বিএনপি আনে সন্ত্রাস, আ.লীগ আনে শান্তি : প্রধানমন্ত্রী
তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়া: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে শুরু হয় সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর লুটপাট। আর আওয়ামী লীগ এলে দেশে শান্তি আসে, মানুষ নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারে।’
শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়ার সরকারি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে দুর্নীতি। তারা ক্ষমতায় এলে দেশে অশান্তি আসবে। তারা বিনা মূল্যে বই, বৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তিনি উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা ২০০৮ সালে যেভাবে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছেন, ঠিক সেইভাবে আগামীতেও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন।’ উপস্থিত জনতা ভোট দেবেন কি না, তা তাঁদের হাত তুলে জানাতে বলেন শেখ হাসিনা। প্রায় ২৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে বিএনপি সরকারের আমলে তাদের খুন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী আর কিছু না পারুক, মিথ্যা কথা বলায় তিনি পারদর্শী, যাকে বলে মিথ্যা কথা বলায় ওস্তাদ।’
প্রধানমন্ত্রীর ১৮ মিনিটের বক্তব্যে বেশির ভাগই ছিল বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা। মাঝে মাঝে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নৌকায় ভোট চান। বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে কুষ্টিয়ার প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগকে জয়লাভ করানোর জন্য কুষ্টিয়াবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী দাবি করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাসের রাজত্বে কুষ্টিয়াবাসী শান্তিতে বসবাস করছেন। এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।’ তিনি উদ্বোধন করা ২৩টি প্রকল্পের কাজের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছ থেকে আমদানি করা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্র ও ভোড়ামারায় গ্যাসভিত্তিক ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্রের উদাহরণও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাসে এত উন্নয়ন অতীতে হয় নাই যা বর্তমান সরকার করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বয়স্ক-ভাতা দিয়েছি, বিধবা-ভাতা দিয়েছি, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে, মা-বোনদের সার্বিক চিকিত্সা ও শিক্ষার দিকে লক্ষ রেখে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা অতীতের কোনো সরকার করে নাই।
জনগণের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আপনাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আগামীতে আপনারা নৌকায় ভোট দিলে সরকার গঠন করলে প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে স্কুল ও কলেজ সরকারীকরণ করা হবে।’ এ সময় তিনি তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরেন। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে সোনার বাংলা গড়ার জন্য সবার সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা।
এদিকে সকালে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনন্দ উল্লাস করে দলের নেতা-কর্মীরা সরকারি কলেজ মাঠে হাজির হন। মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের স্রোত দেখা যায়।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে আজ সকালে ভেড়ামারায় ভারতের আমদানি করা বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে ও বাগেরহাটের রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভেড়ামারায় ৩৬০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক আরও একটি বিদ্যুেকন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল চারটায় কুষ্টিয়ার জনসভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান। জনসভার মঞ্চে ওঠার আগে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চের পাশে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন। বিকেল চারটা নয় মিনিটে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন।