ব্রিটিশ বাংলাদেশী নাদিয়া হোসাইন পেলেন এমবিই খেতাব
ব্রিটেনকে একটি উদ্ভাবনী রন্ধন শিল্পীদের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য, দেশের কয়েকজন সবচেয়ে খ্যাতিমান শেফকে (বাবুর্চি) তাদের কাজের জন্য নববর্ষ ২০২০ সাল উপলক্ষে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিশেষ সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম নাদিয়া হোসেন (৩৫)। তাকে সম্প্রচার ও রন্ধন শিল্পে সেবার জন্য এমবিই খেতাব প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে নাদিয়া ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেইক অফ’ পুরস্কার লাভ করেন, যা তাকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়। যখন বেইকিং কর্মসূচীতে অংশ নেন, তখন ৩ সন্তানের জননী নাদিয়া হোসেইন বাড়িতে বসে থাকতেন। কিন্তু পুরস্কার লাভের পর তিনি একজন সফল ব্রডকাস্টিং ও ফুডরাইটিং পেশাজীবী হিসেবে আবির্ভূত হন। গৃহস্থালীতে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে মুসলিম কমিউনিটিতে তিনি নেতৃস্থানীয়ে ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেন শুরুতে একজন সমাজকর্মী হতে চেয়েছিলেন, যদিও তিনি রান্না-বান্না করতে ভালোবাসতেন ছোটবেলা থেকেই। যখন তার গর্ভে তৃতীয় সন্তান, তখন তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ডিগ্রী লাভের জন্য পড়াশোনা করেন। বাকী দু’টো সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছিলো তখন। স্বামী আবদাল তাকে ‘বেইক অফ’ এর জন্য আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করেন। শুরুতে তার আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিলো। কিন্তু তিনি তার ফিজি পপ চীজকেইক, একটি ফায়ারি স্নেইক চারমার বাস্কেট ও বাবলগাম ফ্লেভারযুক্ত প্যাস্ট্র্রি নানসহ সুস্বাদু সৃষ্টির মাধ্যমে বিচারকদ্বয় মেরী বেরী এবং পল হলিউডকে মুগ্ধ করতে সক্ষম হন। এসব কিছুই করেছেন তিনি তার ঐতিহ্যবাহী গৌরবময় হিজাব পরেই।
তার পুরস্কার বিজয় ও ট্রফি গ্রহণের বিষয়টি ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশীর দর্শক দেখেছেন। পরে তিনি মন্তব্য করেন যে, একজন বাদামী রংয়ের মুসলিম ধর্মাবম্বী নারী জনগণের দৃষ্টির সামনে চলে এসেছে, কারণ আমাদের মধ্যে এমনটি বেশী দৃষ্টিগোচর নয়।
২০১৮ সালে ‘রেডিও টাইমস ম্যাগাজিন’কে তিনি বলেন, তাই আমি জানি যে, আমি অনেক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছি এবং আমি জানি এটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষভাবে নারীদের জন্য।
‘বেইক অফ’ পুরস্কার জয়ের পর নাদিয়া বিবিসি ওয়ান-এ তার নিজস্ব টিভি সিরিজ নিয়ে আবির্ভূত হন। এটা হচ্ছে একটি ভ্রমণচারি রান্নার অনুষ্ঠান যাকে ‘ক্রনিকলস অভ নাদিয়া’ (নাদিয়ার দিনপঞ্জী) বলা হয়। পরে তিনি ‘নাদিয়া’স ব্রিটিশ ফুড এডভেঞ্চার, নাদিয়া’স ফ্যামিলি ফেভারিটস এবং টাইম টু ইট ইত্যাদি সিরিজগুলো উপস্থাপনা করেন।
তার নাদিয়া’স কিচেন টাইম টু ইট, এবং নাদিয়া’স ফ্যামিলি ফেভারিটস এর পাশাপাশি শিশুদের জন্য ‘বেইক মি এ স্টোরি’ এবং ‘মাই মনস্টার এন্ড মি’ এবং ‘দ্য সিক্রেট লাইভস অব দ্য আমির সিস্টারস’ সহ বেশ কিছু রন্ধন শিল্প বিষয়ক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার ১ হাজার ৯৭ জনকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৭২ শতাংশই পান কমিউনিটি সেবার স্বীকৃতি। সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে ৫৫৬ জনই নারী। আর ৯ দশমিক ১ শতাংশ বিএমই কমিউনিটির।