পাউন্ডের বিনিময় হার তিন বছরের সর্বোচ্চে
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির বিজয় চূড়ান্ত হওয়ায় ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মান বেড়ে প্রায় তিন বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। গতকাল ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের বিনিময় হার ৩ সেন্টের বেশি বেড়ে ১ ডলার ৩৫ সেন্টে দাঁড়াতে দেখা যায়, যা ২০১৮ সালের মে মাসের পর পাউন্ডের সর্বোচ্চ মান ও ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন। তবে পরে এ অর্জন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১ পাউন্ড প্রায় ১ ডলার ৩৪ সেন্টে লেনদেন হয়। ডলারের পাশাপাশি ইউরোর বিপরীতেও শক্তি অর্জন করেছে পাউন্ড। গতকাল ১ পাউন্ডের বিপরীতে ১ দশমিক ২০ ইউরো লেনদেন হতে দেখা যায়, যা ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ।
এদিকে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাটির এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। কোনো কোনো বিশ্লেষক পাউন্ডের মান বেড়ে ১ ডলার ৪০ সেন্ট পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছেন।
আর্থিক পরামর্শদাতা সংস্থা ডিভের গ্রুপের প্রধান নির্বাহী নাইজেল গ্রিন বলেন, কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন প্রাপ্তিতে বহু ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে গেছেন। এতে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মান পূর্ববর্তী পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শক্তিশালী লেনদেনের ফলে পাউন্ডের মান ১ ডলার ৩৮ সেন্ট, এমনকি ১ ডলার ৪০ সেন্ট পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের এ ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে ব্রেক্সিট নিয়ে যে সংসদীয় জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা দূর হবে। ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা যুক্তরাজ্যের ব্যবসা পরিবেশে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা তৈরির পাশাপাশি ব্রিটিশ অর্থনীতিকেই মেঘাচ্ছন্ন করে ফেলেছে।
নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীরা ব্রিটিশ স্টকের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠায় আবাসন নির্মাতা, ব্যাংক ও পরিষেবা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর তীব্রভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। টেইলর উইম্পি, বার্কলে গ্রুপ, পার্সিমন ও ব্যারেটের মতো কোম্পানি, যারা বিশৃঙ্খল ব্রেক্সিট আশঙ্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, গতকাল কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ১০ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
খুচরা এবং ভ্রমণ ও অবকাশ কোম্পানিগুলোর শেয়ারেরও চাহিদা বেড়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, নির্বাচনের নিশ্চিত ফলাফল ও তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অবসানের সম্ভাবনা ভোক্তা আস্থা ও ব্যয় শক্তিশালী করতে পারে।
লয়েডস ও রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডের (আরবিএস) মতো অঞ্চলকেন্দ্রিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। একই সময় ভার্জিন মানি ইউকের শেয়ারদর ১৭ শতাংশ বেড়ে এফটিএসই ২৫০ সূচকের শীর্ষে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ঋণদাতাগুলোর দুর্বল আয় শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
গতকাল এফটিএসই ১০০ সূচক ১১০ পয়েন্টের বেশি বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৭ হাজার ৩৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এফটিএসই ২৫০ সূচকেও শক্তিশালী ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। সূচকটি ৫ শতাংশের বেশি বা ১ হাজার পয়েন্টের বেশি বেড়ে ২ লাখ ১৯ হাজার ১০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
যুক্তরাজ্যের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী লবি গ্রুপ কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল এতদিন বিনিয়োগ আটকে রাখা কোম্পানিগুলোকে নিশ্চয়তা দিয়েছে।