ব্রিটেনে জরুরী বিভাগে ভর্তি ও অপারেশনে অপেক্ষার রেকর্ড ভঙ্গ
প্রায় ৩০ শতাংশ রোগীকে ৪ ঘন্টারও বেশী অপেক্ষা করতে হয়েছে
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এন এইচ এস) এর জন্য নভেম্বর মাসটি ছিলো সবচেয়ে খারাপ মাসের মধ্যে একটি, কারণ এসময়ে ১০ হাজার রোগীকে হাসপাতালের শয্যা পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। হাসপাতালের ইমার্জেন্সী বিভাগগুলো এধরনের অভূতপূর্ব চাহিদার তথ্য প্রদান করেছে।
গত শুক্রবার প্রকাশিত নতুন উপাত্তে দেখা গেছে, নভেম্বর মাসে অধিকাংশ হাসপাতালের জরুরী বিভাগসমূহে (এএন্ডই) প্রায় ৩০ শতাংশ রোগীকে ৪ ঘন্টারও বেশী অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত বছরের একই মাসের চেয়ে এটা ১০ শতাংশ বেশী এবং রেকর্ড অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ তৎপরতা। প্রথমবারের মতো, ইংলান্ডের কোন প্রধান এএন্ডই ডিপার্টমেন্টে ৪ ঘন্টার অপেক্ষার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সকল এএন্ডই ডিপার্টমেন্ট জুড়ে ৮১ শতাংশ রোগীকে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এটা ৯৫ শতাংশের বিপরীতে একটি রেকর্ড পরিমান খারাপ তৎপরতা, যা ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে এপর্যন্ত কখনো ঘটেনি।
দৈনিক গড়পড়তা জরুরী চিকিৎসার জন্য রোগী ভর্তির সংখ্যা ১৮৬৫২-তে পৌঁছে, যা রেকর্ড অনুযায়ী দৈনিক হারের মধ্যে সর্বোচ্চ- পুরো মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫৯৫৫৬ জন। এই চাহিদা হাসপাতালের নিয়মিত সার্জারির কাজে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। অপেক্ষমাণ তালিকায় বর্তমান রোগীর সংখ্যা ৪৬ লাখ এবং মাত্র ৮৫ শতাংশ রোগী প্রেরণের ১৮ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। কিংস ফান্ড থিংক ট্যাংক অনুসারে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটা সবচেয়ে খারাপ সেবা তৎপরতা।
এএন্ডই-এর একটি শয্যার জন্য প্রায় ৪৯০০ রোগীকে ৪ ঘন্টারও বেশী সময় ট্রলিতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। যখন ১১১২ জন রোগীকে একটি শয্যার জন্য ১২ ঘন্টারও বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে, এটাও একটি রেকর্ডভঙ্গকারী সংখ্যা। এই উভয় সময়ের হিসাবে করা হয়েছে ঐ সময়ে যখন চিকিৎসকেরা রোগীকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন, তাই এএন্ডই-তে মোট অপেক্ষার সময় বাস্তবে আরো দীর্ঘ। রেকর্ড অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও এই মাসসমূহে সবচেয়ে ব্যস্ত ছিলো কারণ প্যারামেডিকদের ৭৪৩৮১৪টি ঘটনায় সাড়া দিতে হয়েছে। দৈনিক গড়ে ২৫০০০টি ঘটনা। শুধুমাত্র নভেম্বর মাসে আরো ৬৭০০টি জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ ঘটনায় তাদের সাড়া দিতে হয়েছে।
প্যারামেডিকদের হাসপাতালে দৈনিক ট্রিপ বা যাতায়াতের লেভেলও ছিলো সবচেয়ে উঁচু, প্রতিদিন ১৪৩৫৬ বার তাদের যাতায়াত করতে হয়েছে প্রতিবার ১জন রোগী নিয়ে। নভেম্বরের উপাত্তে মারাত্মক অবস্থা দেখা গেছে। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশের হাসপাতালগুলো ‘মেজর ইনসিডেন্ট’ অর্থাৎ ‘প্রধান ঘটনা’ ঘোষনা করেছে এবং এএন্ডই-তে রেকর্ড সংখ্যক সংখ্যার কথা জানিয়েছে। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে ২৮ এএন্ডইকে স্থান বদলাতে হয়েছে, যখন ৮টি হাসপাতালের জরুরী বিভাগগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ছিলো।
পাবলিক হেলথ্ ইংল্যান্ড ফ্লুতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধিতে সতর্কতা জারি করেছে এবং ফ্লুর রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সর্বশেষ ডাটা লক্ষ্য করে সরকার জিপিগণকে এন্টি-ভাইরাল ওষুধ প্রদান শুরুর জন্য অনুমতি প্রদান করেছে।
নাফিল্ড ট্রাস্ট হেলথ থিংক ট্যাংক-এর চীফ এক্সিকিউটিভ নাইজেল এডওয়ার্ডস বলেন, ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে বরিস জনসনের সরকারকে ইংলিশ এনএইচএস-এ আশু একটি মারাত্মক শীত ঋতু মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারকে তার প্রতিশ্রুত ৫০ হাজার নার্স দিতে হবে। এনএইচএস অবকাঠামোর জন্য আমাদের এক দীর্ঘমেয়াদী ফান্ডের প্রতিশ্রæতি আবশ্যক, যা এককালীন ঘোষনা নয়। এছাড়া আমাদেরকে ইংল্যান্ডের ব্যর্থ হয়ে পড়া সামাজিক সেবা ব্যবস্থাকে শেষ পর্যন্ত সংস্কার করতে হবে, যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের জনৈক মুখপাত্র বলেন, ‘এসব সংখ্যা থেকে দেখা যায় যে, দেশজুড়ে এন এইচএস টিমগুলো ক্রমবর্ধমান লোকজনকে রেকর্ড পরিমান পর্যায়ের সেবা প্রদান করছে, এটা এমন এক সময় যখন নরোভাইরাস ও ফ্লু গত বছরের চেয়ে বেশী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে স্থানীয় সেবাসমূহের ওপর।’
‘তাই এনএইচএস স্টাফদের ফ্লু মোকাবেলায় জনগণকে অতীতের চেয়ে অধিকতর সহায়তা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ।’ যদি তারা নরোভাইরাসে আক্রান্ত হন তবে তাদেরকে এনএইচএস ওয়েবসাইটে পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে, চিকিৎসার জরুরী প্রয়োজনে এনএইচএস ১১১ ফোন নম্বর কিংবা অনলাইন সার্ভি’স ব্যবহার করতে হবে এবং সামান্য অসুখ বিসুখের ক্ষেত্রে সেবার জন্য স্থানীয় ফার্মাসিস্টদের সাথে আলোচনা করতে হবে।