লন্ডনবাসীদের ইইউ’র নাগরিকত্ব রাখার পক্ষে বললেন লন্ডন মেয়র

লন্ডন মেয়র সাদিক খান বলেছেন, লন্ডনের যে সব বাসিন্দা ইউরোপে বসবাস ও কাজ করতে চান তাদেরকে ইইউ-এর এসোসিয়েট সিটিজেনশীপ অর্থাৎ সহযোগী নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়া উচিত। সম্প্রতি সাদিক খান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে লেখা এক চিঠিতে এই ধারনার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজধানী লন্ডন ও ইইউ-এর মধ্যে সংযোগ রক্ষার চেষ্ঠায় ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাত করতে ব্রাসেলসে যান। এসোসিয়েট সিটিজেনশীপ ব্রিটিশ নাগরিকদের ইউরোপে কাজ ও বসবাসের অধিকার সুযোগ দেবে। এটা তাদেরকে যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে স্বাধীনভাবে গনমাগমনের সুযোগও দেবে। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, যেসব ব্রিটিশ নাগরিক ও এসোসিয়েট সিটিজেনশীপের লক্ষ্যে আবেদনের জন্য অর্থ পরিশোধ করবে তারা একটি নতুন পাসপোর্ট কিংবা তাদের বিদ্যমান ডকুমেন্টের ওপর একটি স্টাম্প দেয়া হবে।

এই ধারণার প্রবক্তা এমইপি গাই ভারহফস্টাডট। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লেমেন্টের ব্রেক্সিট স্টিয়ারিং গ্রæপের চেয়ারম্যান। তার সাথে মেয়র খানের সাক্ষাত করার কথা। যুক্তরাজ্যের বিদায়ের সাথে আলোচনার মধ্যে দিয়ে এর সুরক্ষা চান জনাব খান। যদিও এই ধারনা ইউরোপীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান এবং এ বিষয়ে আদালতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্রিটিশদের আনীত মামলাসমূহ ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ১০ লাখেরও বেশী ইউরোপীয় লন্ডনে বাস করেন এবং ইইউ নাগরিকরা আগামী মেয়র নির্বাচনে ভোট প্রদানে সক্ষম।

ব্রেক্সিটের বিরোধিতাকারী জনাব সাদিক খান বলেন, তিনি এজন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, ইইউ লন্ডনী পন্থী লাখ লাখ লোক তাদের অধিকার হারাচ্ছে। তিনি বলেন, এটা ব্রেক্সিটের ফলে ভগ্নহৃদয় ইইউ ব্রিটন পন্থীদের প্রতি একটি অলিভ ব্রাঞ্চ অর্থাৎ বন্ধুত্বের প্রতীক সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে এটা একটি মহতী পন্থা। আমরা ইইউ ত্যাগ করেছি কিন্তু বাকী যারা ইইউ-এর সাথে ঘনিষ্ট থাকতে চায়, তাদের তা করার এটাই একমাত্র পথ। এজন্য একটি চুক্তি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। তিনি আরো বলেন, অনেক লন্ডনবাসীর মতো আমিও এজন্য ভগ্নহৃদয় যে আমরা আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমাদের দেশের ভবিষ্যত ইউরোপের অবশিষ্ট অংশের সাথে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থাকবে না। মেয়র সাদিক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার কাজ হচ্ছে দেশকে একত্রিত করা এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ব্রিটিশ ভোটারদের মধ্যে ভেদাভেদ দূরীকরণে এর চেয়ে ভালো কোন উপায় আছে বলে আমি মনে করি না। লাখ লাখ লন্ডনবাসী ও ব্রিটিশ জনগন যারা এখনো নিেেজদের ইউরোপীয় ভাবে এবং ইউরোপীয় থাকতে চায়, তাদের জন্য এটা উত্তম হবে। এক্ষেত্রে ঐসব লক্ষ লক্ষ লন্ডনবাসী ও ব্রিটিশ জনগনের সমর্থন থাকবে, যারা বিপর্যস্ত ইইউ নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার হারাতে যাচ্ছে বলে। যুক্তরাজ্য ও ইইউ যখন তাদের পরবর্তী দফা আলোচনা শুরু করবে, তখন আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ‘এসোসিয়েট সিটিজেনশীপ’ অর্থাৎ সহযোগী নাগরিকত্বের বিষয়টিকে চাই।

জনাব খানের মেয়র প্রতিদ্ব›দ্বী লিবারেল ডেমোক্রেট দলের সিওবান বেনিটা গত বছর ব্রাসেলস ভ্রমন কালে একটি লন্ডন ভিসা’র প্রস্তাব করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা মি: খানের কাছ থেকে ‘অতি ক্ষুদ্র, অতি বিলম্বে’ এসেছে। তিনি বলেন, লন্ডনবাসীরা ইইউ-য়ে থাকতো, যদি তার লেবার পার্টি ব্রেক্সিটের প্রতি লিবারেল ডেমেক্রেট দলের ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতায় সমর্থন দিতো। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, যুক্তরাজ্যের সাথে ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনার অংশ হিসেবে ধারনা অনুসন্ধানে ইইউ উন্মুক্ত।

মি: ভারহফস্টাডত বলেন, মাসট্রিক্ট চুক্তি ‘ইউরোপীয় নাগরিকত্বে’র ধারণা সৃষ্টি করেছে এবং আমি ঐসব লোকের জন্য এখানে এটাকে একটি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারের পক্ষপাতী, যারা ইউরোপের সাথে নিজেদের যুক্ত রাখতে চায়। তিনি বলেন, এটাই প্রথম যখন একটি সদস্য রাষ্ট্র আমাদের ইউনিয়ন ত্যাগ করছে। কিন্তু এটা করছে এজন্য নয়, যুক্তরাজ্য সরকার এজন্য ত্যাগ করতে চেয়েছে যে, সাধারণ নাগরিকেরা মহাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়।

নিরপেক্ষ মেয়র প্রার্থী ররি স্টুয়ার্ট বলেন, এটা শুধুমাত্র একটি কামড়- নীতিটি কাজে আসবে না। লন্ডনকে সুরক্ষা প্রদান করে এমন ব্রেক্সিট বিষয়ক অবস্থানের আরো বিস্তারিত তুলে ধরা মেয়রের দায়িত্ব। আমার এধরনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, যদি আমি মেয়র হতাম তবে আমি ইউরোপের সাথে যথাসম্ভব ঘনিষ্টতা বজায় রাখতে একটি ভবিষ্যত ইমিগ্রেশন সিস্টেম এবং এর পাশাপাশি সার্ভিস এগ্রিমেন্টসমূহের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতাম।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button