ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারী: নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা

যদি প্রিয়জনদের মৃত দেখতে না চান তাহলে নির্দেশণাগুলো মেনে চলুন: লন্ডন মেয়র

যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দেয়া পরামর্শকে গুরুত্বের সাথে না নিলে “আরও কঠোর ব্যবস্থা” চালু করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ডাউনিং স্ট্রীটে আয়েজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এমন হুশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে মিস্টার জনসন, সকলকে ত্যাগ স্বীকার করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অবশ্যই আমাদের সবাইকে সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আপনি যদি ঠিকভাবে তা পালন না করেন, তবে আমাদের আরও ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও যারা পার্কে এবং খোলা জায়গায় যেতে চান তাদের অবশ্যই অন্যদের থেকে ২ মিটার দূরে থাকতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি বৃটিশ কমিউনিটি মন্ত্রীও এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, যদি জনগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় তবে ‘ভিন্ন পন্থাসমূহ’ অবলম্বনের উপায় খোঁজা হবে। যদি জনগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ অব্যাহত ভাবে অস্বীকার করে তবে সরকার করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে আরো কঠিন বিধি নিষেধ আরোপ করবে।
কমিউিনিটি মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক বলেন, এটা এখন বুঝার সময় হয়েছে যে, কোভিড-১৯ ‘কোন খেলা নয়’, যখন সপ্তাহান্ত জুড়ে সমুদ্র উপকূলীয় রিসোর্টগুলোতে হাজার হাজার লোক ভিড় জমাচ্ছেন। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। জনগনের (চিকিৎসা) পরামর্শ অনুসরণ করা প্রয়োজন। যদি জনগণ তা অনুসরণ না করে তবে স্পষ্টত:ই আমরা অন্যান্য উপায় বিবেচনা করবো। কিন্তু আমাদের কেউই সে ভাবে যেতে চান না।
মি: জেনরিক বলেন, হাঁটাহাঁটি কিংবা বাইরে অনুশীলন কোন বিষয় নয়। কিন্তু জনগনের উচিত আশপাশের অন্যন্যদের সংস্রব এড়িয়ে চলা। কমিউনিটি মন্ত্রী আরো বলেন, পর্যটন এলাকাগুলোতে হাজারো লোক ভিড় করার বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষসমূহ জনগনকে পর্যটন এলাকাগুলোতে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এদের বন্ধ করার জন্য তাদের ক্ষমতা সীমিত। সমুদ্রোপকূলীয় রিসোর্টে ‘লাখো ভ্রমনকারী ভিড়’ করায় লিংকনশায়ারের পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিশনার ক্যারাভান সাইটস এবং স্কেগনেসে আর্কেইডগুলো বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানান। হাজারো লোক ভিড় করায় সাসেক্সে ওয়েস্ট উইটারিং বীচ পরিচালনাকারী এস্টেটটি গত শনিবার বিকেলে বন্ধ করে দেয়। হুইটবি, ব্রাইটন ও হোভ এর মতো রিসোর্টগুলোতে বিপুল জনসমাগমের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কামব্রিয়া পুলিশ লেইক ডিষ্ট্রিক্ট্র ভ্রমণ না করার জন্য পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং সহকারী প্রধান কনস্টেবল এন্ড্রু স্লাটারি রাস্তার চালকদের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ন ভাবে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন বলে দাবি করেন এবং বলেন, স্থানীয়রা পাব বন্ধের প্রতি সাড়া দিতে শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এনএইচএস ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তে পারে, যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা না হয়।
ব্রিটেনের মৃতের সংখ্যা ২৪০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘মাদার্স ডে’ উপলক্ষে পারিবারিক দেখা সাক্ষাত না করার জন্য জনগনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জনগন যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শের প্রতি কর্ণপাত না করলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ইতালির স্বাস্থ্যসেবার মতো ‘হতবুদ্ধিকর’ হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। সরকার ভাইরাসের ব্যাপারে সবচেয়ে অরক্ষিত লোকজনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
সোমবার থেকে ১২ সপ্তাহের জন্য ঘরে অবস্থানের কড়া পরামর্শ সহকারে চিঠি পাঠানো হয়েছে এ ধরনের ১৫ লাখ মানুষের কাছে। এই তালিকায় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিরা যেমন- সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগীরা অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া এতে রয়েছেন ব্লাড ও বোন ম্যারো ক্যান্সারের মতো কিছু ক্যান্সার রোগী কিংবা ঐসব লোক যারা একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন গ্রহণ করেছেন। বিশ্বের চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির সুরক্ষার জন্য আত্ম-নির্বাসনে যাওয়ার অর্থ্যাৎ নিজে থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তালিকায় আরো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ঐসব রোগীদের যারা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করছেন যা জীবনীশক্তিকে কমিয়ে দেয়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে এই মর্মে নিয়মিত টেক্সট আপডেট গ্রহণ করতে হবে কীভাবে বাড়িতে তাদের অসুস্থতার ব্যবস্থাপনা করা যায় এবং কীভাবে প্রত্যাহিক জীবনে সহায়তা ও প্রেসক্রিপশন ডেলিভারি পাওয়া যেতে পারে। আক্রান্তদের সাথে বসবাসকারী লোকজনকেও কঠোরভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ হ্রাসের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার সাপোর্ট নেটওয়ার্ক ছাড়া আত্ম-নির্বাসনে যাওয়া লোকজনকে গ্রোসারী সামগ্রী সরবরাহের জন্য একটি সহায়ক স্কীম বা পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন।
এদিকে বিরোধী দলীয় নেতা জেরিমি করবিন সকল এনএইচএস কর্মীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এনএইচএস কর্মীরা যেভাবে আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেণ তা অবিশ্বাস্য। এছারাও লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও দেশের জনগনকে সরকারের দেয়া পরামর্শগুলো মেনে চলার জন্য আহবান জানান। সাদিক খান বলেন, যদি প্রিয়জনদের মৃত দেখতে না চান তাহলে নির্দেশণাগুলো মেনে চলুন।
করোনা ভাইরাসে যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছ। আজ রোববার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৮১ এবং আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬শ ৮৩জন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button