কিয়ারার আঘাতে লণ্ডভণ্ড ব্রিটেন
ব্রিটেনে ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে ঝড়ো হাওয়া
ঝড়ের কারণে সড়ক, রেল, সাগরপথ এবং আকাশপথেও ভ্রমণ ব্যাহত
কয়েকদিন ধরেই ব্রিটেন প্রস্তুতি নিচ্ছিল একটি ঝড়ের জন্য। কিয়ারা নামের ঝড়টির কারণে লন্ডনের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল ব্রিটেনের আবহাওয়া দফতর সূত্রে। শহরজুড়ে জারি করা হয়েছিল সতর্কতা। আজ রোববার গত এক দশকের মধ্যে সব থেকে বড় ঝড়ের প্রভাবে লন্ডনের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে ও বিপর্যস্ত হয়েছে যাতায়াত। কিয়ারার প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঝড়ে গাছ উপড়ে গেলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের কারণে সড়ক, রেল, সাগরপথ এবং আকাশপথেও ভ্রমণ ব্যাহত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বহু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। কয়েকটি রেল প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের এ সময় ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে। আর ভ্রমণ করলেও সংশ্লিষ্ট স্থানের রেলের যোগাযোগ ঠিক আছে কিনা আগে থেকে জেনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শনিবার ও রবিবার স্বাভাবিক ভাবেই সপ্তাহান্তের দিন। ছুটির আমেজ থাকে শহর জুড়ে। কিন্তু আচমকা ওই ঝড়ের ফলে সাধারণ মানুষ ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে। জানা গেছে ওই ঝড়ের নাম কিয়ারা।
এছাড়া প্রচন্ড বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস ও বজ্রপাতের কারণে বিভিন্ন কর্মসূচী স্থগিত বা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নরফোকের সানড্রিংহামের চার্চে রানীর নির্ধারিত প্রার্থনা করার কথা। চার্চে রানীর আগমন মানেই ওই এলাকায় প্রচুর জনসমাগম। জন নিরাপত্তার স্বার্থে আবহাওয়ার কারণে রানীর সফর বাতিল করা হয়েছে। রানীর বাড়ির পাশে হাইড পার্ক ও রিজেন্ট পার্কসহ লন্ডনের আটটি পার্ক রোববার বন্ধ রাখা হয় প্রতিকূল আবজাওয়ার কারনে। আবহাওয়ার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নারীদের ছয় জাতির ফুটবল। লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ১০ কিলোমিটার উইন্টার রান, সেটাও বাতিল করা হয়েছে আবহাওয়ার কারণে। এছাড়া নারীদের ফুটবলের সুপার লীগের চারটি ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় ২০ হাজার দর্শক উপভোগ করার কথা ছিল। প্রিমিয়ার লিগের সূচি অনুযায়ী আজ রোববার মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল ম্যানচেস্টার সিটি ও ওয়েস্ট হ্যামের। কিন্তু কিয়ারা নামক ঝড়ের কারণে মাঠে গড়ায়নি ম্যাচটি। ম্যানসিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থক ও কর্মীদের সুরক্ষার কথা সবার আগে বিবেচনায় নেয়। চরম এবং ক্রমবর্ধমান আবহাওয়ার কারণে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আজকের ম্যাচটি স্থগিত করা হয়েছে।’
ইতিমধ্যেই উত্তর পশ্চিমাংশে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেখানকার আবহাওয়া দফতর সূত্রে। এছাড়াও ব্যহত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা। আবহাওয়া দফতরের প্রধান ফ্রাঙ্ক সউন্দের জানিয়েছেন, ঝড়ের গতিবেগ তীব্র হওয়ার কারণে ব্যহত হচ্ছে শহরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি। এছাড়াও সাধারণ মানুষদের যে কোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার বিকেল থেকেই উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দান ইংল্যান্ডে ঝড়ের গতিবেগ বাড়তে থাকে। রবিবার সকাল থেকে গোটা লন্ডনে এই ঝড় তার প্রভাব বিস্তার করে। দেশের অভ্যন্তরে ৫০-১০০ এমপিএইচ গতিবেগে এই ঝড় চলতে থাকে। সমুদ্রে যাওয়ার আগে চালকদের সাবধান করা হয়েছে। পাশাপাশি গতি কমিয়ে চালানোর জন্য বলা হয়েছে। কেননা ঝড়ের প্রভাবে শহর জুড়ে বৃষ্টিপাট ও বরফ পড়তে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এছাড়াও ছুটির দিন উপলক্ষে অন্যান্য দিন অপেক্ষা ট্র্যাফিকের উপরে চাপ বেশী থাকে। সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।