পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘ প্রায় ৫২ বছর অপেক্ষায় থাকার পর অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। পদ্মা নদীর পাড়ে রূপপুর প্রকল্প এলাকা মাঠে বুধবার সকাল ১১টা ১৬ মিনিটে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সাড়ে ৪ বছরে বিদ্যুতের উত্পাদন ৯৭১৩ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করেছে, যা দ্বিগুণেরও বেশি। এতে রিজার্ভ বেড়েছে। আর বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নের কারণে দারিদ্র্য ৫৬ শতাংশ থেকে কমে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুত্ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুত্ উত্পাদন ১৬শ’ থেকে ৪ হাজার তিনশ’ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যা কমিয়ে ৩ হাজার দুইশ’ করেছিল। বিদ্যুত্ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি দরকার। সেদিকে মনোযোগী হয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ভারত, মালয়েশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। সে কথা প্রমাণ করেছি। ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। তার মধ্যে ১০ ভাগ আসবে পারমাণবিক বিদ্যুত্ থেকে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে ২০ লাখ সোলার প্লান্টের মাধ্যমে একশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হচ্ছে। ৩৪ লাখ গ্রাহক ২০টি গ্রিডে ৩ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন থেকে বিদ্যুত্ পাচ্ছে। এজন্য ৯ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। উল্লিখিত প্রকল্পগুলো ২০২০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্পে মানুষ ও পরিবেশের নিরাপত্তার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে মুক্তিকামী মানুষের পাশে হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য, সেই সঙ্গে আজও দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, রূপপুরে পৌঁছেই বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে বিদ্যুেকন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলাম এমপি, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের এমপি ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফিরোজ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পাবনা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য. আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ান ফেডারেশনের দ্য স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশনের (রোসাটম) ডিজি সারগে ভি কিরিযয়েনকো, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের কারিগরি বিভাগের ডিজি অসকার এথিনাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button