স্থায়ী অভিবাসন: সেরা আকর্ষণ এখনো যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে স্থায়ী অভিবাসনের সুযোগ নিচ্ছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গত এক দশকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশী অভিবাসন ভিসা পেয়েছেন। এদের কেউ গেছেন আত্মীয়-পরিজনের সূত্র ধরে। কেউ গেছেন নতুন চাকরি নিয়ে, আবার কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে। এর বাইরে বিনিয়োগকারী কোটায়ও কিছু ব্যবসায়ী দেশ দুটিতে স্থায়ী আবাস গড়ছেন। উন্নত জীবনের প্রলোভনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে পাশ্চাত্যের এ দুটি দেশ এখনো সেরা আকর্ষণ হলেও সেখানে গিয়ে নিজেদের খুব বেশি উন্নত করতে পারছেন না তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের তথ্য বলছে, এশিয়ার অন্য দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীর তুলনায় খারাপ অবস্থায়ই আছেন বাংলাদেশীরা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন এশীয়র গড় বার্ষিক আয় যেখানে ৩৫ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার, সেখানে একজন বাংলাদেশীর গড় বার্ষিক আয় ২৫ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেখানে ১২ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশীদের মধ্যে এ হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটিতে শতকরা ৫৭ ভাগ এশীয়র নিজস্ব বাড়ি থাকলেও বাংলাদেশীর মধ্যে বাড়ির মালিকানার হার ৪০ শতাংশ। অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকার পরও প্রতি বছর বাড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশীর হার।
পারিবারিক সূত্র, চাকরি ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ কোটায়ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী অভিবাসনের সুযোগ নিচ্ছেন দেশের কিছু ব্যবসায়ী। যদিও সেখানে বিনিয়োগ করে কেউ ব্যবসায়িকভাবে বড় সাফল্য পেয়েছেন এমন নজির এখনো চোখে পড়েনি। মূলত স্থায়ী অভিবাসনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করছেন এসব ব্যবসায়ী। কিন্তু তাদের মূল ব্যবসা এখনো বাংলাদেশেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পর পালিয়ে থাকার নিরাপদ উপায় হিসেবেও অভিবাসী হচ্ছেন।
বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসনের সুযোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে এমপ্লয়মেন্ট বেজড (ইবি) কর্মসূচি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ কর্মসূচির আওতায় ৫ লাখ ডলার বা ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি বিনিয়োগ করলেই মিলত মার্কিন ভিসা। গত বছর বিনিয়োগের এ সীমা ৯ লাখ ডলারে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও দেশটির যেসব অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, সেসব স্থানে এখনো আগের সীমা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা যায়।
ইউএস সিটিজেন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইবি-৫ ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগ করে ৪৬ জন বাংলাদেশী আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১১ জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে চারজন ও ২০১৮ সালে নয়জন বাংলাদেশী বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ইবি-৫ কর্মসূচির আওতায় দেশটিতে বিনিয়োগ করেছেন ২১ জন বাংলাদেশী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীরাই মূলত বিনিয়োগ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন দেশে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিয়ে থাকেন। এর বাইরেও অনেকে আছেন, অবৈধ উপায়ে যারা বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। আবার কেউ আছেন ঋণখেলাপি, তারাও বিনিয়োগ কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় কোনো দেশে আবাস গড়ছেন।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপার্জিত অর্থে বিদেশে সম্পদ কিনতে পারেন। এটিও বিনিয়োগের তথ্যে প্রতিফলিত হতে পারে। তবে দেশে ঋণখেলাপিদের পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত ও তা উদ্ধারে বিএফআইইউ কাজ করছে। এছাড়া বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের বিষয়েও আমাদের নজরদারি রয়েছে।
স্থায়ী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পর পছন্দের দেশ যুক্তরাজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারী হিসেবে দেশটিতে অভিবাসনের হার বেড়েছে। দেশটির অভিবাসন বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে ‘গোল্ডেন ভিসা’ নামে পরিচিত বিনিয়োগ ভিসায় বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫৫ জন যুক্তরাজ্যে বসতি গড়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন। যদিও সংখ্যাটি খুবই নগণ্য।
জানা গেছে, ‘টিয়ার-ওয়ান ইনভেস্টর’ শ্রেণীর এ ভিসার জন্য যুক্তরাজ্যে ২০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ২২ কোটি টাকা) বিনিয়োগের শর্ত পূরণ করতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহির্ভূত দেশ থেকে মোটা অংকের বিনিয়োগ আকর্ষণে স্থায়ী বসবাস সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে বিনিয়োগ ভিসা চালু করে যুক্তরাজ্য। ‘টিয়ার-ওয়ান ইনভেস্টর ভিসা’ নামে এটি পরিচিত। নিয়ম অনুযায়ী ২০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগের জন্য ২০ লাখ পাউন্ড প্রস্তুত রয়েছে এমনটি দেখাতে পারলে প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ বছরের ভিসা দেয়া হয়। পাঁচ বছর পর স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারেন ওইসব বিদেশী। অন্যদিকে দুই বছরের মধ্যে স্থায়ী ভিসার আবেদন করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে ১ কোটি পাউন্ড। আর তিন বছরের মধ্যে স্থায়ী ভিসার আবেদন করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে ৫০ লাখ পাউন্ড। -তাসনিম মহসিন