গাজায় যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক দলের প্রথম কলোরেক্টাল সার্জিক্যাল ট্রেনিং প্রদান

যুক্তরাজ্যের রয়াল কলেজ অব সার্জনস্-এর সদস্যবৃন্দসহ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ৫ জন চিকিৎসক মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস্ (এমএপি)-এর সাথে গাজা সফর করেন। ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে শল্য চিকিৎসা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে তারা এ সফর করেন। একজন নার্স ও ৪ জন সার্জন সমন্বয়ে গঠিত সফররত পেশাজীবীরা কলোরেক্টাল সার্জিক্যাল ট্রেনিং অর্থাৎ মলাশয়ের অপারেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, পাকস্থলীর রোগ এবং গাজার দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার মলাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায় সহায়তা প্রদান করেন। গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফার একটি আউট প্যাশেন্ট ক্লিনিকে তাদের সপ্তাহটি শুরু হয়।

সফরকারী দল কলোন কিংবা রেক্টাল ক্যান্সারসহ ১৩ জন রোগীর শল্য চিকিৎসার ব্যাপারে মূল্যায়ন করেন। গাজার ৫টি প্রধান হাসপাতাল থেকে ১৩ জন সার্জন তাদের সাথে যোগ দেন। হাসপাতালগুলো হচ্ছে আল শিফা, আল আকসা, নাসের, ইন্দোনেশীয় এবং ইউরোপীয় গাজা হসপিটাল। এই সার্জনগণ রোগীদের ডায়োগনোসিস বা রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন। সফররত চিকিৎসকগণ স্থানীয় সার্জনদের নিয়ে ৩ দিন ব্যাপী ১০টি কলোরেক্টাল সার্জারী সম্পন্ন করেন। প্রথম ২দিন স্থানীয় টিমকে থিয়েটারে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর তৃতীয় দিন তারা নিজেরাই সফররত চিকিৎসকদের সহায়তায় অপারেশন সম্পন্ন করেন।
সফরত মেডিক্যাল টিমের শেখানো নতুন সার্জিক্যাল টেকনিকগুলোর মধ্যে ছিলো লেপারোস্কোপিক হেমিকোলেকটমি। এটা হচ্ছে এমন এক ধরণের অপারেশন যা কলোনের (মলাশয়ের) ক্ষতিগ্রস্ত অংশসমূহ অপসারণপূর্বক কলোন ক্যান্সার ও পাকস্থলীর রোগের চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে পাকস্থলীতে কয়েকটি ক্ষুদ্র গর্ত করে এগুলোর মধ্যে দিয়ে একটি ভিডিও ক্যামেরা (লেপারোস্কোপ) ও সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট অর্থাৎ শল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম ঢোকানো হয়। লেপারোস্কোপিক সার্জারির ক্ষেত্রে রোগীর আরোগ্য হওয়ার সময় হ্রাস এবং অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক ক্ষতচিহ্ন বা দাগ ক্ষুদ্রতর থাকাসহ অনেক উপকারিতা রয়েছে। সম্ভব বেশী সংখ্যক স্থানীয় সার্জনদের মধ্যে নতুন দক্ষতা পৌছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তিনটি সার্জারি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় একটি মাস্টার ক্লাসের অংশ হিসেবে, যাতে ৪০ জন স্থানীয় সার্জন ও ১০ জন নার্স উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকটি সার্জারি বা অপারেশন শেষে সফররত নার্সেরা সার্জনদের সাথে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ঘুরে রোগীদের আরোগ্যের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন, পরীক্ষা করেন।
এভাবে সারা সপ্তাহ ব্যাপী তারা স্থানীয় নার্সদের নিয়ে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখেন। এছাড়া এসময় ‘স্টোমা কেয়ার’ নার্সিংয়ের জন্য আল শিফা হসপিটালের ক্ষমতার মূল্যায়নেরও একটি সুযোগ সৃষ্টি হয় ঐসব রোগীদের সহায়তায় যাদের কলোস্টমি বা ইলিয়স্টোমি হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কলোরেক্টাল ক্যান্সার স্পেশিয়ালিষ্ট নার্সের সাথে সময় কাটানো শেষে স্থানীয় চিকিৎসক দল স্টোমা কেয়ার বিষয়ে অধিকতর প্রশিক্ষণ গ্রহণে অত্যন্ত আগ্রহ প্রদর্শন করেন।
চতুর্থ দিবসে একটি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ৮০ জন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীর উদ্দেশ্যে মলাশয় ক্যান্সার বিষয়ক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে সার্জন ও নার্স ছাড়াও হাসপাতাল সমূহের পরিচালক ডঃ আবদুল সালাম সাববাহ উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গাজায় প্রথম মলাশয় সংক্রান্ত শল্য চিকিৎসক মিশনকে স্বাগত জানান।
প্রথম দিবসে গাজা ত্যাগের পূর্বে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চিকিৎসক দল গাজায় এমএপি’র টিমের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এতে মিশনের পর্যালোচনা ও গাজায় কলোরেক্টাল সার্জারির ক্ষেত্রে একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি টিম গঠনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button