ব্রিটেনে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের শেষ ভরসায় আঘাত
ফায়সাল আইয়ুব: অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট, বিদেশী বন্দী ও ডিপোর্ট হওয়ার অপেক্ষায় থাকা লোকদের আপিলের অধিকার কমিয়ে নতুন একটি ইমিগ্রেশন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছেন হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট, বিদেশী অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট করার পরই কেবল আপিল শুনানী করা হবে। যে ১৭টি কারণে বর্তমানে আপিল করা যায় তার সংখ্যাও কমিয়ে ৪টি কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতি বছর যে ৬৮ হাজার আপিল আবেদন দাখিল হয় সেই সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশা করছে হোম অফিস। ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস থেকে ব্রিটেনকে বের করে নিয়ে আসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমেরন রোববার মোটামুটি স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করার পর হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে খসড়া নতুন এই আইনের বিষয়ে মুখ খুললেন। বিবিসি’র এন্ড্রু মার শো’ তে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সকল লোক ব্রিটেনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এবং যাদের এই দেশে থাকার অধিকার নেই তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে তিনি প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবেন।
ইউরোপীয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস ব্রিটেনের হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টের সাথে সন্নিবেশিত হওয়ায় কনজারভেটিভ দলের বেশ কিছু এমপি ধারাবাহিকভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। এই আইন থেকে কনজারভেটিভ দল ব্রিটেনকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসার কথা বিবেচনা করছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ পর্যন্ত এমনটা হতেও পারে। সরকারের মন্ত্রীরা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট, বিদেশী অপরাধী ও ঘৃণা প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিতে চেয়েও পারছেন না। ব্রিটেনের হিউম্যান রাইট অ্যাক্ট এবং ইউরোপীয়ান কনভেনশন অফ হিউম্যান রাইটসের সুযোগ নিয়ে এসকল ইমিগ্র্যান্ট আপিল প্রক্রিয়াকে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখছেন।
ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে বলেন, ওই আইনের সুযোগ নিয়ে জনগণের আস্থার জায়গাটিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে আর মাইগ্রেন্ট ও তাদের আইনজীবীরা মিলে সরকারের কয়েক শ’ মিলিয়ন পাউণ্ড অপচয় করছে। ভবিষ্যতে সরকারি তরফে কোনো ব্যক্তির আইনী প্রক্রিয়া শেষ করা হলে সাথে সাথেই তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে; এই পদ্ধতিটি ফ্রান্সে প্রচলিত আছে। আপিল করার অধিকার রাখা হয়েছে তবে তা করতে হবে নিজ দেশ থেকে। তবে প্রস্তাবিত আইনে কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি নিজ দেশে ফিরে গেলে তার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমন তথ্য থাকলে কিংবা দেশে ফিরে গেলে তাঁর মৃত্যুদন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ডিপোর্ট করা হবে না। কনজারভেটিভ পার্টির বার্ষিক কনফারেন্সে গত সোমবার হোম সেক্রেটারি খসড়া আইনটি সম্পর্কে বক্তব্য রাখার পর আগামী সপ্তাহে তা প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কনজারভেটিভ দলের যে সকল ভোটার ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি (ইউকিপ)-তে ভোট দিতে শুরু করেছে নতুন এই আইনটির কারণে তারা আবারও ফিরে আসবে বলে আশা করছেন কনজারভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চার এমপিরা। নতুন আইনটি কার্যকর হলে সরকারি আপিল আবেদনের হার ৬০ শতাংশ কমে আসবে এবং আগামী দশ বছরে সরকারের ২১৯ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে বলে আশা করছেন কনজারভেটিভ নেতারা।