যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বরচর এলাকার সিলেট ঢাকা মহাসড়কের পাশে জিএস ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৫ কোটি টাকার যৌথ বিনিয়োগ করে অপর প্রবাসী কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম।
গত ১০ই জানুয়ারী শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন হবিগঞ্জে জি এস ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন সম্পর্কিত তাদের পাটনার লন্ডন প্রবাসী গাজীউর রহমান গাজী সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবাসিদের টাকা আত্মসাত নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনকে মিথ্যা উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। এদিকে গাজীউর রহমান গাজী এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার বক্তব্য পাওয়া গেলে তা তুলে ধরা হবে।
প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যেসকল অভিযোগ করা হয় তা তুলে ধরা হল:
বাংলাদেশে বিনিয়োগকরে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে আমরা দুই প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু এবং আবুল কালাম “জিএস ব্রাদার্স” নামের একটি কোম্পানীতে ২০০৯ সালে বিনিয়োগ করি। কোম্পানীর অংশিদার, লন্ডনে বসবাসকারী গাজীউর রহমান (গাজী) সম্প্রতি আমাদের কোম্পানী সংশ্লিস্ট বিষয়াদী নিয়ে মিথ্যা তত্ত্বাদি, মিডিয়াতে উপস্থাপন করার জন্য তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
গাজী ও তার ভাই (সাইদুর রহমান), উনাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা জি এস ব্রাদার্স নামের ফিলিং স্টেশনের জমি তাদের নামে রেখে দেয়। যৌথ ব্যবসার টাকা দিয়ে নিজেদের নামে বিলাশ বহুল গাড়ী ক্রয় করে।
আমাদের না জানিয়ে ব্যক্তিগত খরছ যেমন বাসার কার্পেট, ড্রাইভারের বেতন,কাজের লোকের বেতন, নিজের আত্মীয়দের বেশি বেতন প্রদান করা ইত্যাদি অনিয়ম নিয়ে ২০০৯ সাল থেকেই আমাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
শুধু তাই নয়, চুক্তি অনুসারে প্রতি বছর লাভ ক্ষতির হিসাব ও তিন বছর অন্তর পরিচালক বদলানোর কথা থাকলেও বিগত দশ বছরে কোম্পানীর কোন লাভের অংশ আমাদের দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের সাথে বিরোধের সৃস্টি হলে লন্ডনের বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েক দফা আপোষ মিমাংশার চেস্টা করেও নিম্পত্তি হয়নি।
পরে আমরা বাধ্য হয়ে লন্ডন হাইকমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিস্ট মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ পাঠাই। এবং দেশে গিয়ে তাদের এলাকার সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ তিন আসনের সাংসদ এডভোকেট মো: আবু জাহিরের সরনাপন্ন হই।
সাংবাদিক বন্ধুগন,
পরবর্তীতে আমরা ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় এমপি হোস্টেলে মাননীয় সংসদ সদস্যের বাসভবনে এমপি সাহেবসহ ১৬জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা উভয় পক্ষের আলোচনা হয়। এতে আমরা বিগত ৮ বছরের লাভের অংশ হিসেবে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাওনা দাবী করি। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়িক অংশিদার গাজীর দেয়া হিসেব মতে লাভ্যাংশ হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
উক্ত বৈঠকে মাননীয় সাংসদ এডভোকেট মো: আবু জাহির বৈঠকের সভাপতি হিসেবে আমাদেরকে গাজীর দেয়া লাভ্যাংশ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা নেয়ার অনুরোধ করেন। আমরা সকল বিচারকদের সম্মান জানিয়ে এমপি সাহেবের প্রস্তাব মেনে নিয়ে আপোষ নামায় উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করি।
কিন্তু গাজী উক্ত টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করে। সে বলে টাকা আমাদের কাছে দিবে না এম পি সাহেবের কাছে দিবে তারপর উনার কাছ থেকে আপোষ নামা নিয়ে যাবে। পরবর্তিতে সে প্রথমে এমপি সাহেবের কাছে পুরো টাকা না দিয়ে ৫০লাখ টাকা দিয়ে আসে। এবং বাকী টাকা এক/দুই মাসের মধ্যে দিবে বলে জানায়।
এমপি সাহেব তখন আমাদেরকে উক্ত টাকা নেয়ার জন্য বললে আমরা এই টাকা না নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকা দিতে এমপি সাহেবকে অনুরোধ করি।
এর ৫ মাস পর এমপি সাহেব লন্ডন সফরে আসলে বাকি টাকা না দিয়ে গাজী, এমপি সাহেবের কাছ থেকে আপোষ নামা নিয়ে যাওয়ার জন্য আবারও টালবাহানা শুরু করে। তখন আমরা এমপি সাহেবকে বলি যেহেতু গাজী এক দুই মাসের কথা বলে ৯ মাস পার করেছে, সেহেতু আপনি তার কাছ থেকে বাকী টাকার একটি চেক নিয়ে নেন।
পরবর্তীতে এম পি সাহেব সেই চেক ব্যাংকে জমা রাখলে সেটা (চেক) ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়। এরপরবর্তীতে মাননীয় সাংসদ আমাদের অনুরোধ করলে বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমাদের পাওনা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করার হীন উদ্দেশ্যে গাজী তার নিজ এলাকার সাংসদ সদস্য এবং তার পরিবারের সদস্যসহ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। এ ব্যাপারে আমরা দেশে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় আবেদন করি। শুধু তাই নয় ২০১৩ সালে আমাদের অজান্তে অধিক মুনাফার জন্য ফিলিং স্টেশনে মিটার টেম্পারিং করে ৫৮ লাখ টাকা জরিমান প্রদান করেছে সে। এ হীন কর্মকান্ডের কথা তারা সরকারের দপ্তরে অঙ্গীকার নামায় স্বীকারও করেছে।
ইতিমধ্যে জালালাবাদ গ্যাস আমাদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে। এখন আমাদের সন্দেহ হচ্ছে এ নিয়ে যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই আপনাদের মাধ্যমে যথাযত কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের বিনীত অনুরুধ যাহাতে আর কোন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন আমরা না হই, বিরুধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখা হয়।
আমরা প্রবাসীরা হয়রানির স্বীকার হয়ে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা এও জানি, মাননীয় প্রধামন্ত্রী বিদেশীদের দেশে বিনিয়োগ করতে সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আর এই সরকার বিদেশীদের বিনোগের ক্ষেত্রে বেশ উদার। তারপরও এখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য জড়িত থাকা সত্ত্বেও আমরা এই বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি কিছু সংখ্যক অর্থলোভী রাজনীতিবিদের কারনে।
সম্মানীত সাংবাদিকবৃন্দ,
যেহেতু তারা সালিশ মানে নাই, ৩ মাসের কথা বলে ২ বছর পার করে আমাদের টাকা আত্মসাত করে বসে আছে। তাই আমাদের ন্যায্য পাওনা টাকা ফেরত পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংসদসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা সরকারের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে বিগত ১০ বছরের গ্যাস বিল দেখে আমাদের লাভের অংশ উদ্ধারের দাবী করছি। অন্যতায় প্রবাসীরা আর দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।