ঝড় পেরিয়ে ‘বন্দর’ দেখছে ব্রেক্সিট
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন খুবই সাধারণ এক সেস্নাগানে। আর তা হচ্ছে, ‘গেট ব্রেক্সিট ডান’ (ব্রেক্সিট সম্পন্ন কর)। আর এখন নির্বাচনে বরিসের কনজারভেটিভ দল যে বড় জয় পেয়েছে তাতে এটি স্পষ্ট যে, ব্রেক্সিটের পক্ষেই সমর্থনের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে। তাই ব্রেক্সিট এখন ঝড় পেরিয়ে বন্দরের আলো দেখছে।
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় হতাশ হয়ে পড়া ব্রিটেনবাসী এ জট কাটিয়ে দেশকে জানুয়ারির মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের করে আনার (ব্রেক্সিট) পক্ষে বরিসকে ‘ম্যান্ডেট’ দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা কোনো ‘যদি’ বা ‘কিন্তু’রও অবকাশ রাখেনি- এমনটিই দেখা গেছে ভোটের ফলে।
কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি বরিস জনসন ক্ষমতায় ফেরায় ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ হওয়া এখন কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং এমপিদের বিরোধিতার কারণে এ পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী বরিস আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন। এতে কাজও হয়েছে। ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণী নির্বাচনে বরিসের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তাই প্রতীয়মান হয়েছে। তার মানে তিনি খুব দ্রম্নতই ইইউয়ের সঙ্গে করা তার ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিতে পারবেন।
সেটি খুবই আশাব্যঞ্জক ব্যাপার। তবে হতাশা যে একেবারে দূর হয়ে গেল তাও নয়। কারণ, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে এলেও অর্থাৎ ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলেও এটি কেবল একটি প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে যুক্তরাজ্যকে পাড়ি দিতে হবে আরও দীর্ঘ পথ। বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে, বরিসের ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করাটা কয়েক বছরের একটি লম্বা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য বস্নক হয়ে ওঠা ইইউয়ে যুক্তরাজ্য প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে আছে। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই বরিস জনসনের সামনে থাকবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তি করার দুরূহ কাজ। বিশ্বে অথনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা এবং দেশের অখন্ডতা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জও তাকে মোকাবিলা করতে হবে। তার মানে ব্রেক্সিট শেষ হওয়া অনেক দূরের পথ।
যুক্তরাজ্যকে ১১ মাসের মধ্যেই ইইউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার অসাধ্য সাধন করতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আরেকটি বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এর ওপরই নির্ভর করবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এত গভীরের এ বিষয়গুলো তুলে ধরেনি।
একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেটি বরিস জনসন কীভাবে মাত্র ১১ মাসে করবেন, সে পরিকল্পনাও দেওয়া হয়নি। প্রচার চালানো হয়েছে হাল্কার ওপর দিয়ে। যার ফলে এখন ৩১ জানুয়ারিতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসতে পারার আশা জেগেছে।
কিন্তু ওই দিনটির পর থেকেই যুক্তরাজ্যের রূপান্তরকালীন সময় শুরু হবে। সে সময়ে যুক্তরাজ্যকে আলোচনার মধ্য দিয়ে ২৭টি ইইউ রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক ঠিক করে নিতে হবে। এখনকার বিধিমালার আওতায় এ প্রক্রিয়া চলতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টি এই রূপান্তরের জন্য ২০২০ সালের বেশি সময় না লাগানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে নির্বাচনে।
যদিও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এলে বরিস এ প্রক্রিয়ার জন্য ২০২০ সালের বেশি সময়ও নিতে পারবেন। সে ক্ষমতা তার থাকবে। এখন তিনি তার নতুন রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে কী করেন সেটিই দেখার বিষয়।