ব্রিটেনের বেকারত্ব ১৯৭৫ এর পর সর্বনিম্নে
অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে ব্রিটেনের বেকারত্ব ১৯৭৫ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্নে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ওএনএস) প্রতিবেদনে। এ সময় দেশটির বেকার মানুষের সংখ্যা ১৩ হাজার কমে ১২ লাখ ৮১ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
ওএনএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উল্লিখিত সময়ে দেশটির কর্মসংস্থান বেড়ে ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, যা এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ। এ সময় ২৪ হাজার মানুষের চাকরি হওয়ায় দেশটির মোট কর্মসংস্থান দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখে। তবে বোনাস বাদ দিয়ে বার্ষিক হিসাবে অর্থনীতিটির মজুরি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সম্পর্কে ওএনএসের শ্রমবাজারের প্রধান ডেভিড ফ্রিম্যান বলেন, সর্বশেষ প্রান্তিকে পূর্বাভাসের তুলনায় আমাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। যদিও তা পূর্ববর্তী কয়েক প্রান্তিকের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য নয়। তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যানে নারীদের বেকারত্ব কমার হার রেকর্ড গড়েছে। ফ্রিম্যান বলেন, আমাদের কর্ম খালি অক্টোবর নিয়ে টানা ১০ মাস কমেছে। বর্তমানে আমাদের কর্ম খালি দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম আট লাখের নিম্নে পৌঁছেছে। অন্যদিকে প্রকৃত বিচারে দেশটিতে বেতন এখনো ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও গত কয়েক মাসে তা খানিকটা শ্লথ রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে দেশটিতে কর্ম খালি ছিল অনুমানিক ৭ লাখ ৯৪ হাজার, যা পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় ২০ হাজার কম। তবে তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৯ হাজার কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওএনএসের পরিসংখ্যানে।
অন্যদিকে এ সময় দেশটির নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান হার ছিল যথাক্রমে ৭২ ও ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ। নারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স সংস্কার সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাদের কর্মসংস্থান বাড়ার পেছনে কিছুটা সহায়তা করেছে। এর অর্থ হলো, বর্তমানে খুব কম নারীই ৬০ থেকে ৬৫ বয়সের মধ্যে অবসরে যান।
এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে কিছু শ্রমিককে অস্বাভাবিক রকমের বেশি বোনাস দেয়ায় সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধি সামান্য কমেছে। তবে চলতি বছরের অক্টোবরে বোনাস প্রদান প্রত্যাশিত মাত্রায় দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কর ও অন্য হিসাব বাদ দিয়ে চলতি বছরের অক্টোবরে সপ্তাহপ্রতি নিয়মিত গড় বেতন ছিল প্রায় ৫১০ পাউন্ড।
কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির চ্যান্সেলর সাজিদ জাভেদ বলেন, আমাদের চাকরি বাজারে মেধাবীদের যোগদান কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। গত বছরের তিনটি প্রান্তিকে আমাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে শুধু লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাইরে। তিনি বলেন, আমরা ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। তখন ব্রিটেনের মেধাবীদের জয়জয়কার দেখা যাবে। এছাড়া তখন কর্মসংস্থান বিশেষ কোনো অঞ্চলের পরিবর্তে সারা দেশে বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরসের প্রধান অর্থনীতিবিদ তেজ প্যারিখ বলেন, কর্মসংস্থান অব্যাহতভাবে বাড়াটা ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য সুখবর। তবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি ক্রমেই কমছে। এছাড়া অনিশ্চয়তা বাড়ায় ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ায় দেশটির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সতর্কতার সঙ্গে নতুন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ পরিস্থিতিতে কর্ম খালি হ্রাসের ধারা আগামী বছর অবধি অব্যাহত থাকবে।