পর্যটকদের পদভারে মুখর নৈসর্গিক কাশ্মীর
সাফল্যের ঘটনা পাকিস্তানে বিরল হলেও ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের ধকল কাটিয়ে উঠে এবং সহিংসতাকে পেছনে ফেলে দেশটির অধিকৃত কাশ্মির অঞ্চলকে পুনর্গঠনের পর এখানকার পর্যটন শিল্পের বাণিজ্য ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এএফপি।
নিলাম উপত্যকারক হ্রদ ও হিমবাহ হাজার হাজার পাকিস্তানী পর্যটককে আকৃষ্ট করে। পাকিস্তানের অন্যতম দারিদ্রপীড়িত এ অঞ্চলটি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ উপযোগী করে তুলতে অর্থের প্রয়োজন।
পশ্চিমা পর্যটকরা পাকিস্তান অধিকৃত হিমালয়ে আসা বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হল ভারতের সাথে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও এখানে বিভিন্ন সংগঠনের প্রশিক্ষণ নেয়া।
তবে ২০০৫ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর, চীন এ অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের জন্য নতুন একটি রাস্তা নির্মাণ করলে এবং ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে পাকিস্তান নতুন করে এখানকার তুষারাবৃত পর্বত চূড়া, হিমবাহ, হ্রদ এবং ঘন সবুজ তৃণ ভূমি উদঘাটন করা শুরু করে। ভূমিকম্পে ৭৩ হাজার লোক নিহত হয়।
পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মির উপত্যকাটি বেস ক্যাম্পের ১১৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। গত জুনে এই বেস ক্যাম্পের কাছে বন্দুকধারীর গুলীতে আমেরিকা, চীন, লিথুয়ানিয়া, স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেইনের পর্বতারোহী নিহত হয়। গত এক দশকের মধ্যে পাকিস্তানে বিদেশিদের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা ছিল এটি। ঐ ঘটনায় কাশ্মিরের আশেপাশে বসবাসকারী কিছু পাকিস্তানীও ভীত হয়ে পড়েছিলো।
পাঞ্জাব থেকে ছুটি কাটাতে আসা মোহাম্মদ আমির ও তার পরিবার জানায়, কিছুটা ভয় তাদের মধ্যে রয়েছে, তবে আমরা আমাদের ছুটি উপভোগ করছি। এছাড়াও আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এখানে থাকবো। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুনাজ্জা তারিক একই মত দেন। বিদেশি পর্বতারোহীদের হত্যা সম্পর্কে মুনাজ্জা বলেন, এ ঘটনা পাকিস্তানের শত্রুরা ঘটিয়েছে। ঐ ঘটনার পর করাচি থেকে আমাদের কাছে বহু ফোন কল আসে। তবে আমরা নিরাপদে আছি এবং ছুটি উপভোগ করছি।
স্থানীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শেহলা ওয়াকার জানান, ২০১০ সালে নিলাম ভ্যালিতে ১লাখ ৩০ হাজার পর্যটক এসেছিল, গত বছর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬ লাখে। তিনি বলেন, মুজাফ্ফরাবাদ থেকে নিলাম ভ্যলিতে যাওয়ার জন্য খুবই চমৎকার একটি রাস্তা থাকায় এখানে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। মুজাফ্ফরাবাদ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী। এই মুজাফ্ফারাবাদের সাথেই চীন একটি নতুন সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করেছে।
হিমালয় অঞ্চলের ভারত-পাকিস্তান অংশ বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রন লাইনে ২০০৩ সালে একটি যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়।
ওয়াকার বলেন, এই অঞ্চলটি খুবই শান্তিপূর্ণ এবং এখানে সন্ত্রাসের কোন আশংকা নেই। কাশ্মীরের দখল নিয়ে অতীতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুই দফা যুদ্ধ সংঘটিত হয়।উভয়ই বহুদিন ধরে সম্পূর্ন কাশ্মিরের অধিকার দাবি করে আসছে।
এদিকে স্থানীয় উপ কমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ এএফপিকে বলেন, বর্তমানে নিলাম ভ্যলিতে ১১৫টি তালিকাভুক্ত গেস্ট হাউস রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গিলগিট-বলতিস্তানে বিদেশি পর্বতারোহীদের হত্যাকান্ডের পর সেখানে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
কাশ্মীরের পর্যটন মন্ত্রী আব্দুস সালাম বাট বলেন, রাত ১০ টার মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী সকল গেস্ট হাউসের প্রধান দরজা বন্ধের জন্য আমরা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, কিছু হামলার ঘটনার কারণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে ঠিকই তবে, দেশি পর্যটকদের আগমনের ফলে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছি আমরা।
একটি বেসরকারী গেস্ট হাউজের মালিক রাজা জারাত খান বলেন, আগামী সপ্তাহের জন্য তার গেস্ট হাউসটি খালি নেই। উপরন্তু তাকে বেশ কিছু আবেদন ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আমাদের খুব ভালো মওসুম যাচ্ছে বলেন রাজা।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আওয়াস বলেন, নিলাম ভ্যলি খুবই মনোরম ও সুন্দর। একবার কেউ এখানে প্রবেশ করলে ফিরে যেতে চায় না। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসা করে আমার জীবন বদলে গেছে।
তবে স্থানীয়রা জানায়, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নিলাম ভ্যলির আবেদন ধরে রাখতে এখানে আরো কিছুর পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তারা জানায় এখানে বেশ কিছু সুন্দর স্থান রয়েছে তবে, এসব স্থানে যাতায়াতের জন্য ভালো কোন রাস্তা নেই। পর্যটকদের কাছে অনিন্দ সুন্দর এই নিলাম ভ্যলি কি ধরে রাখতে পারবে তার আবেদন।