবৃদ্ধ নারী বলেন, তিনি রেডিওতে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে শুনেছেন এবং ভেবেছিলেন, এটা একটি চমৎকার কিছু, যা তারা গৃহহীনদের জন্য করছেন।
অনুষ্ঠানে আসা-যাওয়ার জন্য লোকজন বিনা ভাড়ায় ট্যাক্সি পেতে সক্ষম হন, যা দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলাচল করে। লোকজনকে সাথে করে অতিরিক্ত খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্যেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে র্যাফেল, ড্রয়িং প্রতিযোগিতা ও তিন কোর্স লাঞ্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচী অন্তর্ভুক্ত ছিলো। অতিথিদের বিউটি ট্রিটমেন্ট ও চুল কাটার সেবাও প্রদান করা হয়। সিস্টার ভলান্টিয়ার রোকাইয়া (১৯) ও সাদিয়া খান (২২) শিশু স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে মেক-আপ স্টেশন পরিচালনা করে। এর কাছাকাছি চলে হাতে মেহেদী আঁকার কাজ।
‘পারপাস ফর লাইফ’-এর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবীরা ও তাদের পরিবার জানান, এটা তাদের দৃষ্টি উন্মোচন করেছে ঐসব লোকজনের ব্যাপারে, যারা গৃহহীন অবস্থায় সংগ্রাম করছে।
রোকাইয়া বলেন, ‘আমরা নার্ভাস ছিলাম যখন আমাদেরকে পরিবারসহ স্বেচ্ছাসেবা প্রদানের জন্য বলা হয়, কারণ এর আগে গৃহহীন লোকজনের জন্য কখনো কাজ করিনি। গৃহহীন লোকজনের ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে। বর্তমানে বার্মিংহামে এটা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় আছে।’
এটা এতো দুঃখজনক, কারণ যখন কেউ গৃহহীন হয়, তখন লোকজন তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। তবে আমরা এটা পরিবর্তনের জন্য এই সংস্থার সাথে কাজ করছি। গৃহ ও চাকুরী সংস্থান সংস্থা পিওরও (পিইউআর) এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ২৯ বছর ও তদুর্ধ বয়সী গৃহহীন লোকজনকে কাজে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে।