‘দেশত্যাগ করবো না, লড়াই চালিয়ে যাবো’

টরি জয়ের পরে অনেক ব্রিটিশ মুসলিম দেশ ত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন তবে আমি...

আমি একজন ব্রিটিশ মুসলিম এবং কোন রাজনীতিবিদের অধিকার নেই আমাকে এটা অনুভব করায় যে আমি সায়েমা ইকবাল নই। সত্যি বলতে কি? শুক্রবার লেবার পার্টির নির্বাচনী পরাজয়ের সংবাদ শেনার পর আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। লেবার পার্টির আরো অনেক সমর্থকের ন্যায় আমিও আসলেই ভেবেছি যে লেবার পার্টি বিজয়ী হবে, অকপট ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিধ্বনির কারনে। যা-ই হোক, মিথ্যা বিজয়ী হয়েছে নীতির ওপরে এবং বর্ণবাদ জয়ী হয়েছে ঐক্যের ওপরে। ‘ব্রেক্সিট করতে দাও’ এর জন্য অভিযান, যার শেকড় ইসলাম ভীতি, বর্ণবাদ ও ভীতি সৃষ্টির তেজারতির মধ্যে নিহিত, তা বরিস জনসন কে ম্যান্ডেট দিয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী ৫ বছরের জন্য। নির্বাচনের আগে মুসলমানরা সুস্পষ্ট ভাবেই এ উদ্বেগ অনুভব করেন এবং টরিদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও বিদ্যমান বিপদ আঁচ করতে পারেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্রিটিশ উগ্র ডানপন্থী মুসলিম বিরোধী ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (ইডিএল)-এর সাবেক নেতা টমি রবিনসন কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন, যা একধরনের ভীতিকে আরো বৃদ্ধি করেছে। টরিদের বিজয়ের পর অনেক ব্রিটিশ মুসলিম বিশেষ ভাবে জনসন সমর্থিত একটি প্রাইভেট এনএইচএস এর আশংকায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা দেশ ত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করেন।

বন্ধু বান্ধবেরা যারা দৃশ্যত মুসলিম যেমন- যারা হেডস্কার্ফ পরে, তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পরে এবং তাদের কন্যাদের নিয়েও এভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এ ধরণের শংকার বাস্তব কারণ ২০১৩ সালের পর পুলিশের কাছে ঘৃনাপ্রসূত অপরাধের অভিযোহ দ্বিগুনেরও বেশী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে প্রায় অর্ধেক (৪৭ শতাংশ) মুসলিমদের লক্ষ্য করে সংঘটিত ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রসূত (৩৫৩০টি)।
গত সোমবার মেট্রোতে একটি আর্টিকেলে এটাও প্রকাশিত হয় যে, ব্রিটিশ মুসলিমরা জনসনের বিজয়ে ভীত হয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাজ্য ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কিছু মুসলিমের জন্য বাস্তবতা ছিলো শুধুই অতিশয় ভীতি। উদ্বিগ্ন বন্ধুদের নিকট থেকে একথা শুনে হতাশ হতো যে, তারা আসলেই দেশ ত্যাগ করবে। এটা আমার বাড়ি। এ অবস্থায় আসতে আমার অনেকগুলো দিন লেগেছে, সাতটি দুঃখের ধাপ পেরিয়ে আমি এখানে উপনীত হয়েছি, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি দেশত্যাগ করবো না। আমি মানচেষ্টারে জন্মেছি, এখানেই বড়ো হয়েছি। আমি একজন গর্বিত মানকুনিয়ান এবং একজন ব্রিটিশ মুসলিম। এটা আমার বাড়ি। এটা আমার দুটি ছেলের এবং ব্রিটিশ মুসলিম ভবিষ্যত প্রজন্মদের বাড়ি। আমি দৌঁড়ে পালাবো না এবং কেউ কোন অধিকার নেই আমাকে এটা অনুভব করায় যে, এই স্থান আমার নয়। এ সবের পরিবর্তন হওয়া দরকার। অবশ্য এটা সহজ নয় এবং আমার জীবদ্দশায় এটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একসময় আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেনঃ একটি গাছকে কেটে টুকরো করে ফেলার জন্য আমাকে ৬ ঘন্টা সময় দাও এবং আমি আমার কুঠার ধারালো করার জন্য এর ৪ ঘন্টা ব্যয় করবো।’ সম্ভবতঃ আমি আগামীতে অনেক বছর ব্যয় করবো কুঠার ধারালো করার জন্য এবং আমার জন্য এটা সঠিক। মুসলিমরা জানে তাদের জীবনে চ্যালেঞ্জ আসবেই এবং আল্লাহ এমন কোন ভার চাপান না যা সে বহন করতে পারবে না। তাই যখন ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার ঢেউ প্রতিহত করণের কাজ চলবে, তখন যুক্তরাজ্যের ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৩ মুসলিমের অনেকে দেশ ছেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমার মত লাখ লাখ মুসলিম এখানে থেকে যাবে এবং একটি সাম্য ও সুন্দর সমাজ নিশ্চিত করতে লড়াই করবে । যাতে ব্রিটিশ মুসলিমদের অব্যাহতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। লড়াইটা কঠিনতর হতে পারে কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমার প্রতিশ্রæতি দৃঢ়তর হবে। এটা হতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে আমার মিত্র হবে কারা? যারা আমার সংগ্রামের অধিকারকে অস্বীকার করে- বরিস জনসন এবং টরি পার্টি আমার মিত্র নয়। যারা আমার যথাযথ সুরক্ষা অপসারণেকাজ করে, যখন আমি তা চাই অথচ তারা নিজেদের জন্য তা চায়, তারা আমার মিত্র নয়। যারা ইসলামোফোবিয়ার ঘৃণা প্রচারকারীদের সমর্থক করে, আশ্রয় দেয়, তারা আমার মিত্র নয়, তারা আমার মিত্র নয় যারা সংখ্যালঘুদের এ পরস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু নির্বাচনটি দেখিয়েছে, এমন অনেক আছে, যারা আমার মিত্র হবে, শিক্ষক ক্যাথি থেকে নিকট প্রতিবেশী গ্যারি নেভিল। আমি একা নই। রাজনীতি ক্ষমতার উৎস নয়, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ সুবিধা, যারা এগিয়ে আসবে কোনঠাসা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের জন্য কথা বলতে। এটা তখনই ঘটবে যদি আমরা এখানে থাকি এবং আমাদের কন্ঠ ব্যবহার করি। এবং আমি তা-ই করবো। যারা ব্রেক্সিট সম্পাদনের জন্য ভোট দিয়েছিলো বর্ণবাদী আদর্শের জন্য- এমনকি এনএইচএস এর খরচে-একজন ডাক্তার হিসেবে, তারা আমার ব্যথা আরো বৃদ্ধি করেছে। আমি বলি, ব্রিটিশ মূল্যবোধের জন্য মৌখিক কথাবার্তার চেয়ে বেশী কিছু করতে শুরু করুন এবং ইসলামোফোবিয়া স্বীকার করে এটাকে প্রতিহত করুন, যাতে ব্রিটিশ মুসলিমরা তাদের বাড়িঘরে নিরাপদে বোধ করে। কারণ আমি কোথাও যাচ্ছি না এবং অন্যান্য লাখ লাখ ব্রিটিশ মুসলিম কোথাও যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
লেখক: সায়েমা ইকবাল, একজন মা, একজন চিকিৎসক এবং একজন ব্রিটিশ মুসলিম মতামত লেখক। তিনি বর্তমানে নর্থ ম্যানচেস্টার জিপিতে কর্মরত ও প্রশিক্ষক। তিনি ইউকে এবং বিদেশে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button