এক সপ্তাহের ঘটনাক্রম
জেনারেল সোলাইমানিকে যেভাবে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি বহরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুটি আমেরিকান এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন দিয়ে এই হামলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কমান্ডার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, গোপন তথ্যদাতা, ইলেক্ট্রনিক ইন্টারসেপ্ট, শত্রুপক্ষের অবস্থান শনাক্ত করার বিমান ও অন্যান্য নজরদারি ব্যবস্থার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
৯/১১ হামলার পর অস্ত্র হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় সেটা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। ট্রাম্প যেটাকে বাড়িয়ে নতুন মাত্রা দিয়েছেন।
মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া আইনি নথি থেকে দেখা গেছে, উপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই হোয়াইট হাউস কাউকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার নির্দেশ দিতে পারে।
ঘটনা বলছে, বিমানবন্দর থেকে গাড়ি বহর বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ধরে নেয়া যায়, ড্রোন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল। কেবল হামলার অপেক্ষায় ছিল।
সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান চালানোর মতো কোনো ড্রোন ঘাঁটি নেই। ইরাকে হামলা চালাতে তিনটি ড্রোন ঘাঁটি ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। সেগুলো হলো, কুয়েতের আলী আল-সালেম বিমান ঘাঁটি, কাতারের আল-উদায়েদ বিমান ঘাঁটি ও আরব আমিরাতের আল দাফরা বিমান ঘাঁটি।
যদি এই ড্রোন কুয়েতের সবচেয়ে কাছের বিমান ঘাঁটি থেকেও উড়ে আসে, তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে অন্তত ৫৭০ কিলোমিটার উড়তে হবে তাকে। এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন দিয়ে যেটা সম্ভব।
এই ড্রোনের পাল্লা এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার এবং এটির সর্বোচ্চ গতি ৪৮০ কিলোমিটার। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বড় অভিযানের জন্যই এই ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
২০১৯ সালের মার্চে ওবামা আমলের নীতি প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প। এতে যুদ্ধাঞ্চলের বাইরে কতজনকে ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করতে হতো।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর বিদেশি অভিযানের দায়িত্ব আল-কুদস ফোর্সের। ৬২ বছর বয়সী নিহত সোলাইমানি ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান। হামলায় বিপ্লবী গার্ডসের পাঁচ ও হাশেদের পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যা করতে চায় জানার পরেও একেবারে সাধারণ জীবন যাপন করতেন সোলাইমানি। তবে কড়া নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করতেন।
আমেরিকার এই পদক্ষেপকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা বলে মনে করা হচ্ছে। সোলাইমানির হত্যা বৈশ্বিক রাজনীতিতেই বড় একটি ঘটনা। কথা হচ্ছে, কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এমন হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কেন এ সময়টিকে বেছে নিল, যেখানে আগে অন্তত দুবার তাকে নাগালে পেয়েও ছাড় দিয়েছিল মার্কিন বাহিনী। আসুন দেখে নেয়া যাক এক সপ্তাহের ঘটনাক্রম।
মার্কিন পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, ঘটনাটির জের শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে রকেট হামলায় এক মার্কিন ঠিকাদারের প্রাণহানির পর। পুরো সপ্তাহের ঘটনাক্রম জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
২৭ ডিসেম্বর: সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাকে রকেট হামলায় এক মার্কিন ঠিকাদার নিহত হন। ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের সামরিক বাহিনীর বেশ ক’জন সদস্যও আহত হন।
২৯ ডিসেম্বর: যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায়। ওই হামলা হয় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাঁচটি স্থাপনায়। ওয়াশিংটনের ভাষ্যে, ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী মার্কিন সেনাদের আবাস ও কর্মস্থল মার্কিন-ইরাকি সামরিক স্থাপনায় হামলায় জড়িত।
৩১ ডিসেম্বর: বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে হামলা চালায় ইরান-সমর্থক বিক্ষোভকারীরা। তারা দূতাবাস লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। সেখানকার নিরাপত্তা চৌকিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাধে।
১ জানুয়ারি: ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি বার্তা দেয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন, ইরান-সমর্থিত বাহিনীগুলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী বাড়তি উসকানি দিতে পারে। যদি তারা এমনটি করে, তবে তাদের অনুশোচনায় পুড়তে হতে পারে।
৩ জানুয়ারি: যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর বিমান হামলায় ইরানের সবচেয়ে পরাক্রমশালী মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানির নিহত হওয়ার খবর দেয় পেন্টাগন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরানের ভবিষ্যৎ আক্রমণের পরিকল্পনা ভন্ডুল করা ছিল এ হামলার লক্ষ্য।