বৃটেনে বেকারদের বেনিফিট বন্ধ করে দিতে চান ক্যামেরন
বৃটেনে কর্মহীন লোকের সংখ্যা কমাতে পঁচিশ বছরের কম বয়সের বেকার তরুণদের বেনিফিট বন্ধ করে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তরুণদেরকে বেনিফিট গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে ধাক্কা দিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার পথ দেখিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। আগামী বছর নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেছেন ক্যামেরন। বুধবার ম্যানচেষ্টারে দলীয় কনফারন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ডেভিড ক্যামেরন বলেন, তরুণদেরকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে তারা স্কুল-কলেজে যেতে চায় নাকি চাকুরিতে যোগ দিতে চায়। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে, জবসেন্টারে নাম লিখিয়ে, একটি ফ্ল্যাট খুঁজে নিয়ে হাউজিং বেনিফিট দাবি করা যায়। তিনি বলেন, এই বিষয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়।
ডেভিড ক্যামেরন ঘোষিত নতুন এই পরিকল্পনা প্রায় ১০ লক্ষ লোকের উপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছেন ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের তরুণ। গত মাসের হিসেবে এই গ্রুপের ৩ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশী তরুণ জবসিকার্স এলাউন্স নিয়েছেন। অনুর্ধ্ব ২৫ বয়সের লোকদের বেনিফিট বন্ধ করতে পারলে সরকারি কোষাগারের ২ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে সরকার।
এদিকে, মঙ্গলবার পার্টি কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওয়ার্ক এন্ড পেনশন্স সেক্রেটারি ইয়ার্ন ডানকান স্মিথও বেনিফিটের উপর নির্ভরশীল বেকার লোকদেরকে কঠিন নিয়মের আওতায় আনার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বেকার লোকদেরকে সপ্তাহের কর্মদিবসগুলো জব সেন্টারের ভেতরে কাটাতে হবে। সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা জবসেন্টারে অবস্থান করে সেখানকার কর্মকর্তাদের অধীনে থেকে চাকুরি জোগাড় করার চেষ্টা করতে হবে। একটি পাইলট স্কিমের আওতায় দেশের কয়েকটি স্থানে এই পরিকল্পনার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে সরকার। সরকার দেখতে চাইছে, বেকার লোকেরা কি আসলেই চাকুরি পাচ্ছে না নাকি তারা লুকিয়ে কাজ করছে। বিদ্যমান ‘ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ থেকে যার ছিটকে পড়ছেন মূলত তাদেরকে টার্গেট করেই জবসেন্টারে সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে ৯টা-৫টা সময় বেঁধে দিয়ে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। ওয়ার্ক প্রোগ্রামের আওতায় বেসরকারি সংস্থা ও চ্যারিটিগুলোকে বেকার লোকদের জন্য কাজ খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে সরকার।
যারা ওয়ার্ক প্রোগ্রামে থেকেও চাকুরি পাচ্ছে না তাদের জন্য চ্যান্সেলার জর্জ আসবোর্ন গত সপ্তাহে ‘হেল্প টু ওয়ার্ক’ নামে অন্য একটি স্কিমের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী বছর থেকে এটি বাস্তবায়িত হবে। এর আওতায় বেনিফিট পেতে হলে বেকার লোকদেরকে কমিউনিটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো কাজ ভলান্টিয়ার হিসেবে করতে হবে অথবা প্রতিদিন জবসেন্টারে যেতে হবে অথবা বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যতদিন চাকুরি পাবেনা বেনিফিট ক্লেইমেন্টকে তাদের সেই কাজগুলো চালিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত ছয় মাসের সময়সীমা সেখানে থাকবে না। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে তার চার সপ্তাহের বেনিফিট কেটে নেয়া হবে। আর দ্বিতীয়বার শর্ত ভঙ্গ করলে তিন মাসের বেনিফিট কেটে নেওয়া হবে।
সরকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান নিয়মে সপ্তাহে ১৬ ঘন্টার বেশী সময়ের প্রশিক্ষণে যোগ দিলে তরুণদের বেনিফিট বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ, বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণে না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় কিন্তু প্রশিক্ষণে যোগ দিলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে বর্তমান সরকার উল্টো পদ্ধতি নিয়ে এগোচ্ছে। সরকার চাইছে যারা প্রশিক্ষণে যাবে তাদেরকে আর্থিক সুবিধা দিতে। আর যারা সরকারের এই স্কিমে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের জবসিকার্স এলাউন্স ও হাউজিং বেনিফিট সহ সকল বেনিফিট বন্ধ করে দেয়া হবে।