এলএমসিতে মুসলিম কানেক্ট শীর্ষক নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট : কমিউনিটির উন্নয়ন কাজে মুসলিম পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান

LMCলন্ডন মুসলিম সেন্টার ও পিআরআইডিয়া-র যৌথ উদ্যোগে মুসলিম পেশাজীবীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট -মুসলিম কানেক্ট। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় এলএমসির প্রথম তলায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিপূল সংখ্যক বাংলাদেশী পেশাজীবীর সস্মিলন ঘটে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মুসলিম পেশাজীবীরা বৃটিশ সমাজে বিভিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছেন। তবে কমিউনিটির সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আশাতীত নয়। মুসলিম কানেক্ট কমিউনিটি ও পেশাজীবীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন করতে চায়, যাতে তারা কমিউনিটিতে অবদান রাখতে পারেন। বক্তারা মুসলিম পেশাজীবীদেরকে নিজেদের কমিউনিটির উন্নয়নে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের আহবান জানান।
তারা বলেন, মুসলিম পেশাজীবীদেরকে কমিউনিটির সাথে যুক্ত করার মধ্যদিয়ে অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব।
মুসলিম এইড-এর কর্মকর্তা সুলতান আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ইসলামিক হোম বিলডিং বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডণ মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান, রেইজ অব এক্সট্রিমিজম বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টিভি প্রেজেন্টার আজমাল মাসরুর, পিআরআইডিয়া কানেক্টিং মুসলিমস বিষয়ে বক্তব্য রাখেন পিআরআইডিয়ার চেয়ারম্যান হাসান সেলিম, ইস্ট লন্ডন মস্ক সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন দেলওয়ার হোসেইন খান, মুসলিম লিডারশীপ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন এইচএসবিসি আমানার প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইকবাল খান, মুসলিমস ইন কনটেম্পরারী ওয়ার্লড বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যামব্রিজ মুসিলম কলেজের ডীন, লেখক ও গবেষক আবদাল হাকিম মুরাদ ও মুসলিমস ইন এনগেজমেন্ট দ্য ওয়েস্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সিটিজেন্স ইউকের নির্বাহী পরিচালক নেইল জেমসন।
শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আল-আজহার ইউনিভার্সির ছাত্র আশিকুর রহমান।  ড: মুহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, সর্বপ্রথম আমাদেরকে ঘরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ ঘর প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে আমরা শান্তিপুর্ণ সমাজ, উম্মাহ ও দেশ গড়তে পারি। শান্তিপুর্ণ ঘর গড়তে মূল ভুমিকা রাখতে পারেন পিতা-মাতা। তারা যদি প্রকৃত রুল মডেল হতে পারেন তাহলে সন্তানরাও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে- তাতে সন্দেহ নেই। এজন্য পিতা-মাতাকেই অগ্রনী ভুমিকা রাখতে হবে।
মেয়র লুতফুর রহমান বলেন, অনেকেই বলে থাকেন আমাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়। আমি এমন মতের সাথে একমত নয়। আমি মনে করি, আমাদেরকে আরো বেশী করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। যারা রাজনীতি করেন তাদেরকে প্রকৃত অর্থে এবং সততার সাথে মানুষের সেবা করা উচিত। তিনি তাঁর রাজনীতিতে জড়ানো ও অর্জন সম্পর্কে সংক্ষেপে বলেন, একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে আমার রাজনীতির সুচনা। ২০০৮ সালে আমি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লীডার নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে জনগন আমাকে নির্বাহী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। মেয়র নির্বাচিত হতে পারায় অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারছি। আমি মনে করি আমাদের রাজনীতি হওয়া উচিত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহনের লক্ষ্যে। এ প্রসংগে মেয়র বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেইথ গ্রান্ট চালুর কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো সরকারের টুল হওয়া উচিত নয় বরং সরকারই রাজনীতিকদের টুল হওয়া উচিত।  দেলওয়ার হোসেইন খান ইস্ট লন্ডন মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯২৮ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিলো আজকের ইস্ট লন্ডন মসজিদের। প্রায় ১০২ বছর পর মসজিদটি এখন বিশাল রূপ লাভ করেছে। ১০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে লন্ডন মুসলিম সেন্টার। আর সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৯ তলা বিশিষ্ট মারিয়াম সেন্টার। ইস্ট লন্ডন মসজিদ বিভিন্নভাবে কমিউনিটির সেবা করে যাচ্চেছ। একটি শিশুর জন্মের পর তার খতনা করানো থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিতসা, বিবাহ এবং সর্বোপরী মৃত্যুর পর ফিউনারেল সার্ভিসের মাধ্যমে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে থাকে।
আজমাল মাসরুর রেইজ অব এক্সট্রিমিজম বিষয়ে বক্তৃতা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের চরমপন্থা অবলমবনের ১০টি কারণ উল্লেখ করেন। কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্চেছ- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা অনেক মুসলমানকে কস্ট দিয়ে থাকে। এতে করে অনেকে ক্ষোভ থেকে চরম পর্যায়ের আচরনের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। তাছাড়া মুসলমানরা ভালো করছে এটা দেখে অন্যের মধ্যে হিংসার উদ্রেক হয়। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনেও অনেকে না বুঝে ইসলামবিরোধী অনেক কিছু করে বসেন। তিনি এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানান।
হাসান সেলিম বলেন, আজ থেকে ১৯ বছর আগে তাঁর মালিকানাধীন ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান প্রাইড অব এশিয়ার যাত্রা শুরু হয়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কমিউনিটির মানুষ প্রাইড অব এশিয়াকে অনেক কিছুই দিয়েছে। এখন কমিউনিটিকে কিছু দেয়ার পালা। কমিউনিটির জন্য কিছু করার সেই তাগিদ থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন পিআরআইডিয়া। ইতোমধ্যে পিআরআইডিয়া বেশ কিছু কাজ করেছে। ভবিষ্যতে এই সংগঠন কমিউনিটির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button