প্রার্থনার শক্তি দিয়ে করোনার মতো মহামারী প্রতিরোধ সম্ভব
ড. ক্রেগ কনসিডাইন: কোভিড-১৯ মহামারী সরকারগুলো এবং সংবাদ সূত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে সঠিক ও কার্যকর পরামর্শ দেয়ার জন্য বাধ্য করছে। কারণ এই রোগটি প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পেশাজীবীদের উচ্চ চাহিদা সৃষ্টি করেছে আর বিজ্ঞানীরাও মহামারী সংক্রমণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে স্টাডি করছেন।
ইমিউনোলজিস্ট ডা: অ্যান্টনি ফৌসি এবং মেডিক্যাল রিপোর্টার ডা: সঞ্জয় গুপ্তের মতো বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভালো স্বাস্থ্যবিধি এবং পৃথকীকরণ বা সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধের আশায় অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুশীলন হলো কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে আপনি কি জানেন- মহামারীকালীন কে আরো ভালো স্বাস্থ্যবিধি ও পৃথকীকরণ পরামর্শ দিয়েছিলেন? ১,৩০০ বছর পূর্বে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন সেই ব্যক্তি।
যদিও তিনি মারাত্মক রোগের বিষয়ে কোনোভাবেই ঐতিহ্যগত বিশেষজ্ঞ নন, তবে কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ ও তা মোকাবেলার জন্য মুহাম্মদ সা:-এর পরামর্শই সবচেয়ে যথাযথ।
মুহাম্মদ সা: বলেছিলেন: ‘আপনি যদি কোনো দেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কথা শুনে থাকেন তবে সেখানে প্রবেশ করবে না; তবে যদি আপনি সেখানে অবস্থানের সময় মহামারীটি ছড়িয়ে পড়ে তবে সে স্থানটি ত্যাগ করবে না।’
তিনি আরো বলেছিলেন: ‘সংক্রামক রোগকে স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’ মুহাম্মদ সা: একই সাথে মানব জাতিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এমন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। নিচের হাদিস বা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বক্তব্যটি বিবেচনা করুন:
‘পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অঙ্গ।’ ‘ঘুম থেকে ওঠার পরে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন; ঘুমের সময় আপনার হাত কোথায় গেছে তা আপনি জানেন না।’
‘খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধোয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।’ আর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন কী হবে? মুহাম্মদ সা: তার সহচরদের যারা যন্ত্রণায় ভুগেছেন তাদের কী ধরনের পরামর্শ দিয়েছিলেন?
তিনি লোকদের সর্বদা চিকিৎসা ও ওষুধপত্র ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘চিকিৎসা গ্রহণ করো’। ‘মনে রাখতে হবে আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি যার প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাও তিনি দেননি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো বার্ধক্য।’
আমি ইতালিতে আছি করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে। আমেরিকার অবশ্যই এখনই কাজ করা উচিত এবং বড়ভাবে কাজ করতে হবে এই বিষয়ে। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি (মুহাম্মদ সা:) জানতেন কখন যুক্তির সাথে বিশ্বাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, কেউ কেউ এতদূর এগিয়ে গিয়েছেন যে, তাদের মতে সামাজিক দূরত্ব এবং পৃথকীকরণের মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলার চেয়ে নিজেকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে প্রার্থনা করাই ভালো। অথচ দেখুন, নবী মুহাম্মদ সা: কিভাবে প্রধান বা ওষুধের একমাত্র বিকল্প উপায় হিসেবে প্রার্থনার ধারণার প্রতিক্রিয়া জানান।
নবম শতাব্দীর পার্সিয়ান পণ্ডিত আল-তিরমিজির বলা নিম্নলিখিত কাহিনীটি বিবেচনা করুন। একদিন, নবী মুহাম্মদ সা: এক বেদুইনকে লক্ষ্য করলেন যে উটটি বেঁধে না রেখে চলে গেছে। তিনি বেদুইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার উটটি বেঁধে রাখো না কেন?’ বেদুইন জবাব দিয়েছিল, ‘আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি।’ নবী তখন বললেন, ‘আগে তোমার উট বেঁধে দাও, অতঃপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ মুহাম্মদ সা: লোকদের ধর্মের দিকনির্দেশনা চাইতে উৎসাহিত করেছিলেন। তবে তিনি আশা করেন যে, তারা নিজেদের শারীরিক স্থিতি, সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য মৌলিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্য কথায়, তিনি প্রত্যাশা করেন, মানুষ তাদের সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করবে।
লেখাটি নিউজ উইক থেকে নেয়া। লেখক ড. ক্রেগ কনসিডাইন রাইস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, গ্লোবাল স্পিকার ও মিডিয়া কন্ট্রিবিউটর। তিনি ‘দি হিউম্যানিটি অব মুহম্মদ : খ্রিষ্টান ভিউ’ (ব্লু ডোম প্রেস, ২০২০) এবং ‘ইসলাম ইন আমেরিকা : এক্সপ্লোরিং দি ইস্যুজ ’(এবিসি-সিএলআইও ২০১৯) এর লেখক।