ভারতের সরকারি স্কুলে মুসলিম মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ !
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারত, অথচ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেই ধর্ম পরিচয়ের কারণে পড়তে পারে না মুসলিম মেয়েরা। অথচ পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে সম্প্রীতির গর্ব করা হয়।
বর্ধমানের খোসবাগানের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে স্বনামধন্য স্কুলটিতে পড়তে পারে না এলাকারই মুসলিম ছাত্রীরা। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের হস্তক্ষেপেও ‘নিয়ম’ বদলাননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্ষুব্ধ কমিশন-প্রধান ইন্তাজ আলি শাহ শেষ পর্যন্ত চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাশ করার পরেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত একটি বিদ্যালয়ের এই আচরণ শুধু ধর্মনিরপেক্ষতারই পরিপন্থী নয়, অমানবিকও বটে৷ এমনটা কিছুতেই চলতে পারে না।
বর্ধমান হরিসভা হিন্দু গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। ইয়াসমিন বেগম নামের অভিভাবক জানান, তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রেও এমনই ঘটেছিল। বাড়ির কাছেই এই স্কুল, কিন্তু সেখানে ভর্তি করা যায়নি মেয়েকে।
মুসলিম মেয়েদের ভর্তি না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তনুজা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর বলেন, এত বছর ধরে এটাই চলে এসেছে। সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করা হলে, উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে। কে তার দায়িত্ব নেবে?’
শুধু মুসলিম ছাত্রীই নয়, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে এসএসসি পাশ করা একজন মুসলিম শিক্ষিকাকেও এই স্কুলে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি।
এক ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গত বছর জুলাইয়ে জেলা প্রশাসন, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান। জেলা প্রশাসনের তরফে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। মাস কয়েক আগে যখন বর্ধমান জেলা সফরে গিয়েছিল কমিশনের প্রতিনিধিদল, তখনও ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল তারা। এ বছরও স্থানীয় কয়েকটি মুসলিম পরিবারের তরফে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের মেয়েদের ভর্তি নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ‘নিয়ম’-এর দোহাই দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে রাজি হননি কর্তৃপক্ষ।
সংঘ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহ বলেন, ২০০৯-এ শিশুদের সার্বিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে যে আইন পাশ হয়, তার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিরই। শুধু তাই নয়, ওই স্কুলটি বিভিন্ন ভাবে সরকারি সাহায্য পায়। তার পরেও স্রেফ ধর্মের ভিত্তিতে কী ভাবে এ কাজ করতে পারে? মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এরই জবাব চেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, এ ভাবেই যদি চলে, তবে কীসের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, কীসের ধর্ম নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য?
কিন্তু কেন মুসলিম ছাত্রীদের ভর্তি নিতে নারাজ স্কুলটি? স্কুল সূ্ত্ের জানা যাচ্ছে, বর্ধমান রাজ পরিবারের কাছ থেকে জমি নিয়ে তৎকালীন হিন্দু মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতেই ১৯৩৪ সালে বিদ্যালয়টি চালু করেছিল হরিসভা। কালে কালে তা প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। বর্তমানে এই স্কুলে পড়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ছাত্রী৷ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী রয়েছেন ৪৩ জন। তনুজাদেবীর বক্তব্য, গোড়া থেকেই এই স্কুল শুধু হিন্দু মেয়েদের ভর্তি নিয়ে আসছে। তাই মুসলিম মেয়েদের নেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু বললে, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।