‘সন্ত্রাসীরা সাধারণত মুসলিম’ই হয়: রায়ান এয়ারের সিইও

মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন আয়ারল্যান্ডের এয়ারলাইন্স রায়ান এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ও’লিরাই। ‘সন্ত্রাসীরা সাধারণত মুসলিম’ই হয় মন্তব্য করায় তাকে তোপ দাগছেন খোদ আয়ারল্যান্ডেরই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। লন্ডনের দৈনিক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল ওই মন্তব্য করেন মুসলিমদের নিয়ে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়। এর পর থেকেই সমালোচনার ঝড় বইছে আয়ারল্যান্ডসহ গোটা বিশ্বে। মুসলিম বিভিন্ন সংগঠনসহ অনেক নাগরিক পরিষদ তার ওই মন্তব্যকে ‘নিম্নরুচির বর্ণবাদের প্রকাশ’ বলে অভিহিত করেছে।

সাক্ষাৎকারে রায়ান এয়ারের সিইও বলেন, যেহেতু সন্ত্রাসীরা মুসলিম বিশ্বাসেরই হয়, তাই বিমানবন্দরগুলোতে তাদের বাড়তি তল্লাশি করা প্রয়োজন। অবশ্য ৩০ বছর আগে এটা (সন্ত্রাসবাদ) আইরিশ (বিশ্বাসের) ছিল। উত্তর আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্য থেকে মুক্ত করে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে আইরিশ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত। এজন্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। যুক্তরাজ্য প্রশাসনের দমনমূলক পদক্ষেপের ফলে ওই গোষ্ঠী সাম্প্রতিককালে বেশ দুর্বল হয়ে গেছে।

রায়ান এয়ারের সিইও যে এবারই প্রথম এমন বর্ণবাদী মন্তব্য করলেন তা নয়। এর আগেও বহুবার তিনি বেফাঁস ও বর্ণবাদী মন্তব্যের কারণে তীব্র সমালোচনা হজম করেছেন। ফ্লাইটের টয়লেটে যাওয়ার ওপর বাড়তি কর এবং স্থূলকা যাত্রীদের কাছ থেকে ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ আদায়ের প্রস্তাব করায় তার মুণ্ডুপাত হয়েছিল বিভিন্ন পরিসরে। রায়ান এয়ারের সিইও’র নতুন এই মন্তব্যকে ‘ইসলামফোবিয়া’ (ইসলাম ভীতি) ছড়ানোর অপচেষ্টা বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের মুখপাত্র ।

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি খালিদ মাহমুদ বলেছেন, মাইকেলের এই মন্তব্য ‘বর্ণবাদে উসকানিমূলক’। এই সপ্তাহেই জার্মানিতে এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী আট জনকে গুলি করে মেরেছে। তাহলে কেউ কি মাইকেলের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবে শ্বেতাঙ্গদের? দেখা উচিত? যুক্তরাজ্যের একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, মাইকেলের এই মন্তব্য জঘন্য এবং হিংসাত্মক। রায়ানএয়ারের প্রধান কর্তার এই মন্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে অনলাইন জগতেও। অনেকে তার এয়ারলাইন বয়কটের ডাকও দিয়েছেন।

প্রখ্যাত সাংবাদিক হেইডি এন. মুর এ বিষয়ে বলেন, সিইও পর্যায়ে এমন ইসলামফোবিয়া চর্চা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এবার বুঝুন, দুনিয়ায় এমন আরও অনেকে মহাক্ষমতাধর আছে, যারা কিনা বর্ণবাদ লালন করে এবং নিজেদের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ফলাতে পারে (যেকোনো সময়)।

কলাম নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী রায়ান এয়ার বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তোমরা আমার ভ্রমণের অর্থ আয়ের সুযোগ হারালে। আমি নিয়মিতই তোমাদের প্লেন ব্যবহার করতাম। কিন্তু তুমি যখন ধর্মের জন্য কাউকে সন্ত্রাসী বলছো, তখন আমাকে নিজের অর্থ খরচে বিকল্প চিন্তা করতেই হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button