১০ লাখ মানুষের চাকুরীর নিশ্চয়তা নেই, জিরো আওয়ার চুক্তি রেকর্ড ছাড়িয়েছে
যুক্তরাজ্যে যখন প্রায় ১০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের চাকুরী ঘন্টার কোন নিশ্চয়তা নেই তখন জিরো-আওয়ার কন্ট্রাক্ট বা চুক্তিসমূহ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের শেষ ৩ মাসে জিরো-আওয়ার শ্রমিকদের সংখ্যা হঠাৎ করেই ৯ লাখ ৭৪ হাজারে উন্নিত হয়, যা ২০১০ সালে টোরি বা রক্ষণশীলর ক্ষমতায় আসার সময়ের চেয়ে ৫গুণ বেশী। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের সকল শ্রমিকের ৩ শতাংশ এবং ৯ শতাংশ, যাদের বয়স ২৫ বছরের নীচে, তারা এখন এই চুক্তিতে।
জিরো-আওয়ার চুক্তি বাতিলের পক্ষে অভিমত ব্যক্তকারী জিএমবি’র সাধারণ সম্পাদক টিম রোচে বলেন, লোকজনের এভাবে বেঁচে থাকা উচিত নয়, জিরো আওয়ারের অর্থ হচ্ছে জিরো সিকিউরিটি এবং জিরো রাইটস। তিনি বলেন, অনেক হয়েছে, এখন সময় হয়েছে অন্যান্য দেশের সকল নীতিমালা অনুসরণে এবং চিরতরে এসব চুক্তি নিষিদ্ধ করার। তিনি আরো বলেন, কোম্পানীসমূহ ঐসব লোকজনের প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব এড়ানোর জন্য জিরো আওয়ার চুক্তিসমূহকে একটি আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করছে, যারা তাদের অর্থ বানিয়ে দিয়েছে।
ছায়া কর্ম ও পেনশন মন্ত্রী মার্গারেট গ্রীনউড বলেন, এটা দুঃখজনক যে, যুক্তরাজ্যে আগের চেয়ে এখন অধিক সংখ্যক লোক জিরো আওয়ার চুক্তি করছে। সরকারের উচিত অনিশ্চিত কাজ ও স্বল্প বেতন মোকাবেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবশ্যই জিরো আওয়ার চুক্তি নিষিদ্ধ করা এবং ১৬ ও তদুর্ধ বয়সী সকল শ্রমিকের জন্য ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ পউন্ডের ন্যায্য মজুরী প্রদান।
সম্প্রতি ওএনএস-এর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, লেভেলিং অফের পূর্বে ২০১২ সালের এবং ২০১৬ সালে কিছুটা হ্রাসের পর থেকে জিরো আওয়ার চুক্তিসমূহের সংখ্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইতোপূর্বে ওএনএস জানিয়েছিলো যে, ২০১২ ও ২০১৩ সালের মধ্যে বৃদ্ধির কারণ সম্ভবত: গণমাধ্যমে প্রচারণা বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের প্রথম বারের মতে একটি ‘জিরো-আওয়ার’ চুক্তির বিষয়ে উপলব্ধি।
ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের চাকুরী রেকর্ড পরিমাণ ৭৬.৫ শতাংশে অর্থাৎ ৩২.৯৩ মিলিয়ন বৃদ্ধি পায়, যখন দেড় লাখেরও বেশী নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। বেকারত্বের হার ঠিক ৩.৮ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুরী ২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা আগের মাসের চেয়ে ৩.২ শতাংশ কম এবং ভবিষদ্বাণীর চেয়ে কম।
ওএনএস-এ শ্রম বাজার পরিসংখ্যানের উপ-প্রধান মির্টো মিলটিয়াডউ বলেন, প্রকৃতপক্ষে নিয়মিত রোজগার শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের প্রথম ভাগের স্তরের ওপর ওঠে এসেছে। কিন্তু বোনাসসহ মজুরী এখনো প্রি-ডনটার্ন বৃদ্ধির নীচে অবস্থান করছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম তিনমাসে ওএনএস যুক্তরাজ্যের ইইউ-য়ে জন্মগ্রহনকারী শ্রমিকদের বিশাল সর্বোচ্চ বৃদ্ধির বিষয়টি রেকর্ড করে, যা ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার বেড়ে ২.৪৪ মিলিয়নে উন্নীত হয়।
কর্মসংস্থান মন্ত্রী মিমস্ ডেভিস বলেন, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে যেহেতু আমরা ইইউ-এর বাইরে একটি নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ করছি, তাই এক্ষেত্রে আমাদের একটি রেকর্ড ভঙ্গকারী চাকুরীর বাজার ও ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করতে হবে। যখন মজুরী, মুদ্রাস্ফীতি দূর করছে, তখন যুক্তরাজ্যের শ্রমিকেরা তাদের অর্থ আরো বৃদ্ধির প্রত্যাশা করতে পারেন, যেহেতু আমরা একটি নবয়ানের দশকের লক্ষ্যে চেয়ে আছি।