সামনে পাঁচ চ্যালেঞ্জ

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নতুন গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নতুন গভর্নর হয়েছেন অ্যান্ড্রু বেইলি। ব্যাংকটির বর্তমান গভর্নর মার্ক কারনির পর কে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, তা নিয়ে দুই বছরেরও বেশি সময়ের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চূড়ান্ত হলো বেইলির নাম। আগামী বছরের ১৬ মার্চ থেকে তিনি কার্যক্রম শুরু করবেন।

কারনি ও বেইলির প্রোফাইলের তফাতগুলো বেশ স্পষ্ট। বেইলির জন্মস্থান ব্রিটেনের কাউন্টি লেস্টারশায়ারে। অন্যদিকে কারনি কানাডার নাগরিক। এদিকে গোল্ডম্যান স্যাকসের সাবেক ব্যাংকার হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বেইলির। এছাড়া তার ক্যারিয়ারের বড় অংশ কেটেছে থ্রেডনিডল স্ট্রিটের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়ে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে ‘প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি’র তত্ত্বাবধায়ক বডির প্রধান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আগামী আট বছরের নেতৃত্বের ভার পড়েছে অভিজ্ঞ বেইলির কাঁধে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাকে সামলাতে হবে নিম্নোক্ত প্রধান পাঁচটি চ্যালেঞ্জ।

ব্রেক্সিট: স্বাভাবিকভাবে ব্রেক্সিটের চাপ সামলানোই হবে বেইলির প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। তিনি অবশ্য ব্রাসেলসের সঙ্গে কথা বলার সূক্ষ্ম কৌশল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দরকষাকষির আর্ট সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। ব্রাসেলসের সঙ্গে তাকে যেকোনো উপায়ে এমনভাবে ব্রেক্সিট চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে, যাতে নিজেদের ট্রেজারির সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চত করা যায়।

এদিকে ব্রেক্সিট ইস্যুতে কোনো ধরনের প্রভাবহীন দায়িত্ব গ্রহণের ফলাফল অত্যন্ত শোচনীয় হতে পারে বলে বারবার সর্তক করেছেন বিদায়ী গভর্নর কারনি। নিজেদের হাতে প্রভাব বিস্তারের চাবি না রেখে ব্রেক্সিট করলে লন্ডনস্থ যাবতীয় আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর ওপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

হেজ তহবিল তদন্ত: হেজ তহবিলগুলো ব্যাংকটির অনেক কনফারেন্সে আড়ি পেতেছে বলে খবর বেরিয়ে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে সমস্যার মুখোমুখি করেছে। এসব কনফারেন্স থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তহবিলগুলো কয়েক লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বেইলির দায়িত্ব গ্রহণের আগেই এসব ঝামেলা চুকানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে জড়িত ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসবে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ নতুন গভর্নরের জন্য উল্টো সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষত ব্যাংকটির অপরেটিং প্রধান জোয়ান প্লেসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হলে, তা বেইলিকে বড় সমস্যায় ফেলতে পারে।

স্থরিব অর্থনীতি: বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেশ শ্লথ। এছাড়া তা ক্রমে কমছে। গত মাসে তা কমে ১ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির শ্লথ অবস্থায় দেশটির মজুরি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ায় ব্যাংকটির মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) সুদাহার বাড়াতে বাধ্য করতে পারে। এদিকে গত সপ্তাহের এমপিসির বৈঠকে নয় সদস্যের দুজন সুদহার দশমিক ৭৫ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।

জলবায়ু সংকট: দেশটির আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর তত্ত্বাবধান বডির প্রধান সারাহ ব্রিডেন চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের অনুরূপ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০ ট্রিলিয়ন সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সম্ভাব্য সংকট থেকে রেহাই পেতে ইনস্টিটিউশন ও কোম্পানিগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানো ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু সংকট থেকে বাঁচাতে এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

যোগাযোগ সমস্যা: সুদহারের বিষয়ে নতুন এক ধরনের ব্যবস্থার গোড়া পত্তন করেছিলেন কারনি। ‘ফরওয়ার্ড গাইডেন্স’ নামে পরিচিত ব্যবস্থাটির অধীনে ঋণ ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস করা যেত। বেকারত্ব ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো প্রয়োজন বলে ব্যবস্থাটির আলোকে কারনির প্রথম মন্তব্যে দেশটির মজুরি ব্যাপক হারে বেড়েছিল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিটিকে কিছুটা স্বাভাবিক করতে দরকার পড়েছিল উচ্চ সুদহার কর্তনের।

এদিকে ব্রিটেনের বর্তমান রেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাড়ানো সম্ভব হয়নি মূল্যস্ফীতি। এছাড়া সুদহার এখনো অতি নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। অর্থাৎ ফরওয়ার্ড গাইডেন্স পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত চৌকসভাবে এগোতে হবে নতুন গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলিকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button